সচেতন স্কুল কোল পেতে ভরসা দিল নির্যাতিতাকে
মাথা নিচু করে ক্ষীণ কণ্ঠে মেয়েটি জানতে চেয়েছিল, “স্যার, আমি পরীক্ষাটা দিতে পারব তো?”
হইহই করে উঠলেন প্রধান শিক্ষক। বললেন, “কী বলছ তুমি! সব ঠিক হয়ে যাবে। পরীক্ষা তো দেবেই। ভবিষ্যতে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।”
গাইঘাটার শিমূলপুরে গণধর্ষিতা তরুণীর শুরু থেকেই সংশয় ছিল, কবে আবার স্কুলে যেতে পারবে। ভয় ছিল, অনেক প্রশ্ন, অনেক কৌতূহলের মুখোমুখি পড়তে হবে।
বুধবার স্কুলে সচেতনতা শিবির করে কিন্তু সকলেই অভয় দিলেন বছর উনিশের মেয়েটিকে। শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেই জানালেন, তাঁরা সব রকম ভাবে তার পাশে আছেন। স্কুলে যাতে তাকে কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকবেন সকলে। সহপাঠীরাও জানিয়ে দিল, পুরনো ঘটনা টেনে কথাই তুলবে না তারা। বন্ধুর আচরণই করবে।
গাইঘাটায় নির্যাতিতার স্কুলে সচেতনতা শিবির। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় শিমূলপুর আনন্দপাড়া নরহরি বিদ্যাপীঠে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীটিকে গত শুক্রবার রাতে তিন যুবক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তারা গোটা ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছে বলে মেয়েটি পুলিশকে জানিয়েছিল। পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং হয়নি বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু মেয়েটি যে ভাবে সাহসে ভর করে অভিযোগ জানিয়েছে, দোষীদের শনাক্ত করেছে, পুলিশকর্তারা তার তারিফ করেছেন।
এ দিন স্কুলের শিবিরে এসে গাইঘাটার ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এবং সিআই বিশ্বজিৎ পাত্র ছাত্রীটিকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি অন্য মেয়েদের উদ্দেশে বলেন, “একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক আছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, তার জন্য ছাত্রী এবং অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনও সন্দেহ হলেই আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে।” পুলিশকর্তাদের ফোন নম্বর জানিয়ে জেলা জুড়ে পোস্টার-ব্যানার টাঙানো শুরু হয়েছে বলেও তাঁরা জানান। মঙ্গলবারই গাইঘাটা থানায় মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন এসডিপিও (বনগাঁ) রূপান্তর সেনগুপ্ত। সেটি সকাল ৮টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মহিলা পুলিশকর্মীরা থাকবেন।
প্রধান শিক্ষক অলোক বিশ্বাস বলেন, “সব ছাত্রীরই চোখ-কান খোলা রাখা জরুরি। কেউ ডাকলেই সঙ্গে চলে না গিয়ে ভাবতে হবে। দরকারে অভিভাবকদের জানিয়ে যেতে হবে।” ওসি-র মতে, “মেয়ে কার সঙ্গে মিশছে, কার সঙ্গে কথা বলছে, তা নজর রাখা দরকার অভিভাবকদের।”
আগেই স্কুলের দিদিমণিরা ঘুরে এসেছিলেন ছাত্রীর বাড়িতে। তাঁদেরই এক জন চন্দ্রাণী বিশ্বাসের কথায়, “ও যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, তার জন্য সব রকম চেষ্টা করছি আমরা।” নির্যাতিতা তরুণীর এক প্রতিবেশিনী বলেন, “ও সকলকে সাহস জুগিয়েছে। প্রতিবাদ না করলে দুষ্কৃতীদের সাহস বেড়ে যায়।”
কী বলছে মেয়েটি? এ দিন সভায় সারা ক্ষণই মাথা নিচু করে চুপচাপ বসেছিল সে। পরে বলেন, “লোকলজ্জার ভয়ে এ সব কথা অনেকে বলতে চায় না। আমি বলেছি। সকলে যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, মনে হচ্ছে ঠিকই করেছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.