উত্‌সব বানচালের ডার্বি
বাগান ড্রেসিংরুমে হঠাত্‌ সুব্রতকে দেখে বিরক্ত করিম
দূর থেকে দেখলে আচমকা ওডাফা ওকোলি মনে হতে পারে! ঘোলাটে আবহাওয়ার মধ্যে দীর্ঘকায় চেহারাটা অদ্ভূত ভাবে মিলিয়ে যাচ্ছিল! অস্পষ্ট ছায়ার মতো। কিন্তু মাঠের এক চক্কর ঘুরে বাগানের ঐতিহাসিক লনের সামনে আসতেই মোহভঙ্গ ঘটল। তিনি ওডাফা নন, তারই দেশওয়ালি বন্ধু ইচে।
টিম-মোহনাবাগান তখনও ড্রেসিংরুম ছেড়ে বেরোয়নি। বাগানের বিদেশি স্টপার ততক্ষণে মাঠে নেমে পড়েছেন বল পায়ে। চোখে-মুখে প্রবল আত্মবিশ্বাস। দেখে মনে হল, নিয়মরক্ষার ডার্বিতে ট্রফি জেতার সুযোগ না থাকলেও, মর্যাদার যুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের বিজয়রথ থামাতে প্রস্তুত। প্র্যাকটিসের পরে ইচে বলেও গেলেন, “আমি কাউকে ভয় পাই না। সামনে কে খেলছে সেটা নিয়েও ভাবি না। চিডি-মোগা তো আর রোনাল্ডো-বেকহ্যাম নয়। যে আলাদা করে চিন্তা করতে হবে।”
শুধু ইচে-ই নন, শুক্রবার সাত-সকালে মোহনবাগান তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল ডেনসন-কিংশুকদের ভিতরেও যেন একটা আগুন জ্বলছে। যেখানে লিগ হাতছাড়া হওয়ার আফসোস ভুলে নতুন বছরে নতুন উদ্যম নিয়ে দৌড়নোর প্রস্তুতিতে মজে সবাই। প্র্যাকটিসেও সেই দৃঢ় মানসিকতার ছাপ। ঐক্যবদ্ধতার ছোয়া। ওয়াহিদ সালি, পঙ্কজ মৌলার মতো তরুণরা মিস পাস করলেই করিম হাতে ধরে দেখিয়ে দিচ্ছেন। কোচের চোখ এড়িয়ে গেলে আবার ওডাফা-কাতসুমি ‘বড়দা’র মতো পাশে দাঁড়াচ্ছেন ছোট ভাইদের। ওডাফা বলছিলেন, “ডার্বির গুরুত্ব কখনও কমে না। ট্রফি জেতার সুযোগ হয়তো নেই। কিন্তু ম্যাচটা জিতলে ফেড কাপে বাড়তি অক্সিজেন নিয়ে যেতে পারব।”

ওডাফা ওকোলি। ডার্বির আগের মেজাজ। ছবি: উত্‌পল সরকার।
তবে সকালে যে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে প্র্যাকটিসে নেমেছিলেন ওডাফারা, সেটা দুপুর গড়াতেই থমথমে হয়ে গেল সুব্রত ভট্টাচার্যের হঠাত্‌ আবির্ভাবে। ফুটবল ছাড়ার পরে সম্ভবত এই প্রথম ডার্বির আগের দিন ক্লাব তাঁবুতে ঢুঁ মারতে দেখা গেল তাঁকে। বাগান-কোচ থাকার সময়টুকু বাদ দিলে আর কখনও যা ঘটেনি। আর তাতেই চরম বিভ্রান্তি বাগান-শিবিরে। সুব্রত বলছিলেন, “স্পোর্টস কাউন্সিলের একটা পদযাত্রা ছিল। পুলিশ টেন্ট থেকে নেতাজি ইন্ডোর পর্যন্ত। সেটা দেরিতে শুরু হওয়ায় ভাবলাম ক্লাবটা একবার ঘুরে যাই। ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধও করতে পারব।” এত বছর তো আসেননি? আচমকা কী ভেবে মত বদলালেন? সুব্রতর যুক্তি, “আমার ক্লাবে যাওয়ার জন্য কি কারও অনুমতি লাগবে? পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই একবার ঘুরে গেলাম।”
সুব্রত যা-ই বলুন না কেন, তাঁর হঠাত্‌ পরিদর্শনে বেশ বিরক্ত কর্তারা। শুক্রবার ওডাফা-কাতসুমিদের তাতাতে ক্লাব-তাঁবুতে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট টুটু বসু ও অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত। এবং প্র্যাকটিস শেষে করিম শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত থাকার ফাঁকেই সবার অজান্তে ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়েন সুব্রত। নতুন ফুটবলারদের সঙ্গে আলাপপর্ব সেরে কিংশুককে নিয়ে রসিকতাও করতে দেখা যায় তাঁকে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার বলছিলেন, “উনি কেন এসেছিলেন ঠিক জানি না। তবে এ রকম একটা ম্যাচের আগে এ ভাবে না আসলেই বোধহয় ভাল করতেন।”
তবে সবচেয়ে তাত্‌পর্যপূর্ণ হল, ডার্বি জিততে মরিয়া মোহনবাগানে নতুন বিতর্ক এখন সুব্রতকে নিয়ে। কোচের অনুমতি ছাড়া কেন সুব্রত বাগান-ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন? ক্লাব সূত্রের খবর, স্বয়ং টুটুবাবু নাকি সুব্রতর এই আচরণে ক্ষুব্ধ। সুব্রতর অবশ্য দাবি, “আমার সময়ও তো চুনীদারা ড্রেসিংরুমে ঢুকত। তাতে কী হয়েছে। আমার সময় করিম আসলেও ঢুকতে দিতাম।” ডার্বির আগের দিন কোনও বিতর্কে জড়াতে চাইলেন না করিম। তাঁর কথায়, “উনি আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন। আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে চলে যান।” সরাসরি কিছু না বললেও, ঘনিষ্ট মহলে বিরক্তি চেপে রাখতে পারেননি বাগানের মরক্কান কোচ। বাগানের এক ফুটবলার বলছিলেন, “করিমস্যার খুব রেগে গিয়েছিলান। ড্রেসিংরুমে যেখানে কর্তারাই অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারে না, সেখানে সুব্রত ভট্টাচার্যের আচরণে সমস্যা তো হবেই!”
এতে কোনও সন্দেহ নেই, শনিবার ডার্বি জিতে যে সম্মানরক্ষার যুদ্ধে সবুজ-মেরুন পতাকা উড়াতে চেয়েছিলেন করিম, তাতে হঠাত্‌-ই অস্বাভাবিক চাপ বাড়িয়ে তুলল সুব্রত ভট্টাচার্যের উপস্থিতি। তবু করিম গোটা পরিবেশকে শেষ পর্যন্ত শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন। চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ থাকলেও, সরাসরি প্রকাশ করলেন না। উল্টে তাঁর টিম নিয়ে বলে গেলেন, “শুরু থেকে ওডাফা-ইচে খেলবে। পঙ্কজ এবং ওয়াহিদ সালিকে ফেড কাপের আগে দেখে নিতে চাই।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.