শিল্পতালুকে সাত লগ্নিপ্রস্তাব
বাড়তি জমি রাখার অনুমতি ৩ সংস্থাকে
গ্রামাঞ্চলে সিলিং-বহির্ভূত জমি রাখার জন্য তিনটি শিল্প সংস্থাকে ছাড়পত্র দিল রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প ও পরিকাঠামো বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকের শেষে নতুন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, একটি সংস্থা নতুন করে জমি কিনবে। চাষিদের সম্মতি নেওয়া ও ভূমি দফতরের বিধি মোতাবেক উপযুক্ত দর দেওয়ার শর্তে তাদের বাড়তি জমি রাখার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এ দিন শিল্প পার্কগুলিতে সাতটি নতুন প্রকল্প এবং রাজ্যের মালিকানাধীন পাঁচটি চা-বাগান বেসরকারি হাতে দেওয়ার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে।
রাজ্যে লগ্নির প্রতিবন্ধক হিসেবে যে সব বিষয়কে চিহ্নিত করেছে শিল্পমহল, তার অন্যতম হল জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন। কি শহরাঞ্চলে, কি গ্রামাঞ্চলে এই আইন পুরোপুরি তুলে নিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। তবে তার মধ্যেই আইন কিছুটা শিথিল করে প্রতিটি আবেদন খতিয়ে দেখে অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছে তারা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে ২৪ একরের বেশি জমি হাতে রাখতে হলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সোমবার যে তিনটি সংস্থা বাড়তি জমি রাখার অনুমতি পেল তাদের মধ্যে একটি রাজ্য সরকারের নিজস্ব সংস্থা, শিল্পোন্নয়ন নিগম।
অমিতবাবু এ দিন জানান, ডোমজুড় ও সাঁকরাইলে ৯২ একর জমিতে রাবার পার্ক গড়বে শিল্পোন্নয়ন নিগম। এই ধরনের পার্কে অনেক বেশি কর্মসংস্থান হয়। তাই নিগমকে সিলিং-অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কুলপিতে ২০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জাহাজ কারখানা করার প্রস্তাব রয়েছে বেঙ্গল শিপইয়ার্ড সংস্থার। সেখানে ৫২০০ জনের সরাসরি কাজ পাওয়ার কথা। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় তিনশো একর বাড়তি জমি ইতিমধ্যেই কিনেছে ওই সংস্থা। তা খাস ঘোষণা করার পরে জরিমানা ধার্য করে ভূমি আইনের ১৪ ওয়াই ধারায় তা বেঙ্গল শিপইয়ার্ডকে রাখার অনুমতি দেওয়া হবে।

নবান্নে অমিত মিত্র।—নিজস্ব চিত্র।
শিল্প দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে ডানকুনিতে আলট্রাটেক সংস্থা সিমেন্ট কারখানা গড়ার জন্য সিলিং-অতিরিক্ত জমি কেনার আগাম অনুমতি চেয়েছিল। এ ছাড়া এসার অয়েল এবং গ্রেট ইর্স্টান এনার্জি-র ক্ষেত্রেও ১৪ ওয়াই ধারায় বাড়তি জমি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, সিলিংয়ের বেশি জমি রাখতে হলে আইনে আগাম অনুমতি নেওয়ার কথাই বলা আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই জমি কেনার পরে শিল্প সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে ১৪ ওয়াই ধারায় বাড়তি জমি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
এ দিন অনুমতি পাওয়া তৃতীয় সংস্থা সুপ্রিম ফার্নিচার অবশ্য এখনও বাড়তি জমি কেনেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তারা একটি স্টিলের আসবাবপত্রের কারখানা গড়তে চায়। সে জন্য ৪৯ একর জমি প্রয়োজন বলে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল তারা। শিল্পমন্ত্রী জানান, জমি আইনের ১৪ জিজি (৬) ধারায় আগাম অনুমতি নেওয়ার কথা বলা আছে। তবে “ওই সংস্থাকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হয়েছে, জমি কেনার ক্ষেত্রে কোনও বলপ্রয়োগ করা হবে না। চাষিদের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করে এবং বাজার দরেই জমি কেনা হবে”- বলেছেন অমিতবাবু। অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্যই এই হলফনামা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।
শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, বাম আমলে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ১২০০ একর জমি কিনে একটি তথ্যপ্রযুক্তি উপনগরী গড়ার প্রস্তাব এসেছিল। সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে সিলিং-অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতাতেই ছিল বেদিক ভিলেজ। ফুটবল খেলা ঘিরে একটি গণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে যেখানে জোর করে জমি নেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখান ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। তাই নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জেরে শেষ পর্যন্ত গোটা প্রকল্পটিই বাতিল করে দিতে হয়েছিল আগের সরকারকে। তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই হলফনামার ব্যবস্থা বলে বর্তমান সরকারের দাবি। শিল্পমন্ত্রী এ দিন জানান, জোর করে জমি নেওয়ার অভিযোগ উঠলেই ওই সংস্থার ছাড়পত্র বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাষিরা বাজারদরে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হবে। বহু ক্ষেত্রে চাষিরা বাজার দরের ছ’গুণ দাম পাবেন বলেও তাঁর দাবি।
ছাড় যাদের
সংস্থা জমি
• শিল্পোন্নয়ন নিগম
• বেঙ্গল শিপইয়ার্ড
• সুপ্রিম ফার্নিচার
৯২ একর
৩০০ একর
৪৯ একর
নতুন যারা
সংস্থা লগ্নি
• ইমামি
• গ্লোবাল স্পিরিট
• প্রিয়া ফুডস
• সিমলা হর্টিকালচার
• শ্রেয়ি ক্রিয়েশন
৪২০ কোটি
১৪৫ কোটি
২০ কোটি
১৫ কোটি
৬ কোটি
সিলিং-অতিরিক্ত জমি রাখার ব্যাপারে সামান্য হলেও নরম এই মনোভাবকে ইতিবাচক বলেই মনে করছে শিল্পমহল। আর সরকারের মতে, এ রাজ্যে লগ্নি নিয়ে শিল্পমহলের মনোভাবও ক্রমে ইতিবাচক হচ্ছে। সেই কারণেই শিল্প-পার্কগুলিতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে এগিয়ে এসেছে সাতটি সংস্থা।
জমি নিয়ে নতুন সরকারের নীতি বড় শিল্প গড়ার অন্তরায়, এ কথা গোড়া থেকেই বলে আসছেন শিল্পপতিরা। রাজ্য কিন্তু বেসরকারি শিল্পের জন্য এক ছটাক জমি নিতে এখনও অনিচ্ছুক। তাদের বক্তব্য, জমি শিল্প সংস্থাকেই কিনতে হবে। অন্যথায় শিল্প গড়তে হবে খাস জমিতে। গত সপ্তাহে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার বণিকসভার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অমিতবাবু বলেছিলেন, রাজ্যের শিল্পতালুকগুলিতে প্রায় তিন হাজার একর জমি রয়েছে। সেখানে শিল্পপতিরা স্বাগত। ঘটনা হল, এর আগে সেই জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বার সাতটি সংস্থা এগিয়ে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি সরকারি কর্তারা। শিল্প দফতর সূত্রের খবর, এ দিন অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবগুলি পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীনই মন্ত্রিসভার এই কমিটির বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছিল।
অমিতবাবু এ দিন জানান, প্রস্তাবিত সাতটি প্রকল্পে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। সব মিলিয়ে জমি লাগবে ১০০ একরের মতো। এর মধ্যে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ৬৫ একর জমিতে ৪২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিমেন্ট কারখানা গড়তে চায় ইমামি। পানাগড়ে ২০ একর জমিতে ১৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি স্পিরিট কারখানা গড়ার প্রস্তাব করেছে গ্লোবাল স্পিরিট। এ ছাড়া, সাঁকরাইলের ফুড পার্কে সিমলা হর্টিকালচার সংস্থার ১৫ কোটি টাকার, প্রিয়া ফুডস-এর ২০ কোটি টাকার এবং মণিকাঞ্চনে শ্রেয়ি ক্রিয়েশন সংস্থার ৬ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাবও রয়েছে। এই সব লগ্নির ফলে কয়েক হাজার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি শিল্পমন্ত্রীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.