আচ্ছন্ন ভাবটা তখনও কাটেনি।
মুখ্যমন্ত্রী ঘরে ঢুকে সামনে দাঁড়াতেই প্রশ্ন করলেন, “তুমি কে?” ডাক্তাররা জানালেন, “মমতাদি আপনাকে দেখতে এসেছেন।” সুচিত্রা সেন আবেগভরে মমতার উদ্দেশে বলে উঠলেন, “তুমি আমার কে হতে?”
শুক্রবার বিকেলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ফের কমতে শুরু করেছিল। সন্ধের পরই সুচিত্রাকে দেখতে মধ্য কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ফের ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় আড়াই ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন। কিন্তু একটানা সুচিত্রার ঘরে থাকেননি। কিছুক্ষণ পরে বাইরে বেরিয়ে চা খান মুখ্যমন্ত্রী। তার পর ফের ঘরে ঢোকেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘরে থাকাকালীনই সুচিত্রার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা বাড়ে। আচ্ছন্ন ভাবটাও কেটে যায়। এক সময়ে তিনি নিজে চেয়ারে বসতে চান। জানতে চান, ক’টা বাজে। ঘরে তখন মেয়ে মুনমুন এবং নাতনি রাইমা ও রিয়া ছিলেন। সুচিত্রা কিছু সময় মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে থাকেন। মমতা তাঁকে বলেন, “আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। খিচুড়ি খেতে ভালবাসেন তো! সুস্থ হয়ে খিচুড়ি খাবেন!” সুচিত্রা তখন বলেন, “খিচুড়ি না, ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।”
যত অসুস্থই হোন, বেশির ভাগ সময়েই সজ্ঞানে থাকছেন সুচিত্রা। ফলে তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই চলতে হচ্ছে ডাক্তারদের। কৃত্রিম উপায়ে খেতে রাজি ছিলেন না। সন্ধের পর অবশ্য তাঁকে রাজি করানো যায়। স্যালাইনের মতো করে কিছুটা তরল খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পুরোদস্তুর ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন-এ থাকতে কিছুতেই রাজি নন সুচিত্রা। সায় দিচ্ছেন না মেয়ে মুনমুনও। কান্নাকাটি করছেন। ফলে দফায় দফায় নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরে রেখে আর ফিজিওথেরাপি করে বুকের কফ তুলতে হচ্ছে। তাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও কিছুক্ষণের মধ্যে ফের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ কী হবে, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। অক্সিজেন-নির্ভরতা একটুও না কমায় চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন। এ দিনও দিনভর অক্সিজেন চলেছে।
শুক্রবার দিনের বেলা প্রায় পুরো সময়ই বিছানায় শুয়েই কাটিয়েছেন। কথাবার্তাও বলতে চাননি। খাওয়াদাওয়া কার্যত করেননি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোনও খাবারে স্বাদ পাচ্ছেন না বলে খাবার ফিরিয়ে দেন মহানায়িকা। কৃত্রিম উপায়ে খেতে রাজি হননি সন্ধে পর্যন্ত। টানা তিন সপ্তাহ হাসপাতালে রয়েছেন। তার মধ্যে ১৩ দিন রয়েছেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। শরীরে অন্য কোনও সংক্রমণ ছড়িয়েছে কি না, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। প্রতিদিন তাঁর রক্তের একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। এ দিন রাতে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশে আনা গিয়েছে। তার পরে মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য সুব্রত মৈত্র বলেন, “ওঁর হৃদ্স্পন্দন এখন নিয়মিত। রক্তচাপ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে। আপাতত এটুকুই ভরসার কথা।” |