গরু পাওয়া গিয়েছে। মনে হয়, নম্বর ২৩৬। উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে নিয়ে যান তাড়াতাড়ি...। হঠাৎই গমগম করে উঠল তথ্যকেন্দ্রের চোঙা। ভোর থেকে কুয়াশায় মোড়া সাগরতটে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন ওড়িশার এক পুরোহিত। কেমন-কেমন ঠেকায় পথ আটকান সনৎ নস্কর নামে এক স্বেচ্ছাসেবক।
কী হয়েছে দাদা? জানা গেল, পুরোহিতের গরুর লেজ ধরে বৈতরণী পার হচ্ছিলেন পুণ্যার্থীরা। আচমকা বড় ঢেউ! ভেসে গেল গরু। কিন্তু যার লেজ ধরে বৈতরণী পার হওয়া যায়, সে কালাপানির ধাক্কায় ভেসে যাবে কোথায়? ঠিক আবির্ভূত হবে কোথাও না কোথাও।
পুরোহিত তাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কী করে আর খুঁজে পাবেন? ভাবতে-ভাবতে স্বেচ্ছাসেবক সনৎ ফিরছিলেন নিজেদের ক্যাম্পে। ফিরেই চক্ষু চড়কগাছ। ক্যাম্পের খুঁটিতে বাঁধা একটি গরু, যাকে খানিক আগেই সাগরতীরে পাওয়া গিয়েছে। তবে গায়ে নম্বর নেই। সেই ২৩৬ নয় তো? সনৎবাবু ছুটলেন তথ্যকেন্দ্রের ঘোষণা কেন্দ্রে। শুরু হয়ে গেল চোঙা ফোঁকা। ঘোষণা কানে গিয়েছিল পুরোহিতেরও। তিনি পড়িমরি দৌড়লেন স্বেচ্ছাসেবী ক্যাম্পের দিকে। তত ক্ষণে অন্য কিছু পুরোহিতও এসে হাজির।
কার গরু? প্রমাণ কই? শুনে এ ওর মুখের দিকে চায়। শেষে বলে দেওয়া হল, নিজের এলাকা থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের সার্টিফিকেট নিয়ে আসুন। তবে গরু মিলবে। ব্যস, সে গরুর আর এ যাত্রা বৈতরণী দূরে থাক, ক্যাম্পের ঘেরাটোপটুকুও পেরনো হল না। খুঁটোর গায়ে দাঁড়িয়ে সে বেচারা ছলোছলো চোখে খড় চিবিয়ে চলল।
বুধবার ভোরে ঘন কুয়াশায় সমুদ্র-আকাশ-বালিচর মিলেমিশে একাকার। তার মধ্যেও স্নান করলেন কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী। পুরীর শঙ্করাচার্যও ছিলেন। করবেন না-ই বা কেন? মাহেন্দ্রযোগ চলছে যে! ৬৫ বছর বাদে না কি এসেছে ২৪ ঘণ্টার এই বিশেষ যোগ। কপিলমুনি মন্দিরের প্রধান তথা অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদের অধ্যক্ষ মোহন্ত জ্ঞানদাসের বাখ্যা, “এই পুণ্য সময়েই ভগীরথের প্রদর্শিত পথে গঙ্গা এসে সাগরসঙ্গমে মিলিত হয়েছিল।”
যাঁরা ফিরতে চাইছেন, তাঁরা ফেঁসেছেন গেরোয়। ভোর থেকেই কুয়াশায় মুড়িগঙ্গায় ভেসেল সার্ভিস আর সাগর থেকে কচুবেড়িয়া ও চেমাগুড়ির বাস বন্ধ। বেলা ১০টা নাগাদ খুলল রাস্তা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এডিএম (সাধারণ) অশোক দাস বলেন, “এ দিনও চার পুণ্যার্থীকে নিয়ে সাগরের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে ওঠানামা করে কপ্টার। কাল পাঁচ জন আসা-যাওয়া করেছেন।” ধাক্কাধাক্কিতে সাগরের কে-১ বাসস্ট্যান্ডের কাছে মায়ের হাত থেকে ছিটকে বাসের চাকার নীচতে চলে যায় বছর সাতেকের অনন্যা মণ্ডল। বিশেষ গাড়ি ও লঞ্চের ব্যবস্থা করে তাকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়েছে। |