সারা দিন আচ্ছন্ন থাকার পরে সোমবার রাতে একটু কথা বললেন সুচিত্রা সেন। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন “ভাল আছি।” টিউবের সাহায্যে নয়, নিজের মুখে জলও খেয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘কী খেতে ইচ্ছা করছে? খিচুড়ি খাবেন?’ হ্যাঁ বলেন মহানায়িকা। জানতে চাওয়া হয়, বাড়ি থেকে আনা খিচুড়ি খাবেন কি না। তিনি সম্মতি দেন। চিকিৎসকদের মতে, সুচিত্রার অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক হলেও অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল। সব কিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার তাঁকে খিচুড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হবে।
দিনভর হাসপাতালে কাটানোর পরে সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়েছিলেন মেয়ে মুনমুন। রাতের দিকে তিনি ফের হাসপাতালে আসেন। গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে রীতিমতো বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। এ দিন কিন্তু তিনি হাসপাতালে ঢোকার সময় চিত্রগ্রাহকদের দেখে কিছুটা হাল্কা সুরে জিজ্ঞেস করেন, “মা কেমন আছেন জানতে চাইলেন না তো?” চিত্রগ্রাহকেরা বলেন, মুনমুনের মানসিক অবস্থা আন্দাজ করেই তাঁকে কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। সুচিত্রা কেমন আছেন, সেটা জানতে তাঁরা সকলেই উৎসুক। মুনমুন আর কিছু না বলে হাসতে হাসতে ভিতরে চলে যান।
সুচিত্রার এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউবটি এ দিন সকালেই খুলে নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকেরা নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন। টিউব খুলে নেওয়ার যুক্তি হিসেবে চিকিৎসকেরা সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বলেন। তবে সমস্যা হল, এই ধরনের টিউব এক বার খুললে তা ফের পরানো কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ফের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে কী করা হবে, সে নিয়ে ধন্দে ছিলেন তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত টিউব খোলার সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়। |
হাসপাতালের সামনে মুনমুন সেন। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
বিকেলে চিকিৎসকরা জানান, টিউব খোলার পরেও সুচিত্রার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রার খুব বেশি তারতম্য ঘটেনি। যদিও সন্ধ্যার পরে অক্সিজেনের পরিমাণ ফের কিছুটা কমে যায়। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রাও কিছুটা কমেছে। প্রস্রাবের পরিমাণও কম। ফলে তাঁর কিডনির কর্মক্ষমতা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকে গিয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সাধারণ ভাবে সুচিত্রার হার্টের অবস্থা খারাপ নয়। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হৃদ্স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। সেটাও চিন্তার একটা কারণ।
শনিবার বিকেলে আচমকাই অবস্থা খারাপ হয়েছিল সুচিত্রা সেনের। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে বেড়ে গিয়েছিল কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ। তখনই এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউবটি লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টিউব লাগানোর সময়ে কিছুটা রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ওষুধের সাহায্যে সেই রক্তক্ষরণ দ্রুত বন্ধের ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকেরা। রবিবার তাঁকে রাইলস টিউব পরানো হয়।
এ দিন সেই রাইলস টিউবের সাহায্যেই খাওয়ানো হয়েছে সুচিত্রাকে। দিনের বেশির ভাগ সময় তিনি আচ্ছন্ন অবস্থাতেই ছিলেন। চিকিৎসকদের দাবি, রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়া শুরু করার পরে তাঁর কাহিল ভাব খানিকটা কেটেছে। আরও আগে ওই টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো শুরু করলে শরীরে লড়াই করার ক্ষমতা কিছুটা বাড়ত বলে চিকিৎসকদের অভিমত। বস্তুত, লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টাতেই মঙ্গলবার সুচিত্রাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হবে।
মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য সুব্রত মৈত্র এ দিন সন্ধ্যায় বলেন, “ওঁর অবস্থা একই রকম রয়েছে। রক্তচাপ আপাতত স্বাভাবিক। শ্বাসকষ্টও তুলনামূলক ভাবে কম। ওঁর জ্ঞান রয়েছে। মাঝেমধ্যে ইশারায় মেয়ে ও নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ দিন আর নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরের সাহায্য নিতে হয়নি। শুধু অক্সিজেনেই কাজ হয়েছে।”
এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে তিনি আইটিইউ-এ ঢোকেননি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সন্ধ্যায় ফের হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৫ মিনিটের মতো সেখানে থেকে চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রকে নিয়ে তিনি বাইরে আসেন।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনও কথা না-বললেও সুব্রতবাবু বলেন, “সঙ্কট না-কাটলেও অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। মুখ্যমন্ত্রী বাইরে থেকে সুচিত্রা সেনকে দেখেছেন। ওঁকে দেখে সুচিত্রা সেন ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করছিলেন।” |