শহর মেদিনীপুরে গণধর্ষণের ঘটনায় নতুন করে আর কেউ ধরা পড়েনি। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনায় অভিযুক্ত অন্য দু’জনের পরিচয় জানা এখনও যায়নি। শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক থাকায় ধর্ষিতা যুবতীর সঙ্গে শুক্রবারেও কথা বলতে পারেনি পুলিশ। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “তদন্ত যথাযথ ভাবে এগোচ্ছে। ধর্ষণে জড়িত অভিযোগে ধৃত মঙ্গল দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
ডেবরার বাসিন্দা ওই যুবতী মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। ওই যুবতীর পরিবারের অভিযোগ ছিল, ধর্ষণে অন্যতম অভিযুক্ত মঙ্গলের পরিবার তাঁদের উপরে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া কালগাঙের বাসিন্দা মঙ্গলের পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করলেও মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের পরে, ধর্ষিতার নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। আজ থেকে হাসপাতালে তাঁর শয্যার সামনে দু’জন মহিলা পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে। হাসপাতালে যুবতীর মা বলেন, “পুলিশ মোতায়েন হওয়ায় কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছি।”
মেদিনীপুর শহরে দিনেদুপুরে এক যুবতীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি। এই ঘটনার প্রতিবাদে ও শহরে মেয়েদের সুরক্ষার দাবিতে শুক্রবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দফায়-দফায় বিক্ষোভ দেখায়। মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবীদের একাংশ এ দিন আদালত চত্বরে মৌনী মিছিল করেন। ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং আদালত চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা।
গত মঙ্গলবার দুপুরে বছর তিরিশের ওই যুবতীকে মঙ্গল ও তার দুই সঙ্গী মেদিনীপুর আদালতের সামনে থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই দিন সন্ধ্যা নাগাদ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে জগন্নাথমন্দির চক এলাকায় নামিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করান। মঙ্গলবার রাতেই যুবতীর মা মঙ্গল-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। বুধবার মঙ্গলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
ডেবরার ওই তরুণীর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। সেই সূত্রে মেদিনীপুর আদালতে তাঁকে যাতায়াত করতে হয়। আদালত চত্বরেই ফটোকপি করার জেরক্স দোকান আছে মঙ্গলদের। ওই দোকানে ফটো-কপি করাতে গিয়েই মঙ্গলের সঙ্গে যুবতীর আলাপ হয় বলে পুলিশ তদন্তে জেনেছে। এমনকী, ওই যুবতী যে মঙ্গলবার আদালতে আসবেন, মঙ্গল তা আগে থেকেই জানত বলে পুলিশের দাবি। মঙ্গল এবং ওই যুবতীর মোবাইলের কল-লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মঙ্গলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দু’জনের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
এ দিন এসইউসি প্রভাবিত ‘নারী নিগ্রহ প্রতিরোধ কমিটি’ জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। গণধর্ষণে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা-সহ পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপিও দেয় তারা। কমিটির পক্ষে অনিন্দিতা জানা বলেন, “ঐতিহ্যমণ্ডিত মেদিনীপুর শহরে গণধর্ষণের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।” এ দিন এসইউসি-ও শহরে প্রতিবাদ সভা করে। মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার সামনে বিক্ষোভ-কর্মসূচি ছিল যুব কংগ্রেস এবং ছাত্র পরিষদের। প্রতিবাদ মিছিল করে ডিওয়াইএফ। বিজেপি-ও থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায়।
পুলিশের অবশ্য দাবি, মেদিনীপুর শহরে যথেষ্ট নাগরিক-নিরাপত্তা রয়েছে। যুব তৃণমূলের কর্মিসভায় যোগ দিতে এ দিন মেদিনীপুরে যান তমলুকের সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর আশ্বাস, “রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মানুষকে আশ্বস্ত করছি, এ ক্ষেত্রে কঠিনতম শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে পুলিশ।” |