|
|
|
|
মেয়েদের সুরক্ষা চেয়ে দিনভর সরব শহর
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পথে নেমে প্রতিবাদের পথ দেখিয়েছে কামদুনি, খোরজুনা। সেই পথে এ বার সামিল শহর মেদিনীপুরও। আদালতের সামনে থেকে এক যুবতীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের প্রতিবাদে শুক্রবার শহরে দফায় দফায় বিক্ষোভ-কর্মসূচি হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংগঠনের ব্যানারে হয় মিছিল, দেওয়া হয় স্মারকলিপি। আইনজীবীরাও আদালত চত্বরে মৌনী মিছিল করেন। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হন সকলেই।
ধর্ষিতা যুবতী এখনও মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের পরে ওই যুবতীর নিরাপত্তা নিয়ে এতটুকু ঝুঁকি নিতে রাজি নয় পুলিশ। এ দিন থেকে হাসপাতালে তাঁর শয্যার সামনে দু’জন মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় নতুন করে আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তদন্ত চলছে। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
প্রতিবাদের নানা মুহূর্ত। মেদিনীপুর
কোর্টে উকিলদের মৌনী মিছিল। |
শহরের বটতলা চকে স্বামী
বিবেকানন্দের
মূর্তির সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ। |
|
এ দিন সকাল থেকেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে শহর। জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি প্রভাবিত ‘নারী নিগ্রহ প্রতিরোধ কমিটি’। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, শহরে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলা-সহ পাঁচ দফা দাবিতে তারা স্মারকলিপিও দেয়। কমিটির পক্ষে অনিন্দিতা জানা বলেন, “ঐতিহ্যমণ্ডিত মেদিনীপুর শহরে গণধর্ষণের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। অথচ, পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার।” সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনও এ দিন শহরে বিক্ষোভ-কর্মসূচি করেছে। সংগঠনের নেত্রী ঝর্না জানা বলেন, “পুলিশ- প্রশাসন যে ভূমিকা পালন করছে, তাতে আমরা স্তম্ভিত। অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।” শহরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বিজেপিও। দলের কর্মীরা এদিন মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার সামনে বিক্ষোভ- কর্মসূচি করে। বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসের কথায়, “মেদিনীপুর শহরের বুকে দিনেদুপুরে এমন ঘটনা ঘটল, এটা ভাবতেই কেমন লাগছে। আমরা ওই তরুণীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। পাশাপাশি, ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” থানার সামনে বিক্ষোভ- কর্মসূচি করে যুব কংগ্রেস- ছাত্র পরিষদও। যুব কংগ্রেসের মেদিনীপুর লোকসভা সভাপতি পার্থ ভট্টাচার্য বলেন, “শহরে ফের চুরি- ছিনতাই- নারী নির্যাতন বাড়ছে। এটাই উদ্বেগের। অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে পুলিশকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।” তাঁর কথায়, “বছর দেড়েক আগে শহরে এক স্কুলছাত্রের রহস্যমৃত্যু হয়। দুস্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে ওই ছাত্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। অথচ, এখনও রহস্যমৃত্যুর কিনারা হয়নি। ভাবা যায়!” সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতিও এদিন জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ- কর্মসূচি করেছে। অন্যদিকে, মেদিনীপুর আদালত চত্বরে এদিন মৌন মিছিল করেন একাংশ আইনজীবী। তাঁরা আদালত চত্বরেও নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। |
|
কোতয়ালি থানার সামনে বিক্ষোভ। |
আইনজীবী শান্তি দত্তের কথায়, “মেদিনীপুর শহরে বহু মানুষ আসেন। যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। পুলিশের উচিত, কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। না হলে যারা খারাপ কাজ করছে, তারা উৎসাহিত হবে।” শুক্রবার মেদিনীপুরে দলের এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন তমলুকের সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনার নিন্দা করেন তিনিও। তাঁর কথায়, “নিন্দনীয় ঘটনা। এটা ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। আগেও এ রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মানুষকে আশ্বস্ত করছি, এ ক্ষেত্রে কঠিনতম শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে পুলিশ। আগে সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসে বসে বিচার হত। মানুষ পুলিশের কাছে যাওয়ার সুযোগই পেতেন না। এখন সেই পরিস্থিতি নেই।” ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের। ওই দিন দুপুরে মেদিনীপুর আদালত চত্বরের সামনে থেকে ওই যুবতীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ধর্ষিতা যুবতীর মা মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়। বুধবার মঙ্গল দাস নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার সঙ্গে আরও দু’জন জড়িত। তাদের নাম কী জানা গিয়েছে? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “তদন্তে ইতিমধ্যে আরও কিছু তথ্য সামনে এসেছে। আমরা সমস্ত কিছু মিলিয়ে দেখছি। আরও কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে আসার পর এ নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব হবে।” জানা গিয়েছে, আগের থেকে শারিরীক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও ওই যুবতী সে ভাবে কথা বলছেন না। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হলে তদন্তকারী অফিসার তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। তখন তদন্ত আরও গতি পাবে। ওই আধিকারিকের কথায়, “কিছু প্রশ্নের উত্তর ওই যুবতীর কাছ থেকে জানা খুব জরুরি।” পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের উপর নজর রেখেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ নিজেই। তবে, এ সবকে ছাপিয়ে সামনে আসছে শহরের নিরাপত্তার দিকটি। পুলিশের অবশ্য আশ্বাস, শহরে নজরদারি থাকে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|