বাংলার চিন্তা জোড়া শত্রু আর পিচ
ঠিন ক্যালকুলাস বা দাঁতভাঙা মানসাঙ্ক নয়। রবিবার ইডেনে বাংলার কোয়ার্টার-যুদ্ধ জেতার সমীকরণটা খুব সহজ।
ওদের সাতটা চাই। হাতে ১৫৪।
আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাটা সাত দেখালেও ক্রিকেটীয় যুক্তি বলবে, ওটা দুই। দুই মানে অরিন্দম ঘোষ আর মহেশ রাওয়াত।
যাঁদের এক জন শনিবার বিকেল-বিকেল নেমে পড়লেন। ঘাড়ের উপর পর্বতসম চাপ নিয়েও অরিন্দম ঘোষকে এতটুকু বিচলিত দেখাচ্ছে না। নামছেন যখন, রেল মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ১০০-১ থেকে ১০৩-৩। নামলেন যখন, এক পাশে অশোক দিন্দা। এক পাশে সৌরভ সরকার। স্লেজিংয়ের ‘গার্ড অব অনার’ দিতে দিতে তাঁকে ক্রিজ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হল। কিন্তু রিখটার স্কেলে চাপের কম্পন যত উঠল, তত নির্ভরযোগ্য দেখাল অরিন্দমকে। যতটুকু সময় এ দিন খেললেন, টেনশনের বদলে ব্রাত্য বঙ্গসন্তানের ব্যাট থেকে বেরিয়েছে কপিবুক ডিফেন্স। বেরিয়েছে কপিবুক কভার ড্রাইভ। আর এক জন পরে নামবেন। রেল ব্যাটিং অর্ডারের ছয় বা সাত নম্বরে। তিনি মহেশ রাওয়াত।

তাই লক্ষ্মী-দিন্দার বোলিংয়ে কামব্যাক ঘটাল বাংলা, এটুকুই শনিবার বিকেল পর্যন্ত বলা যায়। ম্যাচ বের করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে, এতটা আশাবাদের কারণ এখনও নেই।
যার পিছনে একটা বড় ভূমিকা থেকে যাচ্ছে ইডেন বাইশ গজের। রঞ্জিতে সাধারণত এমন উইকেট দেখা যায় না, যেখানে চতুর্থ দিনের শেষেও বোঝা যাচ্ছে না ম্যাচ কোন দিকে যাবে। এ দিন শেষ দিকে পিচে কিছু ফাটল দেখা গিয়েছে, যেখানে বল পড়লে নাকি কাট করছে। রবিবার ওই রাফ-এ বল করে যেতে পারলে ভাল। পঞ্চম দিনের প্রথম ঘণ্টা কাজে লাগাতে পারলে ভাল। নইলে পরের দিকে কিছু করা মুশকিল হয়ে যেতে পারে। অশোক দিন্দারও মনে হচ্ছে, পিচটা স্লো হয়ে গিয়েছে। আর এমন উইকেটে মুরলী কার্তিকদের যা টার্গেট দিল বাংলা, তা অন্তত ৩০-৪০ কম। ঋদ্ধিমান সাহা দু’ইনিংসে আশির উপর করেছেন ঠিকই, কিন্তু এ দিন তাঁর উচিত ছিল টিমকে অন্তত তিনশো পার করিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে যখন তিনি জাতীয় টেস্ট স্কোয়াডের নিয়মিত সদস্য। মনোজ তিওয়ারি যদি বছরদুয়েক আগে বীরপ্রতাপ সিংহকে নিয়ে দিল্লির বিরুদ্ধে ১৮৭ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলতে পারেন, বাংলাকে তিন পয়েন্ট দিতে পারেন, তা হলে ঋদ্ধি নয় কেন? তাঁর সঙ্গে তো টেলএন্ডার নয়, ব্যাটসম্যান ছিল। লক্ষ্মীরতন শুক্ল শনিবার সকাল-সকাল যে বলটায় আউট হয়েছিলেন, সে বলটায় দশ জনের মধ্যে ন’জন ব্যাটসম্যান পুল মারতে যাবেন। কিন্তু ঋদ্ধি যে বলটায় আউট হলেন, সেটায় পুলের চেষ্টায় যাওয়ার কোনও দরকার ছিল না। রেল স্পিনার কর্ণ শর্মার একটা হাফ-ট্র্যাকারে লাইন মিস করে বোল্ড হলেন ঋদ্ধি। বাংলা তখন ২১৪-৭।

দিন্দার এই হুঙ্কার রবিবারও শুনতে চান কোচ-ক্যাপ্টেন।
শেষ পর্যন্ত যদি বাংলা ম্যাচটা জিতে সেমিফাইনালে উঠে যায়, তা হলে দিন্দার জন্য আলাদা উপহারের বন্দোবস্ত করা উচিত বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টের। দুধর্র্র্ষ বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংটাও যে ভাবে করছেন দিন্দা তাতে আর যা-ই হোক, তাঁকে টেলএন্ডার বলা যাচ্ছে না! মনে রাখতে হবে, ঋদ্ধির সঙ্গে তাঁর ৪৬ রানের পার্টনারশিপটা না থাকলে বাংলা প্রথম ইনিংসে লিড পেত না। ঠিক যেমন মনে রাখতে হবে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটে ছক্কা সমেত ২৪ বলে দিন্দার অপরাজিত ২৭। যেটা না থাকলে রেল আজই ম্যাচের রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে নেয়।
শনিবার শেষ আধ ঘণ্টার বোলিংয়ের সময় আবার যাঁকে ‘চেনা’ দিন্দা বলে মনে হল। রিভার্স করালেন, নীতিন ভিল্লে নামের রেল ব্যাটসম্যানকে কাঁদিয়ে ছাড়লেন, মনে হল তাঁর যে কোনও বলে বাংলা আর একটা ব্রেক-থ্রু পেতে পারে। যদিও মোক্ষমটা দিয়েছেন সেই এলআরএস। মুরলী কার্তিক দীর্ঘক্ষণ জ্বালাচ্ছিলেন বাংলাকে। ওপেন করলেন। হাফসেঞ্চুরিও। শিবশঙ্কর পালের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ কথাবার্তা চলল। এক বার প্যাডে বল আছড়ে পড়লেও আম্পায়ারের আঙুল উঠল না। রেল একশোও পেরিয়ে গেল। ওই সময়ই এলআরএস, ওই সময়ই তাঁর বিষাক্ত ডেলিভারিতে মুরলী এলবিডব্লিউ। আর ওই সময় থেকেই বাংলা আবার ম্যাচে।
বাংলা জিতবে?
দিন্দা বলে গেলেন এ রকম ম্যাচ আমরা কত জিতেছি!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা ৩১৭ ও ২৬৭ (ঋদ্ধি ৮১, লক্ষ্মী ৭৬, অনুরীত ৫-৭২)
রেল ৩১৪ ও ১১৭-৩ (কার্তিক ৫৬, দিন্দা ১-৪২, লক্ষ্মী ১-১৭)

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.