|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
হরমোন বিড়ম্বনা এড়াতে কম খান
কম বয়সের পিরিয়ডের সমস্যাও মিটবে। ডা. রত্নাবলী
চক্রবর্তীর
মুখোমুখি রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। |
|
|
প্র: আজকাল শুনি খুব কম বয়সেই পিরিয়ডের সমস্যা হচ্ছে। কেন?
উ: এখনকার লাইফস্টাইল আর খাওয়াদাওয়ার জন্য শরীরে হরমোনের গণ্ডোগোল হয়। তার জন্য পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস)-এর সমস্যা খুব বেড়ে গেছে। কম বয়সে পিরিয়ডের সমস্যার পেছনে এই পিসিওএস।
প্র: ফাস্টফুড খাওয়ার কথা বলছেন তো?
উ: সব ধরনের ফুডের কথাই বলছি। রোজ যা যা খাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যে খাবারে ক্যালোরি বেশি। আসলে এখন অ্যাভেলেবিলিটি এত বেড়ে গেছে যে, সবাই প্রচুর খাবার পাচ্ছে আর তা খাচ্ছে। এটা-ওটা-সেটা করে সারা দিনই মুখ চলছে। তা ছাড়া আজকাল ছোটরা খেলাধুলো করে না। টিনএজ মেয়েরা এক্সারসাইজ করারও সময় পায় না। উল্টে মানসিক চাপ অনেক বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে সমস্যা।
প্র: লাইফস্টাইল তো বুঝলাম। কিন্তু খেলেও সমস্যা?
উ: অতিরিক্ত খেলে। বেশি ক্যালোরি শরীরের ক্ষতি করে। হরমোনাল সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে অতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে। তার থেকেই সমস্যা।
প্র: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সটা কী ব্যাপার?
উ: ইনসুলিনকে শরীর চিনতে পারে না। ফলে আরও বেশি বেশি করে ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন উল্টে নানা ক্ষতি করে চলে।
প্র: পিরিয়ডের গণ্ডগোল?
উ: তা তো আছেই। অতিরিক্ত ইনসুলিন অল্পবয়সি মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোনের মতো কাজ করে। মেয়েরা মোটা হয়ে যায়। ওপর পেটে চর্বি জমে। মুখ জুড়ে ব্রণ হয়। শরীরে অবাঞ্ছিত লোম। ঘাড়ের কাছে কালচে দাগ। পিরিয়ড পিছিয়ে যায়। পরে প্রেগন্যান্সিতেও সমস্যা হতে পারে। |
|
প্র: এ তো লম্বা লিস্ট!
উ: আরও আছে। অতিরিক্ত ইনসুলিন বেরোনোয় মাঝবয়সে গিয়ে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সঙ্গে প্রেশার, সুগার, থাইরয়েডের সমস্যা। সব মিলিয়ে মাঝবয়সে হার্টের সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে।
প্র: এত কিছু!
উ: শুধু তা-ই নয়, ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। ধরুন পিরিয়ডের সমস্যা হচ্ছে। কোনও রকমে ওষুধ খেয়ে সামলে নিলেন। বা প্রতি মাসে এ ধরনের সমস্যা হবে বলেই ধরে নিলেন। এ দিকে হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর ভেতরের লাইনিং মোটা হতে হতে এক সময় এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
প্র: কিন্তু ৪৫-এ মেনোপজের জন্যও তো পিরিয়ড এমনিতেই অনিয়মিত হয়ে পড়ে। কী করে বুঝব এ সবের পেছনে ইনসুলিন আছে?
উ: আগে পিরিয়ডের সমস্যা ছিল না, কিন্তু পরে দেখলেন পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে দুই-তিন মাস পর পর হচ্ছে, আর যখন হচ্ছে, তখন অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে, তা হলে ডাক্তার দেখাবেন।
প্র: লাইফস্টাইল আর খাওয়াদাওয়া থেকে এত কিছু?
উ: হ্যাঁ। এ সবের মূল ট্রিটমেন্টও হল লাইফস্টাইল পরিবর্তন। সারা দিন এটা-সেটা খেয়ে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়ানো চলবে না। পাশাপাশি নিয়ম করে এক্সারসাইজ। ছোটদের জন্য খেলাধুলো। বাবা-মায়েরা কোনও ভাবেই ছোটদের ওপর স্ট্রেস চাপিয়ে দেবেন না।
প্র: আর পিরিয়ডের গণ্ডগোল হলে?
উ: ১৮ বছরের বেশি বয়স হলে অল্প মাত্রায় ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল দিয়ে রাখা হয়। আর ইনসুলিন খুব বেশি হলে তা কমানোর জন্য মেটফরমিন খেতে দেওয়া হয়।
প্র: ১৮ বছরের নীচে পিল দেওয়া যায় না?
