সিউড়ি পুরসভা
এ বার পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ উজ্জ্বলের
লেরই বিদ্রোহী আট কাউন্সিলরের অনশনের জেরে চাপের মুখে এ বার পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা করলেন সিউড়ির তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ও। শুক্রবার সকালে সিউড়ি পুরসভায় একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধেই পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন তিনি। তাঁর দাবি, “গত পুরবোর্ডেই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। দীপক দাস, তৎকালীন পুরপ্রধান তপন সুকুলরাই মিলিত ভাবে তা করেছেন।”
পুরপ্রধানের ওই সাংবাদিক বৈঠককে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না বিদ্রোহী কাউন্সিলরেরা। এ দিনও তাঁরা নিজেদের অনশন কর্মসূচি জারি রেখেছেন। মঞ্চ থেকেই তাঁদের আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন শহর জুড়ে। সেখান থেকেই জবাব দিলেন সমস্ত অভিযোগের। দীপকবাবুরা বলছেন, “উজ্জ্বলবাবুর নেতৃত্বেই বর্তমান পুরবোর্ড জনগণের কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে দিয়েছে। জনগণের সামনেই তাঁকে ওই টাকার হিসেব দিতে হবে।”
সাংবাদিক বৈঠক করে সম্পত্তির লিজ সংক্রান্ত কাগজের
প্রতিলিপি দেখাচ্ছেন পুরপ্রধান। —নিজস্ব চিত্র।
সাংবাদিক বৈঠকে পুরপ্রধান এ দিনও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। পাশাপাশি গত পুরবোর্ডের নানা কাজে অনিয়মের অভিযোগকেই আত্মরক্ষায় হাতিয়ার করেছেন। এ দিন কয়েকটি দলিল দস্তাবেজের প্রতিলিপি সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে উজ্জ্বলবাবু দীপকবাবুদের উদ্দেশে আক্রমণের সুর তীব্র করেন। তাঁর অভিযোগ, “যাঁরা অনশনের নাটক করছেন, তাঁরা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। গত পুরবোর্ডের আমলে তাঁদের কারও কারও হাত ধরেই পুরসভার কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায় লিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর দাবি, কয়েকটি সম্পত্তি লিজ দেওয়ার নামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তায় ধারে পুরসভার তৈরি করা মার্কেটপ্লেস, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে নিউ মার্কেটের দু’টি ফ্লোর, মিউনিসিপ্যালটি স্কুলের পিছনের একটি বাড়ি, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ডরমেটরি বিল্ডিং প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে খুব সামান্য টাকার বিনিময়ে লিজ দেওয়া হয়েছে বলে উজ্জ্বলবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার ধারের মার্কেটটি যাঁরা নিয়েছেন তাঁরা তো ওই বিল্ডিংটাই নিজেদের নামে মিউটেশন করিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে পুরসভার কয়েক কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই সমস্ত অনিয়ম-বেনিয়মের কথা জানাজানি হতেই দীপকবাবুরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এখন নাটক করছেন। ওঁরা আদতে কেমন, তা সিউড়িবাসী বুঝে গিয়েছেন।”
যথারীতি পুরপ্রধানের তোলা অভিযোগগুলির কোনও ভিত্তিই নেই বলে দাবি করেছেন বিদ্রোহী কাউন্সিলরেরা। তাঁদেরও পাল্টা দাবি, নিজের দুর্নীতি আড়াল করতেই উজ্জ্বলবাবু এখন এ সব মিথ্যা অভিযোগ করছেন। প্রাক্তন পুরপ্রধান তপন সুকুল বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে ভ্যালুয়ারকে দিয়ে সম্পত্তিগুলির সমসাময়িক ভ্যালুয়েশন বের করা হয়েছিল। তার পরে বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমোদন মেলার পরেই তা লিজ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও বেনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।” তাঁর দাবি, উজ্জ্বলবাবুর আমলেই এসপি মোড়ের কাছে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে একটি লজকে পুর সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, দীপকবাবু বলেন, “উজ্জ্বলবাবু বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন, ওই সম্পত্তিগুলি তখনকার বাজারদর অনুযায়ী লিজ দেওয়ার কথা। এখনকার নয়।”
দীপকবাবু এবং তপনবাবু দু’জনেই প্রশ্ন তুলেছেন, উজ্জ্বলবাবুরা যদি জানতেনই তাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তা হলে কেন তাঁদের দলে নেওয়া হল? এ ব্যাপারে সরাসরি জবাব না দিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আসল কথা হল ওঁরা প্রত্যেকেই সুবিধাবাদী।” এ দিকে, এ দিন তাঁর তোলা অভিযোগগুলির তদন্ত করার জন্য শীঘ্রই জেলাশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল পুরপ্রধান। এ সব শুনেও বিদ্রোহীরা বলছেন, “আসলেউজ্জ্বলবাবু এখন নিজের গদি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই দিশেহারা হয়ে ভুল বকছেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.