লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে নবীন প্রজন্মের মন পেতে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। এ বার তার মোকাবিলায় রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে লড়াইতে নামছে কংগ্রেস। বেঙ্গালুরুতে শনিবার বিশেষ শিবির থেকে তারই প্রস্তুতি শুরু করে দিল কংগ্রেস। বলা ভাল, রাহুলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের নবীন ব্রিগেড।
দেশের তরুণ-যুবাদের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে কল্যাণ এবং উন্নয়নে কোন বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, তা বুঝে নিতেই বেঙ্গালুরুর প্যালেস গার্ডেনে এ দিন এই শিবির করা হয়। শিবির থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ ও প্রস্তাবকে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর। শিবিরের নামকরণও করা হয়েছে ‘ম্যানিফেস্টো ২০১৪’ বলে। শিবিরে রাহুল তো ছিলেনই, ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সচিন পায়লট, জিতেন্দ্র সিং, সাংসদ প্রিয়া দত্ত, যুব কংগ্রেস নেতা রাজীব শতাভ-সহ সমস্ত রাজ্যের কংগ্রেসের যুব প্রতিনিধিরা। ছিলেন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরাও। যোগ দিয়েছিলেন সম্প্রতি মুম্বইয়ে নির্যাতিতা সাংবাদিকও।
ইস্তাহার তৈরির আগে এ দিনের শিবির নিয়ে রাহুল বলেছেন, “আমাদের বিরোধীরা বিপণন ভাল করে, কাজ করে কম। আর আমরা প্রচুর কাজ করি, কিন্তু আমাদের বিপণন ক্ষমতা ভাল নয়।” বস্তুত, দলের নেতাদের বড় অংশই মনে করে, দেশের গরিব এবং কর্মহীন মানুষদের কল্যাণে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারে ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু ভোটে সেই সমস্ত প্রকল্পের প্রচার এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কংগ্রেস সম্পর্কে আর্কষণ বাড়াতেই এ বার পুরোদমে ঝাঁপিয়েছেন রাহুল ও তাঁর ব্রিগেড।
কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন, এ বার ভোটার তালিকায় নতুন ভোটার রেকর্ড সংখ্যায় বেড়েছে। সেই নতুনরা যে দলের দিকে ঝুঁকবে, সেই দলই লাভবান হবে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই তরুণ-যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়ানো নিয়ে এ দিন বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস শিবিরের সিংহভাগ জুড়ে আলোচনা হয়। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলা শিবিরে বিভিন্ন বক্তা জানান, গ্রামে গরিব, নিরক্ষর, অশিক্ষিত মানুষের জন্য ১০০ দিনের কাজ কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু তার বাইরে যে শিক্ষিত তরুণ-যুবরা আছে, তাদের কর্মসংস্থানে সমস্যা রয়েছে। বিশেষত কলা বিভাগে যাঁরা স্নাতক, তাঁদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। শিবিরে অনেকেই মত দেন, এই সমস্ত শিক্ষিত যুবকদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলা দরকার। শিবিরে কোনও কোনও বক্তা জানান, গ্রামাঞ্চল বা জেলা শহরেও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা অপ্রতুল। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় শিবিরে।
তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের বিষয়টি শিবিরের মূল আলোচ্য হয়ে উঠলেও মহিলাদের স্বনির্ভর করা এবং সংখ্যালঘু মহিলাদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কংগ্রেস বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন। মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার প্রসার নিয়ে তিনি লিখিত ভাবে দলের সহসভাপতি রাহুলের কাছে একটি প্রস্তাব দেন। মুসলিম মেয়ে হিসাবে তাঁকে কী ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া করতে হয়েছে, তা ওই প্রস্তাবে সাবিনা সবিস্তারে জানান। তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামবাংলায় যে সব কুসংস্কার, সামাজিক বাধা মুসলিম মেয়েদের স্বাভাবিক বিকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, সে সবের মধ্য দিয়েই আমি বড় হয়েছি। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সংখ্যালঘু মেয়েদের শিক্ষালাভের পথে অন্যতম প্রধান বাধা বাড়ি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপুল দূরত্ব এবং সেখানে যাওয়ার যানবাহনের অভাব।’ তিনি অনুরোধ করেছেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নের প্রকল্পগুলির রূপায়ণে নজরদারির ব্যবস্থা চালু হোক। শিক্ষার অধিকারকে নিশ্ছিদ্র করার দাবিও তিনি তুলেছেন।
মহিলাদের সংরক্ষণ নিয়ে আইন এখনও পাশ হয়নি। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এ দিন শিবিরে কংগ্রেস নেতারা জানান, তাঁরা এ বার ভোটে বেশি মহিলা প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দেশে নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মহিলা প্রতিনিধিরা।
মুম্বইয়ের নির্যাতিতা সাংবাদিক দাবি করেন, অত্যাচারিত নারীদের পুর্নবাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে এবং দোষীদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
|