উত্‌সবের ডার্বি
অপরাজিত লিগ চাই, আজ এটাই স্লোগান লাল-হলুদে
ডার্বি না ঘরোয়া লিগের সাধারণ ম্যাচ? সাতসকালে ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে ঢুকতেই তাড়া করল প্রশ্নটা।
রাত পেরোলেই সামনে করিম বেঞ্চারিফার মোহনবাগান। কিন্তু কোথায় সেই মুখগুলো? বড় ম্যাচের আগের সকালে যারা ভিড় করে ক্লাব তাঁবুতে। জয়ের আকুতি থাকে প্রত্যেকের গলায়। বাহাত্তর ঘণ্টা আগে লিগ জয় কি লাল-হলুদ সমর্থকদের সেই আবেগ-উষ্ণতা ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিল? কিন্তু শনিবারের ডার্বিতে রসদের তো অভাব নেই!
নমুনা? পিকে-অমলের ম্যাচ বিশ্লেষণ। কলকাতা ময়দানে প্রথম বার আকাশ থেকে ক্যামেরায় ধরা পড়বেন দর্শক এবং ফুটবলাররা। স্টেডিয়ামে হাজির থাকবেন প্রসেনজিত্‌-পরমব্রত। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে ম্যাচ দেখবেন বিজয় মালিয়া।
কিন্তু কোথায় কী? লাল-হলুদের সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী এ দিন সকালে যখন মোগাদের অনুশীলন করাচ্ছেন, গ্যালারিতে তখন সংবাদমাধ্যম ছাড়া হাতে গোনা গোটা পাঁচেক তরুণ সমর্থক। যা দেখে জার্মানির ন্যুরেমবার্গ থেকে উড়ে আসা ফুটবল গবেষক ড্যানিয়েল মাদেরার প্রশ্ন, “কলকাতা ডার্বি নিয়ে শহর দু’ভাগ হয়ে যায় শুনেছি। কোথায় সেই রেড অ্যান্ড গোল্ড ব্রিগেড?” উত্তরটা অবশেষে দিলেন আলভিটো। সমর্থকদের না দেখতে পেয়ে তাঁর রসিকতা, “লিগ জিতে এত আনন্দ উত্‌সব করেছে যে ওদের আজ সকালে ঘুম ভাঙেনি। কাল বিকেলে লাল-হলুদ ফ্ল্যাগ নিয়ে সবাই মাঠে চলে আসবে।”

জেমস মোগা। প্র্যাকটিসে ফুরফুরে।
৩৫ বার লিগ ঘরে তুলে সমর্থকরা আনন্দে মাতোয়ারা হতেই পারেন। কিন্তু মোগা থেকে চিডি, অর্ণব থেকে অভিজিত্‌বড় ম্যাচের আগের দিন সকলেরই মনের ‘রিং টোন’মোহনবাগানকে হারিয়ে অপরাজিত লিগ চাই। এই থিমেই বড় ম্যাচের আগে দলকে তাতাচ্ছেন রঞ্জন। কোচ আর্মান্দো কোলাসো পারিবারিক ব্যস্ততায় গোয়াতে। বাড়ি থেকেই জানালেন, শনিবার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যুবভারতী যাবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে রামায়ণের ভরতের মতোই লাল-হলুদের রাজ্যপাট সামলাচ্ছেন তাঁর সহকারী। বলছেন, “আর্মান্দোর নির্দেশ মতোই ডার্বির স্ট্র্যাটেজি সাজাচ্ছি।”
ময়দানে শিশির ঘোষদের পরবর্তী সময়ে যে ক’জন বাঙালি ফরোয়ার্ড নিজেদের মনে করান, রঞ্জন তাঁদের মধ্যে পড়বেন। ন’য়ের দশকের শুরুতে ডার্বিতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দু’দলের জার্সি গায়েই গোল রয়েছে রঞ্জনের। জানেন, মোহনবাগানকে হারিয়ে অপরাজিত ভাবে লিগ জয়ের তৃপ্তি। সে ভাবেই দলকে বুঝিয়েছেন তিনি। নিট ফল, মোগা বলছেন, “গোল করে দলকে জেতাতে কে না চায়। আমিও শনিবার মাঠে নামলে গোলের জন্যই মরিয়া হব।” আর চিডি বলে গেলেন, “কীসের আত্মতুষ্টি? ডার্বি ইজ ডার্বি। আমার পকেটে গোল কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি।” কিন্তু ওডাফা ওকোলি যে ধীরে ধীরে ফর্মে ফিরছেন। লাল-হলুদ তাঁবুর প্রবেশদ্বারের সামনে ভেসে আসে উগা ওপারার গলা। যিনি সেই ২০০৯-এর ২৫ অক্টোবরের সেই ৩-৫ হারের পর শনিবার নেই লাল-হলুদ রক্ষণে। “গুরবিন্দর কিন্তু র্যান্টিকে আটকে দিয়েছিল।” ভিতরের খবর, ওডাফার জন্য থাকছে কড়া জোনাল মার্কিং। ওডাফার পাঁচ-সাত গজের মধ্যে দু’জন সর্বদা কড়া নজর রাখবেন বাগান গোল-মেশিনের ওপর।
সুপার স্যাটারডে

