খিচুড়ি খেতে চেয়েছিলেন সোমবার। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে খিচুড়ি এসেওছিল হাসপাতালে। কিন্তু তখন আর খেতে চাইলেন না সুচিত্রা সেন। বললেন, খাওয়ার ইচ্ছা নেই। তাই এ দিনও দিনভর শুধু রাইলস টিউবেই খাওয়ানো হল তাঁকে। কথাবার্তা বলেছেন সামান্যই। বেশির ভাগ সময়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকেছেন। চিকিৎসকদের অনুমান, গত কয়েক দিনের কাহিল ভাব এখনও পুরোপুরি কাটেনি, তাই চোখ মেলতেও ক্লান্ত লাগছে তাঁর।
কিন্তু সম্পূর্ণ সজ্ঞানে রয়েছেন মহানায়িকা। এ দিন দুই নাতনি রাইমা ও রিয়া তাঁর শয্যার দু’পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সুচিত্রার চোখ তখন বোজা। ডাক্তাররা সুচিত্রাকে পরীক্ষা করার ছলে বলেন, “আপনার দু’পাশে দুই সুন্দরী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আপনি যাকে ভালবাসেন, তার দিকে তাকান!” সুচিত্রা মৃদু হেসে সোজা ডাক্তারের দিকে তাকালেন!
এ দিনও নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরের সাহায্য ছাড়াই ছিলেন মহানায়িকা। তবে অক্সিজেন চলেছে সব সময়েই। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ দিনভর ৭৮ থেকে ৮৪-র মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এখনই তাঁকে আইটিইউ থেকে সরানোর কথা ভাবছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, আরও দু’তিন দিন যদি অবস্থার কোনও রকম অবনতি না হয়, তা হলেই তাঁকে জেনারেল কেবিনে স্থানান্তরিত করা হবে। |
সোমবার দুপুরে এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউবটি খুলে দেওয়া হলেও রাইলস টিউব খোলার এখনই কোনও সম্ভাবনা নেই বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারটাই এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন। তাই সে দিকে নজর রাখছেন তাঁরা। সকালের চা নিজের মুখেই খেয়েছেন। সারা দিনে জল খেতে চেয়েছেন বারবার। গেলাস থেকেই জল খেতে পেরেছেন।
দুপুরে বেলুড় মঠ থেকে স্বামী শুভকরানন্দ পুজোর ফুল, চরণামৃত নিয়ে আসেন। সুচিত্রা তখন ঘুমোচ্ছিলেন। মুনমুনের সঙ্গে কথা বলে তা রেখে যান তিনি। চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র বলেন, “গত কয়েক দিনের তুলনায় এ দিন অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনও অবনতি হয়নি। তবে এখনও সঙ্কট পুরো কাটেনি। আরও ক’দিন না গেলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাবে না।”
সোমবার সুচিত্রার প্রস্রাবের পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকেরা। এ দিন অবশ্য সে সংশয় কেটেছে। প্রস্রাবের পরিমাণ এ দিন স্বাভাবিক ছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে। পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়াতে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এ দিনের পর থেকে আর তাঁর প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করা হবে না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। তিন-চার দিন অন্তর পরীক্ষা হবে।
শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় এ দিন মেয়ে মুনমুন এবং নাতনি রিয়া ও রাইমাও ছিলেন অনেকটাই হাল্কা মেজাজে। মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরাও জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনের পরে এ দিনই সামান্য ফুরসত মিলেছে তাঁদের। হাসপাতালের সামনে পুলিশ প্রহরা মোতায়েন থাকলেও উৎসাহী জনতার ভিড় এ দিন তুলনামূলক ভাবে কম ছিল।
|