উ: দেওয়া উচিত নয়। কমবয়সিদের পিল দিলে হাড়ের বৃদ্ধি আটকে যায়।
প্র: কিন্তু মেটফরমিন খেলে শুনেছি অনেক রকম সমস্যা হয়?
উ: হ্যা।ঁ মেটফরমিন খেলে গা গোলায়, বমি পায়, কনস্টিপেশন বা লুজ মোশন হতে পারে। এগুলো হলেও খেতে হবে। এ সবই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়।
প্র: পিল খেয়ে পিরিয়ডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও কি মেটফরমিন খেতে হবে?
উ: সেটা অনেকটা ফেস পাউডার মাখার মতো ব্যাপার। ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে আনলেও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তো আছে। মেটফরমিন এই সমস্যা ঠিক করে দেয়। শরীরের ইনসুলিনের চাহিদা কমে আসে। ইনসুলিন কম বেরোয়। অতিরিক্ত ইনসুলিন বেরিয়ে যে সব সমস্যা তৈরি করে, তা বন্ধ হয়ে যায়।
প্র: কিন্তু এত সব সমস্যা তো খুব কম বয়েসে হয়। ছোট ছোট মেয়েরা এসে নিজেদের সমস্যা বলতে পারে? সব সময় যে মহিলা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে, তারও তো কোনও ঠিক নেই। তখন তো আর এক সমস্যা।
উ: পুরুষ বা মহিলা কোনও ব্যাপার নয়। যাঁরা নিজেদের সমস্যা বলতে লজ্জা পান, তাঁরা পুরুষ ডাক্তারের কাছেও যেমন পান, তেমনি মহিলা ডাক্তারের কাছেও পান। এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা।
প্র: তবে তো মুশকিল। ঠিক মতো না বললে তো চিকিৎসায় খামতি থেকে যাবে।
উ: না, সেটা থাকে না। আমরা ওদের কথা দেখেই ধরে ফেলি। হয়তো এসে বলছে কোমরে ব্যথা, কনস্টিপেশনের সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু পিরিয়ডের সমস্যা, সেটা কিছুতেই বলছে না। আমরা তখন প্রশ্ন করে করে বের করি সমস্যাটা আসলে কী। বাড়ি আর আশপাশ থেকে এ ধরনের কমপ্লেক্স তৈরি হয়।
প্র: কী রকম?
উ: মেয়েদের নানা সমস্যায় মায়েরা বিশাল ভূমিকা নেন। অনেক বাড়িতে এখনও মায়েরা মেয়েদের বলেন, এ সব ব্যাপার নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা না করতে। বা তাঁরা নিজেরাও মেয়েদের ব্যাপারটা ভাল করে বুঝিয়ে দেন না। এ থেকেই কমপ্লেক্স তৈরি হয়। ওরা আর বাইরের কারও কাছে নিজেদের সমস্যা নিয়ে স্বচ্ছন্দ হতে পারে না। মায়েরা বুঝতে পারেন না, অজান্তেই মেয়েদের ক্ষতি করে চলেছেন।
প্র: কিন্তু সবার মানসিকতা তো সমান না-ও হতে পারে। পুরুষ ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেকে লজ্জায় কিছু বলতে পারেন না। অনেককে দেখেছি মহিলা চিকিৎসকের সন্ধান করতে করতে চিকিৎসাই আর করান না।
উ: যার কাছেই চিকিৎসা করান না কেন, মনে রাখতে হবে সামনে যিনি, তিনি ডাক্তার। সব কথা খুলে না বলতে পারলে বাড়ি থেকে আগে লিখে নিয়ে যান। আপনার কী কী সমস্যা আছে তা পয়েন্ট করে লিখে নিন। সেটাই ডাক্তারকে দিন। যে কোনও চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে যাওয়াটাও খুব দরকার।
|
পিসিওএস এড়াতে |
• খেলাধুলো অথবা এক্সারসাইজ নিয়ম করে।
• সুষম খাবার খেতে হবে। তৈলাক্ত ও মিষ্টি জাতীয় খাবার কম।
• অযথা স্ট্রেস নেওয়া চলবে না। পড়াশুনো বা অন্য যে কোনও কিছু নিয়ে বাবা-মায়েরা যেন অতিরিক্ত চাপ না দেন।
• অনিয়মিত পিরিয়ডের পাশাপাশি মুখে অত্যধিক ব্রণ দেখলে ডাক্তার দেখাবেন। ছোটরা অনেক সময় বুঝতে পারে না। তাই মায়েদের-ই ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে।
• পিসিওএস ধরা পড়লে ওষুধের পাশাপাশি এক্সারসাইজ, সুষম খাবার খেয়ে যেতে হবে। একই ভাবে মানসিক চাপও এড়িয়ে চলতে হবে। |
|
যোগাযোগ-৯৮৩০০৩৩৯৫৮ |
|
|
|
|
|