ভর্তুকির সিলিন্ডার বাড়াতে সক্রিয় রাহুল

১০ জানুয়ারি
ক দিকে আম আদমিকে সুরাহা দিতে ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়াতে সক্রিয়তা। অন্য দিকে দুর্নীতি দমনে আরও আইন তৈরির উদ্যোগ। লোকসভা ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়াতে রাহুল গাঁধীর দেখানো এই পথেই হাঁটা শুরু করে দিল কংগ্রেস তথা ইউপিএ-সরকার।
আজ কংগ্রেসের কোর গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে সংসদের অধিবেশনে দুর্নীতি মোকাবিলায় বকেয়া ছ’টি বিল পাশ করানোর চেষ্টা হবে। কোর গ্রুপের বৈঠকের আগেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল। সেখানেও বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপির পক্ষে এর কোনওটিরই বিরোধিতা করা সম্ভব হবে না। প্রথমে রাজি না হলেও রাহুলের সক্রিয়তার পরে ভর্তুকিতে দেওয়া রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে তেল মন্ত্রক।
দাগি জনপ্রতিনিধি বিল নিয়ে বিতর্কের সময় থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নীতি দমনের মুখ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছেন রাহুল। এবং তিনি চাইছিলেন, লোকপাল আইনের পর দুর্নীতি দমনে অন্য ছ’টি বকেয়া আইনও দ্রুত কার্যকর করা হোক। তাঁর বক্তব্য ছিল, সংসদে বিল পাশ করানো সম্ভব না হলে অর্ডিন্যান্স জারি করে এই ছ’টি আইন কার্যকর করা হোক। তা হলে ইউপিএ-সরকার তথা কংগ্রেস যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের থেকেও দুর্নীতি দমনে বেশি সচেষ্ট, তা প্রমাণ করা যাবে। এ জন্য প্রয়োজনে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথাও ভাবা হচ্ছিল। লোকসভা নির্বাচনের জন্য এ বার পূর্ণাঙ্গ বাজেটের বদলে ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ হবে। আজ সকালে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের কোর গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই অধিবেশনেই এই ছ’টি বিল পাশ করানোর চেষ্টা হবে। এই তালিকায় রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে নাগরিকদের অভিযোগের সুরাহা, দুর্নীতি ফাঁস করা ‘হুইসল ব্লোয়ার’-দের সুরক্ষা, বিচার ব্যবস্থার দায়বদ্ধতার মতো বিষয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে বলেন, “ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের সময়ই সংসদে এই ছ’টি বিল আনা হবে।”
পাশাপাশি ভর্তুকিতে দেওয়া রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের বাড়িয়ে ১২টি করার জন্যও তেল ও অর্থ মন্ত্রকের উপর চাপ বাড়াচ্ছে কংগ্রেস। এত দিন তেলমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি এ নিয়ে প্রশ্ন শুনলেই উড়িয়ে দিতেন। রাজকোষ ঘাটতির কথা বলে এ বিষয়ে আপত্তি ছিল অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমেরও। কিন্তু আজ কোর গ্রুপের বৈঠকের পর উল্টো সুর শোনা গিয়েছে। মইলি বলেন, “সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।” এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন মইলি।
আজ কোর গ্রুপের বৈঠকে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো প্রসঙ্গটি ওঠার পরে পি সি চাকো, সঞ্জয় নিরুপম, মহাবল মিশ্রের মতো কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন সাংসদ তেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদেরও দাবি ছিল, সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো হোক। এই সাংসদদের যুক্তি, সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে মাসে অন্তত একটি করে সিলিন্ডার প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবেই বছরে ১২টি সিলিন্ডার ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া দরকার। এর আগে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরাও ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ইউপিএ-নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। কংগ্রেসের অনেকেই মনে করছেন, ভর্তুকিতে দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২টি করা হলে লোকসভা ভোটের আগে আম আদমিকে কিছুটা হলেও সুরাহা দেওয়া যাবে।
সহ-সভাপতি হিসেবে রাহুল যে দলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন, আজ নানা ঘটনায় তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি দমনে বিল ও গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে কোর গ্রুপে তাঁর ইচ্ছা মতো সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে বিকেলে দলের প্রার্থী বাছাই কমিটির প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাহুল। ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেস বরাবরই দেরি করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। কিন্তু রাহুল এ বার প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু করে দিয়েছেন। গত কালই বিভিন্ন রাজ্যের জন্য ভাগ করে করে দশটি বাছাই (স্ক্রিনিং) কমিটি তৈরি হয়েছে। এ দিন বৈঠকের আগে রাহুল বলেন, “কংগ্রেসের নির্বাচনী রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবে এই প্রার্থী বাছাই খুবই জরুরি। এই বাছাই কমিটি তৈরির আগে সংগঠনের প্রতিটি স্তরে মত বিনিময়, আলোচনা হয়েছে। যা অভূতপূর্ব। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য আমরা একটা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা চালু করছি।” নির্বাচনী রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবে আজ কংগ্রেসের কোর গ্রুপে জাঠেদের সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়। দলীয় নেতৃত্বের মতে, রাজস্থানে ভরাডুবির পর জাঠেদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু করলে রাজস্থান, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের লাভ হতে পারে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব ও দুর্নীতির দমনে ছ’টি বিল পেশ করা হলে বিজেপির পক্ষে তার বিরোধিতা করা কঠিন হবে। কারণ বিরোধিতা করলে বিজেপি-ই দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে যাবে। রাহুল আগেই এ বিষয়ে বিজেপির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার বদলে সংসদে এসে বিরোধীরা ওই বিলগুলি পাশ করাতে সাহায্য করুক। রাহুলের যুক্তি ছিল, শুধু লোকপাল বিলে দুর্নীতি দমন হবে না। এর জন্য সামগ্রিক কাঠামো প্রয়োজন।
লোকপাল বিলের পুরো কৃতিত্ব রাহুলকে দিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বাকি ছ’টি বিল পাশ হলে তার পুরো কৃতিত্বই যে রাহুলের ঝোলাতেই যাবে, সে বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত কংগ্রেসের নেতারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.