|
|
|
|
অভিনব চাল: লক্ষ্মীর বদলে দিন্দাকে টস করতে পাঠানোর ভাবনা |
পয়া ড্রেসিংরুম থেকে ভোকাল টনিক,
সব কৌশল নিয়েই যুদ্ধে প্রস্তুত বাংলা
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • ইনদওর
১৬ জানুয়ারি |
আপনি কি আচমকা টেনশনে?
হাতের ট্যাবে ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভ্রু দু’টো সামান্য উঁচু, বিস্মিত মুখে পাল্টা প্রশ্ন।
“কেন?”
না, এই যে মহারাষ্ট্র নিয়ে এত কথা হচ্ছে। অশোক দিন্দাদের নিয়ে বিজয় জোল যে পরোক্ষ হুমকি দিচ্ছেন। মিচেল জনসনের ঢংয়ে গোঁফ রাখছেন ওদের বাঁ হাতি পেসার সামাদ ফালা। তার উপর অসুস্থ শরীরেও আপনি আজ প্র্যাকটিস শেষ করে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে ছুটলেন, টেনশন তো?
“নাহ্, টেনশন কেন হবে? বলতে পারেন, এক্সাইটমেন্ট। রঞ্জি সেমিফাইনালটা যত এগিয়ে আসছে, তত ওটা বাড়ছে। আফটার অল, এল আর শুক্ল-র ক্যাপ্টেন্সির সেরা সময়টা চলছে, সেটা তো টানতে হবে, নাকি?” বলতে বলতে হেসে ফেলেন বঙ্গ ক্রিকেটের অন্যতম অমর যোদ্ধা।
ইনদওরে অভিজাত টিম হোটেলের লবিতে সন্ধেয় বসে লক্ষ্মীরতন শুক্লের কথাবার্তা শুনলে চিন্তার কোনও প্রকাশ্য অভিব্যক্তি পাওয়া যাবে না। বহিরঙ্গ ধরলে সত্যিই এতটুকু নেই। মহারাষ্ট্র-প্রসঙ্গ উঠলে একটা নিরাসক্ত ভাব বেরিয়ে পড়ছে, বিশ্বাস করতে চাইছেন, ‘ওটা জাস্ট আর একটা টিম’, নিজ-টিমের মননে গুঁজে দিতে চাইছেন ‘রঞ্জি ফাইনাল’ শব্দবন্ধ, চাইছেন জঙ্গি মেজাজটা ধরে রেখে আরও এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে। কিন্তু অন্তরালটা একটু হলেও বোধহয় আলাদা। ওখানে টিম লাইন আপ নিয়ে বিস্তর কাটাকুটি আছে, কূটনৈতিক চালে বিপক্ষের অঙ্ক গুবলেট করে দেওয়ার ভাবনা আছে, এবং আছে সংস্কারও। |
যে পিচে হবে শেষ চারের যুদ্ধ। তদারকিতে বোর্ডের পিচ কিউরেটর। |
অধিনায়ক টুঁ শব্দ না করলেও তাঁর টিমের বিভিন্ন অংশ থেকে খোঁজ করে যেগুলো পাওয়া গেল।
যেমন?
যেমন— বুধবার মধ্যপ্রদেশের বৃহত্তম শহরে পা দিয়ে বাংলা ক্রিকেটারদের তিন-চারটে ক্রিকেট-কিট হোলকর স্টেডিয়ামের ‘পয়া’ ড্রেসিংরুমে ঢুকল। রাহুল দ্রাবিড়ের নামে নামাঙ্কিত হোলকরের হোম ড্রেসিংরুমটা নাকি বাংলার পক্ষে শুভ! ওই ড্রেসিংরুম নিয়ে নাকি যত বার এখানে বাংলা খেলেছে, জিতেছে। অর্থাৎ, প্রাক্-সেমিফাইনাল লগ্নে সংস্কারের প্রভাব।
যেমন রঞ্জিতে টানা তিন ম্যাচ জয়ের পরেও ‘উইনিং কম্বিনেশন’ নিয়ে নাড়াচাড়া। খুব সম্ভবত, ওপেনিংয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ তিনে নামছেন, অরিন্দম দাসের সঙ্গে ওপেনে অভিষেক হচ্ছে কৌশিক ঘোষের। বাদ পড়তে পারেন শুভময় দাস। মিডল অর্ডারেও একটা বদল। ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের স্লটে সন্দীপন দাস। অর্থাৎ, কাউকে নিয়ে সামান্যতম সংশয় থাকলেও ঝুঁকি নেওয়া বন্ধ।
যেমন— স্বয়ং বাংলা অধিনায়ককে ‘বাঁচাতে’ টিম ম্যানেজমেন্টের ক্ষুরধার চালের ইঙ্গিত!
