গত ১২ ডিসেম্বর জনসমক্ষে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল দেবযানীকে। তার পরে তাঁকে নগ্ন করে তল্লাশি করা হয় এবং জেলে মাদকাসক্তদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হয়। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক বাধে। ভারতও পাল্টা হিসেবে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ করে। এর পরেও অবশ্য তেমন নরম হওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি মার্কিন প্রশাসন। যা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিলই। তার মধ্যেই এ দিন দেবযানীকে হঠাৎ করে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। যার ফলে পাল্টা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতও। দেবযানীর সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে আমেরিকা, খানিকটা সেই পথেই মার্কিন দূতাবাসের এক বড় মাপের কূটনীতিককে ‘বহিষ্কারের’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। ওই অফিসারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে ভারত ছাড়ার জন্য। তাঁর নাম অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। ভারতের এমন কড়া পদক্ষেপে আমেরিকা ‘গভীর ভাবে দুঃখিত’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র।
ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন কম হয়নি। কিন্তু ভারতের তরফে এমন প্রতিক্রিয়া এর আগে মাত্র এক বারই দেখা গিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রের দাবি। ৩৩ বছর আগে তৎকালীন রাজনৈতিক কাউন্সেলর জর্জ গ্রিফিনকে বহিষ্কার করেছিল ভারত। দেবযানীর মতো একই ভাবে ভারতীয় কূটনীতিক প্রভাকর মেননকে হেনস্থা করেছিল আমেরিকা। যার জবাবে তখন গ্রিফিনকে বহিষ্কার করেছিল ভারত।
মার্কিন ওই অফিসারের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগ, দেবযানীর পলাতক পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডের পরিবারকে আমেরিকা পাঠানোর পিছনে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। সরকারি সূত্রে দাবি, সরাসরি ‘বহিষ্কার’ শব্দটির পরিবর্তে অফিসারকে ‘সরিয়ে নেওয়া হোক’ বলার পক্ষপাতী ভারত।
ভারতে ফিরে এলেও দেবযানীকে মার্কিন আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না, এমন কিন্তু নয়। আমেরিকার সরকারি আইনজীবী প্রীত ভারারা সাফ বলেছেন, কূটনৈতিক রক্ষাকবচ ছাড়া যখনই দেবযানী আমেরিকায় পা রাখবেন, সেই মুহূর্তে আদালতকে সেই তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর বিচার শুরু হবে।
দেবযানী এ দিন নিউ ইয়র্ক থেকে ভারতে ফেরার বিমানে ওঠার আগে সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আশা করি সেগুলোকে ভুল প্রমাণ করতে পারব।” আর এই ঘটনার প্রভাব যাতে তাঁর পরিবার, বিশেষ করে তাঁর সন্তানদের উপরে না পড়ে, সে দিকটিও নিশ্চিত করতে চেয়েছেন নিউ ইয়র্কে ভারতের এই প্রাক্তন ডেপুটি কনসাল জেনারেল।
দেবযানীর আইনজীবী ড্যানিয়েল আরশ্যাকের দাবি, পরিচারিকার বেতন সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেননি তিনি। এবং ওই পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডকে তিনি ঠিক মতোই বেতন দিয়ে এসেছেন। আরশ্যাক বলেছেন, “অল্প সময়ের চুক্তিতে আমেরিকায় কাজ করার জন্য এলেও ওই পরিচারিকা কিন্তু এই মিথ্যা অভিযোগ এবং ভুল তদন্তের সুযোগ নিয়ে নিজের পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেছেন।” তা ছাড়া আরশ্যাকের দাবি, “মার্কিন তদন্তকারী অফিসারেরা সব তথ্য খতিয়ে না দেখায় বড়সড় ত্রুটি রয়ে গিয়েছে তদন্তে। সেই গলদ দূর করতে আমরা যথাসম্ভব প্রমাণ দিতে পারব বলেই আশা করছি।”
এর মধ্যে আজই আবার মুখ খুলেছেন দেবযানীর পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ড। দেবযানীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হওয়ায় তিনি খুশি। পাচার-বিরোধী একটি সংস্থার মাধ্যমে এক বিবৃতিতে তাঁর দাবি, ‘আমেরিকায় কয়েক বছর কাজ করে পরিবারকে সাহায্য করব ভেবেছিলাম। তার পরে ভারতে ফিরে যাওয়ারও ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এত খারাপ হবে, ভাবিনি। আমাকে এত কাজ করতে হত যে, আমি ঘুম বা খাওয়ারও সময় পেতাম না। নিজের জন্য তো কোনও সময় ছিলই না।’ সঙ্গীতার দাবি, চিকিৎসার জন্য এক বার ভারতে ফিরে আসার অনুরোধ করলেও তাতে কান দেননি দেবযানী। তাঁর কথায়, “আমি অন্য ভুক্তভোগী পরিচারিকাদেরও বলব, তোমাদেরও অধিকার রয়েছে। কেউ যেন তোমাদের ঠকাতে না পারে।”
|