এ বার জল জমছে সুচিত্রার ফুসফুসে
নিবারের ধকল পুরো কাটল না রবিবারেও। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঘন ঘন ওঠানামা করছে। ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইডের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষণই নেই সুচিত্রা সেনের। তাঁর জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু শরীরে একাধিক নলের কারণে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। মহানায়িকার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এ দিনও দিনভরই উদ্বেগে কাটিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউবের সাহায্যে শনিবার থেকে তাঁর শ্বাসনালিতে জমে থাকা কফ বার করা হচ্ছে। পাশাপাশি দফায় দফায় তাঁকে রাখা হচ্ছে নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনেও (বাইপ্যাপ)। এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নিলে শ্বাসকষ্ট কমে ঠিকই, কিন্তু ফুসফুসে খুব জোরে হাওয়া প্রবেশের জন্য যথেষ্ট চাপও পড়ে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর মুখ এবং শরীরের কিছু অংশ ফুলে গিয়েছে। মুখ দিয়ে খাবার খেতে না পারায় এ দিন দুপুরে তাঁকে রাইলস টিউব পরানো হয়েছে। সুচিত্রার জন্য তৈরি বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডে দিন কয়েক আগেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ফুসফুসের চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় এবং পবন অগ্রবালকে। শনিবার বিকেলে মেডিসিন-এর চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে অনুরোধ করা হয় সুচিত্রাকে দেখে তাঁর মতামত জানানোর জন্য। চিকিৎসকদের বক্তব্য, তাঁর রক্তচাপ ও হৃদ্স্পন্দন আগের তুলনায় ভাল। কিন্তু বাকি মাপকাঠিগুলির এখনও উন্নতি হয়নি। রক্তের বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি এ দিন সুচিত্রার বুকের এক্স-রে হয়।
সেই রিপোর্টেই ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানতে পারেন চিকিৎসকেরা। ওষুধের পরেও কেন ফ্লুইড বাড়ছে, সে নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা।
এ দিন সন্ধ্যাতেও ফের হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে মোট পাঁচ বার। রবিবার প্রায় ঘণ্টা দুয়েক হাসপাতালে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুচিত্রা সেনকে দেখে বেরনোর সময়ে মমতা অবশ্য কোনও কথা বলেননি। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েই চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র বলেন, “আপাতত উনি স্থিতিশীল। আকারে-ইঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। খাওয়ানোর জন্য টিউব পরানোর আগে আমরা ওঁর অনুমতি চেয়েছিলাম। আজ উনি ইশারায় সেই অনুমতি দিয়েছেন।”
এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব পরানো থাকলে রোগীর পক্ষে কথা বলা সম্ভব হয় না। মুখে খাওয়ার ব্যাপারেও ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ সে ক্ষেত্রে খাবার শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়ার ভয় থাকে।
সুচিত্রা সেনকে দেখে বেরিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে চিকিৎসক
সুব্রত মৈত্র এবং ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিকে শুধু স্যালাইনের মতো করে তরল খাবার দিলে প্রয়োজন অনুযায়ী ১৫০০ ক্যালরি শরীরে পৌঁছচ্ছে না। এই কারণেই এ দিন রাইলস টিউব পরানো হয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, আরও আগে এই টিউবটি পরাতে পারলে হয়তো কাহিল ভাব খানিকটা কাটানো যেত। গত তিন-চার দিন ধরেই কৃত্রিম উপায়ে খাওয়ানোর কথা ভাবছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাতে আপত্তি ছিল খোদ সুচিত্রারই। যত কাহিলই থাকুন, সজ্ঞানেই থাকছেন সুচিত্রা। তাই তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন চিকিৎসকরা। এ দিন বারবার বোঝানোর পরে সুচিত্রা ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বলেন। তার পরেই দ্রুত টিউব পরানোর ব্যবস্থা হয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, সারা দিন কড়া ডোজের বিভিন্ন ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। এই অবস্থায় শরীরে পুষ্টি না পৌঁছলে শরীর নিজেই লড়াই করা বন্ধ করে দেবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এ দিন সকাল থেকেই অনুরাগীদের ভিড় ছিল হাসপাতালের সামনে। সকলেই জানতে চেয়েছেন, বিপদ কেটেছে কি মহানায়িকার? হাসপাতাল থেকে যে কোনও ডাক্তারের গাড়ি বেরোলেই তাঁরা রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করেছেন। জানতে চেয়েছেন, কেমন আছেন তাঁদের প্রিয় নায়িকা। শনিবার রাত থেকেই হাসপাতালের সামনে কড়া পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড এবং সাংবাদিকদের জন্য পৃথক এনক্লোজার। মূল হাসপাতাল ভবনে ঢোকার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে।
রোগী ভর্তির কার্ড দেখিয়ে তবেই ভিতর পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন রোগীর আত্মীয়রা।
এ দিন সকালে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে যান বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী দীপ্তি মহারাজ। যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও। তবে আইটিইউ-এ ঢোকেননি তিনি। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেই বেরিয়ে আসেন। শনিবার রাতে হাসপাতালেই থেকে গিয়েছিলেন মেডিক্যাল বোর্ডের কয়েক জন চিকিৎসক এবং মেয়ে মুনমুন। সকাল থেকে হাসপাতালে আসেন নাতনি রাইমা ও রিয়া।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.