অবাক করা হলেও শোনা গেল যে, আগামী শনিবার থেকে শুরু হওয়া সেমিফাইনালে বাংলা অধিনায়ক হিসেবে লক্ষ্মীরতন শুক্ল নন, টস করতে যেতে পারেন অশোক দিন্দা! বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নাকি ভাবনাটা তেমনই। কেন? ইডেনে রেলওয়েজের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে স্লো ওভার রেটের জন্য ম্যাচ ফি-র পুরোটাই কাটা গিয়েছিল লক্ষ্মীর। তাঁকে এ-ও বলা হয় যে, যদি আবার একই রোগে আক্রান্ত হয় তাঁর টিম, একটা গোটা ম্যাচ নির্বাসিত হতে হবে অধিনায়ককে। মানে, দ্বিতীয়বার একই অপরাধে শাস্তি পেলে বাংলা ফাইনালে উঠলে লক্ষ্মী খেলতে পারবেন না। টিম ম্যানেজমেন্টের একাংশ থেকেই তাই প্রস্তাব উঠছে যে, মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীর হাতেই ‘রিমোট কন্ট্রোল’ থাকুক। টিম লিস্টে অধিনায়ক হিসেবে দিন্দার (বর্তমানে সহ-অধিনায়ক) নাম লেখা হোক। তিনিই টস করুন। তাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। হোলকরের সবুজ পিচে চার পেসার খেলিয়ে স্লো ওভার রেটের প্রকোপে পড়লেও তখন অসুবিধে নেই। শাস্তি পেলে ‘অধিনায়ক’ দিন্দা পাবেন। তাতে দিন্দারও ফাইনাল খেলার সমস্যা হবে না, লক্ষ্মীরও না। বাংলার সংসারে ওই চাল শেষ পর্যন্ত দেখা গেলে, তাকে চাণক্য-সম বলেই ধরতে হবে! |
|
|
দিন্দা কি মাত করতে পারবেন
মহারাষ্ট্রকে? বৃহস্পতিবার ইনদওরে। |
হোটেলে ‘টিম বাংলা’।
সুইমিং পুলে ফুরফুরে লক্ষ্মী-শিবশঙ্কর। |
|
ঠিক যেমন প্রশংসা করতে হবে, টিমকে তাতাতে বঙ্গ কোচ-অধিনায়কের যুগ্ম ‘ভোকাল টনিক’ প্রয়োগের। ইনদওরে টিম এলআরএস পা দেওয়ার পর থেকে যা চলছে। শোনা গেল, সেমিফাইনাল যুদ্ধের আগে টিমকে একটা বার্তা দিয়েছেন অধিনায়ক। বলা হয়েছে, জীবনে ঘুমোনো-রিল্যাক্স করার দিন অনেক আসবে। কিন্তু আগামী বারোটা দিন আবার কবে আসবে, ঠিক নেই। যেখানে আর দু’টো ম্যাচ জিতলেই ভারতসেরা। কোচ অশোক মলহোত্র আবার নাকি এ দিন টিম হাডলে বলে ফেলেছেন, এত দূর যখন এসেছো, ইতিহাসটা তৈরি করে তবে ফিরো। বাংলার প্র্যাকটিসের সময় আবার মাঠের ঠিক পাশে একটি ম্যানেজমেন্ট স্কুলে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। যা নিয়ে শোরগোর পড়ে যায়। প্র্যাকটিস দেখতে হাজির দর্শকরা ছোটেন মেগাতারকাকে দেখতে। বাংলা অবশ্য অবিচল। টিমের আইনকানুন রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কঠোর ভাবে। এক জুনিয়রকে যেমন জিমে না যাওয়ার জন্য কোচের কড়া বকুনি এ দিন হজম করতে হল। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষ নিয়ে কথাবার্তাতেও অশোক যথেষ্ট আগ্রাসী। প্রকাশ্যেই।
কী কুক্ষণে বাংলার সঙ্গে মহারণ নিয়ে মহারাষ্ট্র কোচ বলে ফেলেছিলেন, “রঞ্জির সি গ্রুপ থেকে উঠেছি বলে ভাববেন না, আমরা দুর্বল। মুম্বইকে মেরেছি যখন এলিটের যে কোনও টিমের মহড়া আমরা নিতে পারি।” অশোক সে সব শুনলেন। এবং শুনে বললেন, “তাই? যত দূর জানি, মহারাষ্ট্র তো রান করেছে সব পাটা উইকেটে। এটা কিন্তু পাটা নয়। ঘাস আছে। বাংলার পেসার কেমন, সবাই জানে। অত সোজা হবে?”
যা ইঙ্গিত, তাতে সপ্তাহ শেষে ইনদওরে তাপমাত্রা বোধহয় এত কনকনে থাকবে না। ওটা বাড়বে, বেশ বাড়বে! |
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
পুরনো খবর: দলীপ জয়ের স্মৃতি থেকে প্রেরণা খুঁজছেন দিন্দা |
|
|
|
|
|