বিকেলে যুবভারতী।
চোটের কারণে মেহতাব-ভাসুম নেই। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এ দিন অনুশীলনে চোট পেলেন খাবরা এবং নওবা সিংহ। যদিও ইস্টবেঙ্গল শিবির আশাবাদী নওবার ব্যাপারে। গোলে গুরপ্রীত। ময়দানে মিথ, ওডাফার ত্রাস গুরবিন্দর। সেক্ষেত্রে পঞ্জাব দা পুত্তরের সঙ্গী রাজু বা অর্ণবের মধ্যে কোনও একজন। মাঝমাঠে লোবো, ডিকা, জোয়াকিম। আক্রমণে চিডির সঙ্গী সুয়োকা না মোগা তা ঠিক হবে শনিবার সকালে।
আর খাবরা? এ দিন অনুশীলনের পরই ছুটলেন হাসপাতালে। সাতাশিতে বড় ম্যাচের আগে এ রকম পরিস্থিতিতে লাল-হলুদ কোচ শ্যাম থাপা ইংল্যান্ডে কোর্স করতে যাওয়ায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। চিমার জোড়া গোলে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সে দিন জ্বরে কাবু সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে শিবপুরের বাড়ি থেকে তুলে এনে খেলিয়েছিলেন চিন্ময়। সেদিন সুদীপ থামিয়ে দিয়েছিলেন শিশিরদের।
হরমনজ্যোত্‌ খাবরা সুদীপ হতে পারবেন শনিবার? জার্নেল সিংহের ভক্ত ইস্টবেঙ্গলের সহ-অধিনায়ক বলছেন, “আনবিটন লিগ চাহিয়ে। আখরি দম তক কোশিস করুঙ্গা।”
অপরাজিত লিগ খেতাবটাই আজ করিমের দলের বিরুদ্ধে নিশানা এগারো জন লাল-হলুদ ফুটবলারের।

চার বছর পর ইস্ট-মোহনে বাংলার রেফারি
কলকাতা ডার্বি খেলাবেন এ বার বাংলার রেফারিরাই। চার বছর পর যুবভারতীতে এই ম্যাচে বাঁশি মুখে দেখা যাবে বঙ্গসন্তানদের। বড় দলগুলির তীব্র চাপের মুখে ডার্বিতে ভিন রাজ্যের রেফারিদের হাতে বাঁশি তুলে দিত আই এফ এ। এ বার তার বদল হচ্ছে। আই এফ এ সচিব উত্‌পল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আমাদের হাতে কোনও ফিফা রেফারি এত দিন ছিল না বলেই বাইরের রেফারি আনতে হত। ফিফা প্যানেলের রেফারি পেয়ে যাওয়ায় আমাদের রেফারিরাই ম্যাচ খেলাবেন।”
ওডাফা-মোগাদের ‘দৌরাত্ম্য’ সামলানোর জন্য ছয় জনের যে রেফারির প্যানেল তৈরি করেছে রেফারি সংস্থা, তাতে ফিফার এলিট প্যানেলের দু’জন রেফারি আছেন। এঁরা হলেন প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় ও সমর পাল। আর যে চার জন ডার্বি ম্যাচের রেফারির তালিকায় আছেন তাদের মধ্যে ফিফা সহকারী রেফারি প্যানেলের একজন রয়েছেনবিপ্লব পোদ্দার। জানা গিয়েছে এই তিন জনই আজ শনিবারের ম্যাচ খেলাবেন। এঁদের সঙ্গে প্যানেলে থাকবেন অজিত দত্ত, কুনাল সরকার এবং এক জন জুনিয়র রেফারি (নাম ঠিক হয়নি)। তবে প্রাঞ্জলদের সুবিধা, ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচের উত্তেজনা অনেক কমে গিয়েছে। টিকিট বিক্রির যা অবস্থা তাতে হাজার পঞ্চাশেক দর্শক শেষ পর্যন্ত আসবেন আশায় আই এফ এ কর্তারা।

ডার্বির ইতিহাসে এ বারের মতো পরিস্থিতিতে একবারই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ হয়েছিল।
আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মোহনবাগান মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের। ২০০০ সালের ২২ মার্চ
ওই ডার্বিতে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। ৩-১ গোলে। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেছিলেন জ্যাকসন এবং
জোড়া গোল ছিল ফাল্গুনী দত্তের। মোহনবাগানের গোলটি ছিল হোসে ব্যারেটোর।

শনিবারে কলকাতা লিগ

ইস্টবেঙ্গল: মোহনবাগান (যুবভারতী ৪-০০)

ছবি: উত্‌পল সরকার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.