দিনভর বাড়ি-ভর্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের আনাগোনা। যদিও গাইঘাটার নির্যাতিতা তরুণীর সঙ্গে দেখা না করতে পেরে তাঁদের হতাশই হতে হল সোমবার। তবে বাড়ির অন্দরমহল পর্যন্ত তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের আনাগোনা ছিল।
এ দিন সিপিএম, কংগ্রেস, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যেরা এসেছিলেন গাইঘাটায় মেয়েটির বাড়িতে। ছিলেন কামদুনি ও সুটিয়া কাণ্ডের পরে সেখানে গড়ে ওঠা প্রতিবাদী মঞ্চের দুই নেতা ভাস্কর মণ্ডল ও ননীগোপাল পোদ্দার। যদিও কারও সঙ্গেই দেখা হয়নি মেয়েটির। তার বাবা-মা অবশ্য কথা বলেছেন সকলের সঙ্গে। তা নিয়ে কিছুটাও মনোমালিন্য, বাদানুবাদও তৈরি হয়। তৃণমূল ও পুলিশই তাঁদের মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আবার হামলার অভিযোগ তোলে লিবারেশন। এমনকী থানা সেই অভিযোগ নিতে চায়নি বলেও তাদের দাবি।
এ দিন ভাস্কর মণ্ডল, ননীগোপাল পোদ্দারদের কটাক্ষ করে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য কণা গুহকে বলতে শোনা গেল, “আপনারা তো সব জায়গায় সহানুভূতি জানাতে যান না। জায়গা বুঝে যান।” জবাব না দিয়ে কিছু ক্ষণ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যান ননীগোপালবাবুরা। বাম নেত্রী ভারতী মুৎসুদ্দি এসেছিলেন গাইঘাটায়। তিনি বলেন, “মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। মেয়েটির বাবাও আমাদের মেয়ের কাছে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এর থেকেই বোঝা যায়, এখানে কী রকম সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, “তৃণমূল বাড়ি ঘিরে রেখেছে। মেয়েটির পরিবার ভয়ে কথা বলতে পারছেন না।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি (শহর) তাপস মজুমদারের আবার অভিযোগ, “পুলিশ ও তৃণমূল পরিবারটিকে নিয়ে রাজনীতি করছে।”
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শুরু থেকেই আছেন পরিবারটির পাশে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ বা বাধাদানের কথা মানতে চাননি তিনি। বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে পুলিশও। তাদের বক্তব্য, মেয়ের বাবার অনুমতি না নিয়ে কেউ যাতে দেখা না করেন, সেই অনুরোধ করা হয়েছিল।
এ দিকে, গোটা ঘটনার বিচার চেয়ে বারাসতের ডাকবাংলো মোড়-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এ দিন অবরোধ কর্মসূচি নেয় কংগ্রেস। গাইঘাটায় ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে সোমবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে কলেজ স্ট্রিট মোড় মিছিল করে সেখানে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করে নারী নিগ্রহ বিরোধী কমিটি। মেয়েটি যে স্কুলে পড়ে, সেখানকার পড়ুয়াদের স্কুলের বাইরে এনে প্রতিবাদ মিছিল করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষ। তা নিয়ে স্কুলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি মেয়েটির। আপাতত স্কুলে যেতে চান না তিনি। বলেন, “স্কুলে গেলে অনেকে কটূ কথা বলতে পারে। আমাকে নিয়ে অবান্তর আলোচনা হবে। এখন ক’দিন যেতে চাই না স্কুলে।” স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, স্কুলে এলে যাতে মেয়েটির কোনও অসুবিধা না হয়, তা তাঁরা দেখবেন।
|