কনকনে ঠান্ডা, দক্ষিণও যেন মেজাজে উত্তরবঙ্গ
কাল পৌনে ছ’টা। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নেহাতই অভ্যেসবশে দু’-একটা কাক বেরিয়ে পড়েছিল। বুধবার ভোরের আকাশ দেখে বুঝি ঘাবড়ে গেল তারা।
ঘরের চৌকাঠ ছাড়িয়ে বাইরে পা রাখতেই রীতিমতো গুটিয়ে গেল শরীরটা। কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাওয়ার জোগাড়। মাথায় বাঁদর টুপি, গায়ে মোটা জ্যাকেট। তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কলকাতা কি লন্ডন হয়ে গেল! একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, কলকাতার তাপমাত্রা বুঝি চলে গিয়েছে হিমাঙ্কের কাছাকাছি।
থার্মোমিটার কী বলছে? সকাল সাড়ে সাতটায় দেখাচ্ছে ১৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পারদের ওঠানামার সঙ্গে শীতের অনুভবের যে এত ফারাক, তা কে জানত! কুয়াশার চাদরে আকাশ ঢেকে যাওয়ায় রোদ ওঠেনি। তাই তাপমাত্রা বাড়তেই পারেনি।
সকাল ন’টা। তখনও সূর্যের দেখা নেই। শীতটা মনে হচ্ছে আরও জাঁকিয়ে বসেছে। বইতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া। যেন গায়ের চামড়া কেটে নিচ্ছে। থার্মোমিটার বলছে, ১৪ ডিগ্রি।
বেলা ১১টা। মেঘের আড়াল থেকে সূর্যের একটা আভা দেখা যাচ্ছে। রয়ে গিয়েছে উত্তুরে হাওয়াও। থার্মোমিটার জানাল, তাপমাত্রা ১৭.৫। তখনও উত্তুরে হাওয়া বয়েই চলেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও যেন বাগে আনা যাচ্ছে না শীতটাকে।
মকরসংক্রান্তির পরে দক্ষিণ ঘেঁষা পথ ছেড়ে সূর্যের পথ সবে উত্তরমুখো যাত্রা শুরু করেছে। শীতের দুপুরে, বেলা আড়াইটে নাগাদ সূর্যের নরম রোদ ছড়িয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু কোথায় কী? কুয়াশা কিন্তু তখন আর মাটির কাছাকাছি নেই। বেশ কিছুটা উঁচুতে উঠে মোটা চাদরে আড়াল করে রেখেছে সূর্যকে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মাপার সময় এটাই। আবহাওয়া দফতরের থার্মোমিটারে পারদ ১৯.৮ ডিগ্রিতে উঠেই থেমে গিয়েছে। এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে তা ৬ ডিগ্রি কম। আবহবিদরা বলছেন, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে গেলেও বোধ হয় এতটা শীত অনুভূত হত না! কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রাটা নেমে গিয়েই যত বিপত্তি।
অন্য দিন বিকেল পাঁচটায় পাখিরা ফিরতে শুরু করে বাসায়। এ দিন চারটেতেই পাখিরা ফিরেছে যে যার গাছে। পাঁচটায় চেপে বসেছে অন্ধকার। আবহাওয়া দফতরের থার্মোমিটারে তাপমাত্রা তখন ১৬.৮ ডিগ্রি।
কলকাতার এই প্রচণ্ড ঠান্ডা কি কড়া শীতেরই বার্তাবাহক? এ দিনের এই হাড়-কাঁপানো ঠান্ডাকে শীত বলতে রাজি নন আবহবিদরা। তাঁরা বলছেন, শীতকালে এটাই উত্তরবঙ্গের স্বাভাবিক আবহাওয়া। সেখানে ঘন কুয়াশায় রোদ ওঠে না। অনেক সময়েই সেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি চলে আসে। আবহবিদেরা বলছেন, “এটা কড়া শীত নয়। এই অবস্থাটাকে বলে শীতল দিন। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেমন কমে না।”
উত্তরবঙ্গে গত ১৫ দিন ধরে কিন্তু এমনই চলছে। সেখানকার শীতে দিনের বেলাটা এমন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে কেন? আবহবিদরা বলছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর ভারত থেকে পূর্ব দিকে সরে এসে বিহার-উত্তরবঙ্গ হয়ে চলে যায় উত্তর-পূর্বে। প্রতিটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সঙ্গে পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়ে জলীয় বাষ্প। যত দিন পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রবাহ আসতে থাকে, বাতাসে জলীয় বাষ্পও ঢুকতে থাকে। তাই গোটা শীতেই জলীয় বাষ্প সেখানে স্থায়ী ভাবে থেকে যায়। পাহাড়ে তাপমাত্রা কম থাকায় গোটা উত্তরবঙ্গে ভূপৃষ্ঠও দ্রুত ঠান্ডা হয়। ফলে জলীয় বাষ্প ঘন হয়ে পরিণত হয় কুয়াশায়। সেই কুয়াশা থেকে যায় মাটির কাছাকাছি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তাই বাড়তেই পারে না। দিনের বেলায় প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে থাকেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। বুধবার কলকাতায় যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সেটা গত ১৫ দিন ধরেই উত্তরবঙ্গে স্থায়ী রয়েছে।
কুয়াশামাখা শীতের সকাল। বুধবার উত্তর শহরতলিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
কিন্তু উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া হঠাৎ দক্ষিণবঙ্গে কেন? আবহবিদদের ব্যাখ্যা, এ বছর বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ যে ভাবে ঘনঘন বদলাচ্ছে, তাতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দক্ষিণবঙ্গে। নতুন রাস্তায় সে এ বার উত্তরবঙ্গে ঢুকছে। বিহার-দক্ষিণবঙ্গ হয়ে সে যাচ্ছে উত্তরে। ফলে উত্তরবঙ্গের মতো দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলেও ডিসেম্বরের গোড়া থেকে ঢুকে পড়ছে জলীয় বাষ্প। তাই জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে ১৩ দিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ সময়ের স্বাভাবিকের উপরে উঠতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে কেন তাপমাত্রা আরও নামল না কলকাতায়? আবহবিদরা বলছেন, এ দিন আকাশ মেঘলা থাকায় পৃথিবীতে যেটুকু তাপ রয়েছে, তার বিকিরণ হয়নি সে ভাবে। ভূপৃষ্ঠের তাপ অনেকটাই রয়ে গিয়েছে মেঘ আর মাটির মধ্যে। তাই সারা দিনের মতো রাতে কড়া ঠান্ডা থাকা সত্ত্বেও থার্মোমিটারের পারদ আরও নেমে যায়নি।

পারদ-ছন্দ
সময় তাপমাত্রা
সকাল ৫.৩০ ১৩.৪
সকাল ৭.৩০ ১৩.৪
বেলা ৯টা ১৪.০
বেলা ১১টা ১৭.৫
বেলা ২.৩০ ১৯.৮
বিকেল ৫.৩০ ১৬.৮
*তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.