অস্ট্রেলীয় ওপেনের অসহ্য গরমের হাত থেকে বাঁচতে সেরেনা-ফর্মুলাই কি গ্রহণযোগ্য? বুধবার বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামের তৃতীয় দিন মেলবোর্ন পার্কের চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহিট) তাপমাত্রায় টেনিসমহলের আলোচ্য বিষয় যেন সেটাই!
কোর্টে যত তাড়াতাড়ি পার, ম্যাচ জিতে নাও। আর কোর্টের বাইরে যত বেশি পার, জল খাও। তার জন্য ম্যাচের আগের দিন রাত জাগতে হলেও জাগো!
বিশ্বের এক নম্বর এবং টুর্নামেন্টের শীর্ষ বাছাই হলেও সেরেনা উইলিয়ামসের বয়স বত্রিশ। এ দিন রড লেভার এরিনায় দুপুর বারোটার তীব্র রোদের মধ্যে তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে সেরেনা নিলেন মাত্র ৬৩ মিনিট। সার্বিয়ার ভেসনা ডোলোঙ্ককে মাত্র তিন গেম দিয়ে ওড়াতে। ৬-১, ৬-২। তার পর বলেছেন, “অনেকে সমস্যায় পড়লেও আমি কিন্তু এই গরমেও ‘কুল’ ছিলাম। থাকব না-ই বা কেন? খেললাম তো মেরেকেটে এক ঘণ্টা। আর শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য ম্যাচের আগের রাত জেগে যত পেরেছি জল খেয়েছি। সত্যি বলতে, রীতিমতো সন্ত্রস্ত ছিলাম যাতে শরীর কিছুতেই ডিহাইড্রেটেড হয়ে না পড়ে ভেবে ভেবে! তার জন্য মাঝরাত অবধি জেগে থাকতেও আমার কোনও সমস্যা নেই। ঠিকই তো আছি এই গরমে!”
|
সেরেনা উইলিয়ামস। গরমেও স্বাভাবিক। |
তবে সেরেনা-তত্ত্ব পুরোপুরি যে খেটেছে এ দিন তা-ও নয়। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৮ নম্বর বসনিয়ান দিমির জুমহুরের বিরুদ্ধে ১৩ নম্বর কোর্টে সকাল এগারোটার ম্যাচেই গরমে কাহিল হয়ে চতুর্থ সেটে অবসর নিয়ে ফেলেন ৩২ নম্বর বাছাই ইভন ডডিগ। ছ’ফুটের ক্রোট পরে বলেন, “এ রকম অসহ্য গরমে খেলা সম্ভব নয়। মনে হচ্ছিল, কোর্টেই মরে যেতে পারি!” কিন্তু গতকালের মতো এ দিনও উদ্যোক্তাদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, কোনও প্লেয়ারকে মেডিক্যাল টিমের সাহায্য নিতে হয়নি বুধবার।
প্লেয়ার-কর্তাদের চাপানউতরের মধ্যেই পুরুষ-মহিলা তারকাদের মধ্যে তৃতীয় রাউন্ডে উঠেছেন গত বারের চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ, তৃতীয় বাছাই ফেরার, বার্ডিচ, চেন্নাই ওপেন চ্যাম্পিয়ন ওয়ারিঙ্কা, গত বছরের উইম্বলডন সেমিফাইনালিস্ট, বিগ সার্ভার জার্জি জানোভিচ। ইভানোভিচ, সামান্থা স্তোসুর, লি না-রা। সেরেনা আবার অস্ট্রেলীয় ওপেনে মেয়েদের সিঙ্গলসে মার্গারেট কোর্টের সর্বাধিক ম্যাচ (৬০) জেতার রেকর্ড এ দিন স্পর্শ করলেন।
এ দিকে, মেলবোর্ন পার্কে আইসপ্যাক আর ‘আইসোটনিক’ ড্রিঙ্কস-এর সবচেয়ে চাহিদার দিনটা স্থানীয় টেনিসপ্রেমীদের কাছে নস্ট্যালজিকও হয়ে থাকল। সেন্টার কোর্ট এরিনার অন্যতম এক কোর্টে বুধবার নেমেছিল দুই কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় সিঙ্গলস তারকার ডাবলস জুটি। যাদের মিলিত বয়স ৭৫ বছর। ৩৩ বছরের লেটন হিউইটকে নিয়ে অবসরের ১৩ বছর পর ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে নামেন ৪২ বছরের প্যাট্রিক র্যাফটার। ১৯৯৭-৯৮-এর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন সিঙ্গলস এবং নিরানব্বইয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন র্যাফটারের গ্র্যান্ড স্ল্যামে পুনরাবির্ভাব অবশ্য ৭৩ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি। তাঁদের জুটি ৪-৬, ৫-৭ ডাবলস বিশেষজ্ঞ বুটোরাক-ক্লাসারের কাছে হারায়। |
অস্ট্রেলীয় ডেভিস কাপ দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন র্যাফটার রসিকতা করে বলেছেন, “আমার পুরনো সতীর্থরা অনেকেই বলেছিল, দয়া করে শরীরে ক্র্যাম্প লাগিয়ে বসো না। যাক, সেটা অন্তত ঘটেনি। তবে লেন্ডল একটা আপদ, বিরক্তিকর জীব। সারাক্ষণ গ্যালারি থেকে টিটকিরি দিয়েছে। ও এখন আবার মারের কোচ। বেচারার কোর্ট ছেড়ে বান্ধবী নিয়ে ঘোরার সুযোগও নেই।”
ডাবলসে তিন ভারতীয়ের জুটির মধ্যে মহেশ ভূপতি-রাজীব রাম এবং য়ুকি ভামব্রি-মাইকেল ভেনাস দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেও হেরেছেন দ্বিবীজ শরণ-ইয়েন লু। মিক্সড ডাবলসের সূচি অনুযায়ী লিয়েন্ডার-হান্টুকোভা বনাম মহেশ-ভেসনিনা দ্বিতীয় রাউন্ডেই। এবং সানিয়া-তেকাউ বনাম বোপান্না-স্রেবোটনিক লড়াই সেমিফাইনালে। |