|
|
|
|
৫ বাসযাত্রীকে নামিয়ে খুন করল জঙ্গিরা
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) ডাকা ২৪ ঘণ্টার বন্ধের রাতে পশ্চিমবঙ্গে না হলেও অসমে জঙ্গি-হামলা হল উত্তরবঙ্গের বাসে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কোকরাঝাড়ের সেরফাংগুড়ি থানা এলাকায় শিলিগুড়ি থেকে শিলংগামী বাস দাঁড় করিয়ে পাঁচ যাত্রীকে গুলি করে মারে জঙ্গিরা। দুই যাত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেরফাংগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “পাঁচ যাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে কারও পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।”
আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, “বাসে হামলার খবর পাওয়ার পরেই অসম লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গে নজরদারি আরও বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ‘স্বপ্না’ নামের ওই বাসটি শিলিগুড়ি থেকে শিলং যাচ্ছিল। শিলিগুড়ি ছেড়েছিল বিকেল ৫টা নাগাদ। বাসে ২২ জন যাত্রী ছিলেন। সেরফাংগুড়ি থানার আতিয়াবাড়ি-তিনিয়ালি এলাকায় পৌঁছতে বাসের চালক দেখেন, রাস্তার উপরে পাথর এবং গাছের ডাল ফেলে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাসটি ঘিরে ফেলে জনা আটেক জঙ্গি। বাসে উঠে জনা পনেরোকে তারা নীচে নামতে বাধ্য করে। সেরফাংগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বাসযাত্রী জানান, জঙ্গিরা তাঁদের রাস্তার পাশের জঙ্গলের দিকে দৌড়ে পালাতে বলে। দৌড়নো শুরু করতেই পিছন থেকে নির্বিচারে গুলি করা হয় তাঁদের। কোকরাঝাড় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুরজিৎ সিংহ পানেশ্বর বলেন, “জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
এ দিনই কোকরাঝাড়ের ময়নাগুড়ি গ্রামে সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক এনডিএফবি জঙ্গির মৃত্যু হয়। রাতে বাসে হামলার পরে এনডিএফবি-র (সংবিজিত গোষ্ঠী) এরিয়া কমান্ডার বি জুবলাং ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, “এ দিন দুপুরে যৌথবাহিনী রাজা বসুমাতারি নামে আমাদের এক সদস্যকে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করেছিল। তার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা।” এর পরেও এ ধরনের হামলা হতে পারে বলে হুমকিও দেন ওই জঙ্গি নেতা।
তবে এনডিএফবি-র এই দায় স্বীকারের পরেও এই হামলায় কেএলও-র জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, দিন কয়েক আগেই মালদহে যাত্রীবোঝাই বাসের উপরে গুলি চালনার ঘটনায় কেএলও-র নাম জড়িয়েছে। এনডিএফবি-র যে গোষ্ঠী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বিমুখ, তাদের সঙ্গে কেএলও-র একাংশের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে বলেও গোয়েন্দাদের ধারণা। তাই কোকরাঝাড়ের বাসে হামলার ঘটনাতেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কেএলও-র যোগাযোগের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও কেএলও-র সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ কোচ ঘটনায় সংগঠনের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
এ দিনই বেলা ১২টা নাগাদ কোকরাঝাড় জেলার কচুগাঁও থানার ময়নাগুড়ি গ্রামে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এনডিএফবি জঙ্গি রাজা বসুমাতারি (২৩) মারা যান। তাঁর বাড়ি ময়নাগুড়ি গ্রামেই। তাঁর কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল, দু’টি গ্রেনেড,এবং ৩০ রাউন্ড তাজা গুলি মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছে শুনে হানা দেয় যৌথ বাহিনী। জঙ্গিরা গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করে। অন্যেরা পালালেও রাজা গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। দুপুরে কোকরাঝাড়ের এই ঘটনার পরে, কেএলও-র বন্ধের ডাক থাকলেও উত্তরবঙ্গ এবং নমনি অসমে জনজীবন কিন্তু স্বাভাবিকই ছিল। কিছু এলাকায় যান চলাচল অনিয়মিত ছিল, তবে তা তেমন প্রভাব ফেলেনি।
গত ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণে ৬ জনের মৃত্যু হয়। পর দিন মালদহের হবিবপুরে বাসে গুলি ছোড়া হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই সন্দেহ করা হয় কেএলও-কে। এর পরে ওই দু’টি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মালদহ, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার থেকে ৮ জনকে ধরে। তার পরেই উত্তরবঙ্গে নাশকতা করার হুমকি এবং শুক্রবার উত্তরবঙ্গ ও লাগোয়া অসমের চারটি জেলায় বন্ধের ডাক দিয়েছিল কেএলও। রাজ্য সরকার অবশ্য আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল, অশান্তির চেষ্টা হলে, কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে।
এ দিন বন্ধ সফল করতে কেএলও নানা ভাবে নাশকতার চেষ্টা করতে পারে, গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর
পেয়ে গোটা উত্তরবঙ্গেই ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি হয়। উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার অধিকাংশ জায়গাতেই এ দিন সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, হাট-বাজার অধিকাংশ জায়গায় ঠিকঠাক খুলেছে। রাজ্য পুলিশের আইজি (উত্তরবঙ্গ) জাভেদ শামিম বলেন, “উত্তরবঙ্গ স্বাভাবিক ছিল। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা কোনও ঝুঁকি নিইনি। দিনের মতো রাতেও নজরদারি চলেছে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বন্ধের ডাক প্রত্যাখ্যান করে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা শান্তির পক্ষে। অশান্তির চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরদাস্ত করেন না। তাই যে বা যারা এই বাসে হামলার ঘটনায় জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।” |
|
|
|
|
|