রক্ত পরীক্ষার জন্য সূচ ফোটানো। আর মাঝে-মধ্যে খাওয়ার জন্য জোরাজুরি। এই দুইয়ে বিরক্ত হচ্ছেন সুচিত্রা সেন। এবং এ নিয়ে নিজের অসহিষ্ণুতা ডাক্তার ও নার্সদের কাছে সরাসরিই প্রকাশ করছেন মহানায়িকা। ডাক্তারেরা অবশ্য এই মুহূর্তে তাঁর বিরক্তিকে খুব বেশি আমল দিতে চাইছেন না। চিকিৎসকদের বক্তব্য, টানা বেশ কিছু দিন ভুগলে যে কোনও রোগীই অবুঝ হয়ে পড়েন। সেটাকে গুরুত্ব দিলে চিকিৎসা করাই কঠিন হয়ে পড়বে।
এমনিতেই এখন দু’-তিন দিন অন্তর রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু সুচিত্রার তাতেও ঘোর আপত্তি। তাঁর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উনি শরীরে সূচ ফোটাতে বরাবরই ভয় পান। ভয় পান শরীরে যে কোনও কাটা-ছেঁড়ায়। তাই ছানি অস্ত্রোপচারের দিনক্ষণ স্থির হয়ে যাওয়ার পরে উদ্বেগজনিত কারণে ওঁর হৃদ্স্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতির এমনই অবনতি হয়েছিল যে, তাঁকে স্থানান্তরিত করতে হয় আইটিইউয়ে।
তার পরে গত আঠারো দিন ধরে চলছে টানাপোড়েন। বুধবার হাসপাতাল সূত্রের খবর: সুচিত্রার শারীরিক অবস্থা আপাতত কিছুটা স্থিতিশীল হলেও দুর্বলতা কিছুতেই কাটছে না। এ দিন বিস্তর চেষ্টা করেও চিকিৎসকেরা ওঁকে বিছানায় তুলে বসাতে পারেননি। বিশেষ কথাবার্তাও বলেননি দিনভর। মাঝে-মধ্যে শ্বাসকষ্ট হয়েছে, কিন্তু তখনও উনি ডাক্তারদের ইশারায় বুঝিয়েছেন, নিজেই সামলে নেবেন। সুচিত্রার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্যের কথায়, “উনি ভয় পাচ্ছেন। ভাবছেন, শ্বাসকষ্ট বাড়লে ফের যদি ওই এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব পরানো হয়! তাই বারবার বোঝাতে চাইছেন, ঠিক আছি।” এ দিনও সন্ধ্যায় তাঁকে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। মিনিট কুড়ি-পঁচিশ ছিলেন। কথা বিশেষ হয়নি। তবে তাঁর হাত ধরে রেখেছিলেন সুচিত্রা।
আদতে সত্যিই কেমন আছেন মহানায়িকা?
এ দিন হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, অবস্থা অপরিবর্তিত। চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। বুকের কফ তুলতে চলছে ফিজিওথেরাপি। চা ও জল ছাড়া বাকি সব খাবার খাওয়ানো হচ্ছে রাইলস টিউব মারফত। এখনও উনি যথেষ্ট কাহিল। মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা বার বার তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। চলছে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়ানোর চেষ্টাও। ফুসফুসের সংক্রমণটা কি কমানো গিয়েছে?
মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য, চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র বলেন, “বুকের কফ এখনও পুরোটা বার করা যায়নি। আটকে রয়েছে। বয়সটা এ ক্ষেত্রে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। তবু আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি।”
তবে সুচিত্রার হৃদ্স্পন্দন মাঝে-মধ্যে কিছুটা অনিয়মিত হলেও হার্টের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই চিকিৎসকদের দাবি। “রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও তুলনায় স্থিতিশীল। ৮২ থেকে ৮৮-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।” বলেন সুব্রতবাবু। যদিও ওঁকে আইটিইউ থেকে কবে কেবিনে আনা হবে, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ডাক্তারদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। আচমকা অবস্থার অবনতি হলে তৎক্ষণাৎ যাতে যাবতীয় সহায়তা হাতের কাছে মজুত পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে হলে ওঁকে এখন আইটিইউয়ে রাখাই দরকার।
ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর মধ্য কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালটিতে ভর্তি হন সুচিত্রা সেন। আচমকা অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৮ দিন আগে তাঁকে কেবিন থেকে আইটিইউয়ে স্থানান্তরিত করা হয়।
|