এক নয়, এ বার একসঙ্গে জোড়া বিতর্ক।
এক দিকে যথারীতি মুরলী কার্তিক বনাম বঙ্গ সমর্থককুল। যেখানে রেল ক্যাপ্টেনের উদ্দেশ্যে সমর্থকদের ‘মুচমুচে’ বিশেষণ প্রয়োগ বা ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি আজও চলল। না, গত দিনের মতো শনিবার কার্তিককে নিয়ে দর্শকদের অসূয়া মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছয়নি। মাঠে শনিবার একটা সময় পর্যন্ত স্বয়ং পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ছিলেন। পুলিশের সংখ্যা বেশি ছিল। সমর্থক-রোষের পূর্বাভাস হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে ক্লাবহাউস গেট নয়, পাশের গেট দিয়ে টিম বাসে তুলে দেওয়া হল রেলকে। কার্তিককে তো ‘এসকর্ট’ করে তোলা হল। কিন্তু তাতেও বিতর্ক পুরোপুরি বন্ধ হল কোথায়? আবার লেগে গেল!
আজ মুখ্য চরিত্র কার্তিক নন। বাংলার ম্যানেজার দেবব্রত দাস। যাঁকে ঘিরে নতুন বিতর্ক, যাঁকে ঘিরে সিএবি বনাম ম্যাচ রেফারি।
ঘটনার সূত্রপাত, বাংলা ম্যানেজারের সর্বভারতীয় প্রচারমাধ্যমে বেরনো এক মন্তব্য। যেখানে তিনি কার্তিকদের বল-বিকৃতির সমালোচনা করে বসেন। এবং শনিবার বিভিন্ন কাগজে সেটা বেরোতে দেখে রেগে যান বাংলা-রেলওয়েজ ম্যাচের রেফারি রাজেন্দ্র জাডেজা। প্রথমে বাংলা ম্যানেজারকে ডেকে নাকি জানতে চান, কেন তিনি ব্যাপারটা নিয়ে মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন। কারণ সেটা বোর্ড নিয়মের পরিপন্থী। শোনা গেল ম্যানেজার তাঁকে বলেন যে, তিনি ও ভাবে কিছু বলতে চাননি। মিডিয়া ভুল লিখেছে। শোনা গেল ক্ষুব্ধ ম্যাচ রেফারি বাংলা ম্যানেজারকে নাকি তখন বলে দেন যে সেটা যদি হয়, তা হলে সমস্ত প্রচারমাধ্যমে লিখিত দিয়ে অস্বীকার করতে হবে। অভিযোগ উঠছে, বাংলা ম্যানেজারকে নাকি নানা ভাবে এ দিন ‘বিরক্ত’ করা হয়েছে। ম্যাচ চলাকালীন বাংলাকে তাতাতে গেলে তাঁকে নাকি বলা হয়েছে যে, চুপচাপ থাকুন। চেঁচাবেন না! |
লক্ষ্মীর বাংলায় অন্ধকার কি কাটবে?
|
যার পরপরই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সিএবি। বাংলা ম্যানেজারকে সমর্থন করে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, মিডিয়ায় ম্যানেজারের মুখ খোলা নিয়ে ম্যাচ রেফারি এত কথা বলছেন। কিন্তু রেল পেসার অনুরীত সিংহ যে ম্যাচের মধ্যেই এক সমর্থককে ‘গুলি করে ওড়ানোর’ হুমকি দিয়ে গেলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ম্যাচ রেফারি টুঁ শব্দ করলেন না। বলা হচ্ছে, ম্যাচ রেফারি যদি কড়া সিদ্ধান্ত নেন বাংলা ম্যানেজারের বিরুদ্ধে, তা হলে সিএবি-ও যা করার করবে। “বাংলা ম্যানেজার যা করেছেন, ঠিক করেছেন। দিল্লি থেকে রেল যা খুশি করে আসছে, এখনও করছে। ম্যাচ রেফারি সেগুলো নিয়ে ভাবুন না। আর মিডিয়ায় বললেও অন্যায়টা কী বলা হয়েছে?” হুঙ্কার দিচ্ছেন বোর্ডের ফিনান্স কমিটির সদস্য তথা সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। যিনি খোলাখুলি জানিয়ে দিচ্ছেন, সিএবি-ও চাইলে গুলি করার হুমকি প্রসঙ্গে অনুরীতের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর করতে পারত। কিন্তু অতিথি টিমের ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে করা অনুচিত হবে ভেবে সেটা করা হয়নি। “যদি দেখি আমাদের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা হলে আমরাও অনুরীতের বিরুদ্ধে এফআইআর করব। কারণ ও গুলি করার হুমকি দিয়েছে। আর রেলের পক্ষ থেকে সেটার প্রতিবাদও করা হয়নি এখনও। বোর্ডেও যা বলার বলব। শেষ দেখে ছাড়ব,” আরও বলে দিলেন বিশ্বরূপ। যে মেজাজ দেখে দেশের ম্যাচ রেফারিদের কেউ কেউ শঙ্কিত। বলা হচ্ছে, মুখ খোলা নিয়ে শাস্তি হলেও বড়জোর জরিমানা হতে পারে। ভাল হচ্ছে, মিটিয়ে নেওয়া। কারণ শুক্রবারের গণ্ডগোলের সময় নিরাপত্তা সে ভাবে ছিল না। বিক্ষুব্ধ ম্যাচ রেফারি যদি সেটাকে ইস্যু করে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ম্যাচ বন্ধও নাকি হতে পারে।
যা দাঁড়াচ্ছে, রবিবারের ইডেনে বাংলা বনাম রেল কোয়ার্টার যুদ্ধের চেয়ে এই ‘নতুন’ ম্যাচের উত্তেজনাও খুব কম হবে না! |