নায়ক থেকে হঠাৎ খলনায়ক!
সাতচল্লিশ দিন আগে আই লিগের ডার্বি জিতে সমর্থকদের কাঁধে চেপে ড্রেসিংরুম ফিরেছিলেন আর্মান্দো কোলাসো। লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও শনিবার কলকাতা লিগে নিয়মরক্ষার ডার্বি হেরে সদস্য, সমর্থকদের একটা অংশের কাছে ভিলেন সেই আর্মান্দোই। কেন তিনি ম্যাচের দিন চলে আসবেন বলেও এলেন না, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ লাল-হলুদ সমর্থকরা। কেউ কেউ তাঁর পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলে ফেললেন।
স্বয়ং আর্মান্দো যদিও এ দিন রাতে গোয়ায় তাঁর আগোসেইন গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বললেন, “আমি তো পারিবারিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্লাব কর্তাদের বলেই এসেছিলাম। শনিবার এয়ারপোর্টে সময় মতো পৌঁছতে না পারায় কলকাতা যেতে পারলাম না। বিমান উড়ে যায়।”
আপনার পেশাদারিত্ব কিন্তু সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে? এ বার একটু উত্তেজিত পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচ। “নিজের পেশাদার মানসিকতা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে পরীক্ষা দেব না। মাথায় রাখবেন কলকাতা লিগ ইস্টবেঙ্গলই জিতেছে।” কিন্তু এটা তো কলকাতা ডার্বি। আপামর বাঙালির সম্মান, আবেগ, মর্যাদা, ঐতিহ্যের লড়াই! এ বার চুপ আর্মান্দো। “পরে কথা বলা যাবে”, বলে ফোন কেটে দিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ।
কথা দিয়েও আর্মান্দোর এ দিন না আসা প্রসঙ্গে লাল-হলুদ কর্তারা সরাসরি কিছু না বললেও প্রকারান্তরে ক্ষুব্ধ। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “আমরা কিন্তু ওঁকে শনিবারে ছুটি দিইনি। এ ব্যাপারে কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হেরে লিগ জয় তেতো হয়ে যাওয়ায় মেজ-সেজ কর্তাদের কেউ কেউ ক্ষোভ উগরে দিলেন আর্মান্দোর উপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলছিলেন, “হাজার হাজার সমর্থকের আবেগের দাম নেই? কোচ পারিবারিক অনুষ্ঠানের কথা বলে বাড়িতে বসে রইলেন?” ফিসফাসটা বন্ধ হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার ড্রেসিংরুম থেকে বাইরে আসতে। জানতে চাওয়া হয়, এই ডার্বি নিয়মরক্ষার বলেই কি আর্মান্দো এলেন না? সাংবাদিকদের নিজের মোবাইলে এ দিন দুপুর দুটোয় আসা আর্মান্দোর এসএমএস দেখান তিনি। যেখানে ইস্টবেঙ্গল কোচের টেক্সট মেসেজ, “অপ্রত্যাশিত কারণে যেতে পারলাম না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।”
তবে শীর্ষকর্তাও মানতে নারাজ এ দিনের ডার্বির গুরুত্ব ছিল না। কোচের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “কোচ এলেই কি মোগা, লোবোরা গোল মিস করত না? ইস্টবেঙ্গল জিতে যেত?” পরক্ষণেই তিনি বলেন, “কোচ থাকলে ভালই হত। জানতে চাইব আসতে কেন সমস্যা হল। উত্তরে যুক্তি থাকলে মানবিকতার সঙ্গেই বিষয়টি দেখা হবে।”
তবে গোয়ায় আর্মান্দোর প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকেই এই ঘটনায় অবাক নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেম্পোর এক ফুটবলার ফোনে বললেন, “গোয়ায় লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গোয়া সুপার কাপের ম্যাচে আমরা চার গোলে হেরেছিলাম চার্চিলের কাছে। সেই রাতেই আর্মান্দো জমকালো পার্টি দিয়েছিলেন লিগ জয়ের সেলিব্রেশনে। কলকাতায় এমন হলে কী করতেন?”
ভাইচুং ভুটিয়া আবার ফোনে বললেন, “আর্মান্দো নিয়ে কোনও মন্তব্য নয়। তবে ইস্টবেঙ্গল তো লিগ জিতে আসল কাজটাই করে ফেলেছে। তার পর পোর্ট ট্রাস্ট না মোহনবাগানের কাছে হারল তাতে খুব একটা যায়-আসে না। গত বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগে স্পেনের হার নিয়ে কাউকে বলতে শুনেছেন? সবাই বলে স্পেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।” ভাইচুংয়ের মতো ব্যারেটোও আর্মান্দো নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। “আর্মান্দো পেশাদার কোচ। উনি যেটা ভাল বুঝেছেন, করেছেন।” |