কামদুনি বা মধ্যমগ্রামের পুনরাবৃত্তি চায় না সরকার। তাই গাইঘাটার গণধর্ষণের ঘটনায় গোড়া থেকেই সতর্ক পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। আগের দিন নবান্নের প্রতিনিধিদল মধ্যমগ্রামে তদন্তে গিয়েছিল। সোমবার পরপর ঘটে চলা নারী-নিগ্রহের মোকাবিলায় উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা পুলিশ-প্রশাসন একগুচ্ছ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করল।
নারী নির্যাতন রুখতে এখন থেকে গোটা জেলা জুড়ে ফ্লেক্স, ব্যানার টাঙাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। সেখানে পুলিশ কর্তাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকছে। যে-সব রাস্তা দিয়ে মেয়েরা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন না, সেগুলি চিহ্নিত করা হচ্ছে। বারাসত ও মধ্যমগ্রামের মহিলাদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গড়া হবে। পুলিশকে পঞ্চায়েত স্তরেও সমন্বয় রেখে মহিলাদের সম্পর্কে তথ্য রাখতে বলা হয়েছে। নারী পাচার-সহ আরও কিছু ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে মেয়েদের স্কুলে নিয়মিত সভা হবে বলেও জানান জেলার এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী।
মধ্যমগ্রামের ঘটনার পরে শনিবারই দোলতলায় এসে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য পুলিশের কর্তারা। সেখানে প্রতিটি দফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলা হয়। এ-ও বলা হয়, একটি ঘটনা ঘটার পরে শুধু অপরাধীদের ধরেই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় না। |
নির্যাতন রোধে পাঁচ দাওয়াই |
• জেলা জুড়ে ফ্লেক্স-ব্যানার
• মেয়েদের স্কুলে নিয়মিত সভা
• অনিরাপদ রাস্তা চিহ্নিত করা
• মহিলাদের নিয়ে পাড়া কমিটি
• অন্য নির্যাতিতাদের খোঁজখবর |
|
মধ্যমগ্রামের প্রসঙ্গে বলা হয়, নির্যাতিতার শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাপারেও পুলিশকে দায়িত্ব নিতে হবে। তার পরেই এসপি সোমবার জানান, পুরনো কিছু ঘটনায় নির্যাতিতারা বর্তমানে কেমন আছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য শিশুকল্যাণ কমিটিকে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।
পার্কস্ট্রিট, কাটোয়া, কামদুনি, মধ্যমগ্রাম একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগকে ঘিরে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গাইঘাটা-কাণ্ডের পরে কিন্তু প্রথম থেকেই সতর্ক প্রশাসন ও শাসক দল। জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, “শুরু থেকেই পরিবারটির পাশে আছি। আমি নিজে এবং স্থানীয় নেতারা মেয়েটির বাড়িতে গিয়েছেন।” তিনি জানান, ঘটনার পরে থানায় অভিযোগ জানানো থেকে শুরু করে হাসপাতালে যাওয়াএই পুরো পর্বেই পরিচিত কিছু স্থানীয় তৃণমূল নেতা-নেত্রী পরিবারটির পাশে ছিলেন।
পুলিশ ও শাসক দলের উপরে ভরসা রেখে চলতে চাইছে গাইঘটার নির্যাতিতার পরিবারও। তাঁর বাবার কথায়, “এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ ও তৃণমূলের নেতারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।” তাঁর নির্যাতনকে ঘিরে কোনও প্রতিবাদ-রাজনীতি চাইছেন না ওই তরুণীও। তবে থেমে নেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। সোমবার সকাল থেকে সিপিএম, কংগ্রেস, সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের নেতা-নেত্রীরা ভিড় করেছেন গাইঘাটার তরুণীর বাড়িতে। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যেরাও এসেছিলেন। সুটিয়া ও কামদুনির প্রতিবাদী মঞ্চের নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। তবে, তৃণমূল নেতৃত্ব বাদে কেউই দেখা পাননি মেয়েটির। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। বাইরের কাউকে মেয়েটির ঘরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযোগ মানেনি। মেয়েটির বাবা-মা কথা বলেছেন সকলের সঙ্গে। বাবার কথায়, “মেয়ে অসুস্থ। ও নিজেই কারও সঙ্গে দেখা করতে চায়নি।” আর তরুণী বলেন, “আমি কোনও প্রতিবাদ আন্দোলনে থাকতে চাই না। কারণ প্রতিবাদ কিছু দিন পরে বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবাদীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। পুলিশই একমাত্র ভরসার জায়গা।” আর খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ওঁরা অশান্তি পছন্দ করছেন না। মেয়েটির বাবা চাননি, মেয়ে কারও সঙ্গে দেখা করুক।”
ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ধর্ষকেরা মোবাইলে ঘটনার ছবি তুলে রেখেছে। তদন্তে নেমে পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃত যুবকেরা জানিয়েছে, মোবাইলে ছবি তারা তোলেনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশও মনে করছে, ধৃতদের থেকে যে সস্তার মোবাইল উদ্ধার হয়েছে, তাতে ভিডিও করা সম্ভব নয়। তবে, অন্য কোনও ফোন থেকে ভিডিও করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে গাইঘাটার শিমুলপুরের একটি মাঠে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে তিন যুবক গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। জেরার মুখে ধৃত তিন যুবক ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে বলে দাবি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের। |