কড়াই ধুতে বিরক্তি প্রকাশ করায়
মারধর করা হয়েছিল দেবশেখরকে
ড়াই ধুয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই কাজ করার পরে খানিক গজগজ করেছিলেন প্রৌঢ়। অভিযোগ, তারই জেরে পেটানো হয় তাঁকে। সোমবার রাতে ওই ঘটনার জেরে মারা যান হাবরার বয়রাঘাটার পুনর্বাসন কেন্দ্র (রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার) ‘উত্তরায়ণ’-এর আবাসিক দেবশেখর চট্টোপাধ্যায়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, চিকিৎসার নামে আবাসিকদের প্রায়ই মারধর করা হত ওই কেন্দ্রে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সাফাইয়ের কাজও করতে হত আবাসিক রোগীদের। সেখানে পান থেকে চুন খসলে জুটত মার। সব থেকে কড়া দাওয়াই ছিল ‘হট সিট’ (আবাসিকদের কাছে চালু নাম)। তাতে বন্ধ ঘরে চেয়ারে বসিয়ে জামা খুলিয়ে প্লাস্টিকের পাইপের টুকরো দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হত রোগীদের।
ধৃত রণজিৎ আচার্য, লিটন (মাঝে) ও অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় (পিছনে)। ছবি: শান্তনু হালদার।
দেবশেখরবাবুকে খুনের অভিযোগে মঙ্গলবারই গ্রেফতার করা হয়েছিল কেন্দ্রের দুই কর্মী লিটন দাস ওরফে বাচ্চু ও অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার দমদমের শেঠপুকুরের বাসিন্দা রঞ্জিৎ আচার্যকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরও যাতায়াত ছিল ওই কেন্দ্রে। বুধবার তিন জনকেই বারাসত আদালতের বিচারক ৭ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। দুই পুরনো আবাসিক এ দিন গোপন জবানবন্দি দেন বারাসত আদালতে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃতেরা সকলেই কোনও না কোনও সময়ে নেশাসক্ত অবস্থায় উত্তরায়ণে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে এঁদের উপরেই কেন্দ্রের রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব ছিল। মাঝে মধ্যে চিকিৎসক আসতেন ঠিকই, কিন্তু সর্বক্ষণের জন্য কেন্দ্রের এই সব পুরনো আবাসিকদের উপরেই ভরসা রেখেছিলেন উত্তরায়ণের আধিকারিক সায়ন্তন বসু। তাঁর খোঁজ অবশ্য এখনও পায়নি পুলিশ। কোন চিকিৎসকেরা কেন্দ্রে যাতায়াত করতেন, তা-ও জানা যায়নি।
মঙ্গলবার ওই কেন্দ্র থেকে পালান জনা আঠাশ আবাসিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রের এক প্রাক্তন আবাসিক বলেন, “বাড়ির লোকের সঙ্গে তেমন একটা দেখাই করতে দেওয়া হত না আমাদের। কথা বলার সময়ে উত্তরায়ণের কোনও না কোনও কর্মী দাঁড়িয়ে থাকত সামনে। তা ছাড়া, বাড়ির লোক সব সময়ে আমাদের কথা বিশ্বাসও করতে চাইত না।” স্থানীয় বাসিন্দা নীতিশ বিশ্বাস, গৌরাঙ্গ দাসরা বলেন, “রোগীদের চিকিৎসার নামে এমন ভয়ঙ্কর মারধর করা হত, বুঝতে পারিনি। তা হলে হয় তো আগেই ব্যবস্থা নেওয়া যেত।”
পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন দেবশেখরবাবুকে লিটন দোতলার ঘর থেকে একটি কড়াই ধুয়ে আনতে বলে। সেই নির্দেশ অমান্য করেননি বছর একান্নর প্রৌঢ়। কিন্তু কাজ সারার পরে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, এ সব কাজ তাঁর করার কথা নয়। তা ছাড়া, লিটন তাঁকে এ ধরনের নির্দেশ দিতে পারে না। এই নিয়ে লিটনের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, পাইপ দিয়ে লিটন, অর্ক ও রঞ্জিৎ বেদম পেটায় দেবশেখরবাবুকে। তাঁর সারা পিঠে অজস্র কালসিটে পড়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রঞ্জিৎ ও অর্ক তাঁকে বারাসত হাসপাতালের ইমার্জেন্সির সামনে ফেলে পালায়। বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দেবশেখরের ঠাঁই হয় মর্গে। ওই রাতেই তাঁর পরিবারের লোকজন এসে দেহ সনাক্ত করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দ্রটির পরিকাঠামো চিকিৎসার উপযোগী ছিল কিনা বা প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা, এ সব খতিয়ে দেখতে উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, বারাসতের মহকুমাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাবরায় নেশা ছাড়ানোর এমন আরও দু’টি পুনর্বাসন কেন্দ্র সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য বলেন, “কী ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেন্দ্রটি চালাত, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের অনেক সংগঠন নানা কাজ করে। এ ধরনের চিকিৎসা চালাতে স্বাস্থ্য দফতরের যে অনুমতি লাগে, কেন্দ্রটি তা নিয়েছিল সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.