|
|
|
|
যুব তৃণমূলের কর্মিসভায় কাজের হিসেব তলব শুভেন্দুর
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কর্মিসভায় শেষ কবে শুভেন্দু অধিকারীকে এই মেজাজে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না তাঁর দীর্ঘ সময়ের সঙ্গীরাও। কখনও ধমক দিয়ে বলছেন, “সভায় না এলে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। খেয়ালখুশি না কি?” কখনও সতর্ক করে বলছেন, “সিপিএম কিন্তু বেঁচে আছে। বেঁচে আছে বলেই ২ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সভা করবেন। আসার পথেও দেখলাম, এসএফআই অবস্থান-বিক্ষোভ করছে।” আবার কখনও দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, “কাজ না করলে পদ ছেড়ে দিন। অনেক নতুন ছেলে রয়েছে। না ছাড়লে জেলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।”
শুক্রবার মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর হলে কর্মিসভার আয়োজন করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যুব তৃণমূল। উপলক্ষ্য, আগামী ৩০ জানুয়ারির বিগ্রেড সমাবেশের প্রস্তুতি। প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। কর্মিসভায় বিগ্রেড সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার থেকে অনেক বেশি সময়ে ধরে সংগঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে ভাবে জেলায় যুব সংগঠন চলছে, তাতে তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। বিভিন্ন এলাকায় কর্মীদের মধ্যে আত্মতুষ্টি আসতে শুরু করেছে। আগামী দিনে যুব সংগঠনের পক্ষে যা ক্ষতিকর। এ দিন কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো প্রমুখ। |
|
শহরের বিদ্যাসাগর হলে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মাল্যদান শুভেন্দুর। —নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন বেলা একটা নাগাদ সভায় আসেন তমলুকের সাংসদ। মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিয়ে একেবারে শিক্ষকের ভূমিকায় আলোচনা শুরু করেন। উপস্থিত সকলে বুঝে যান, এটা আর পাঁচটা সভার থেকে আলাদা। প্রথমে শুভেন্দু জানতে চান, “মোহনপুরের যুব সভাপতি কোথায়?” জানা যায়, তিনি আসেননি। তখন শুভেন্দু বলেন, “কেন আসেননি ব্লক যুব সভাপতি? না এলে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। খেয়ালখুশি না কি? এ রকম সংগঠন আমরা করি না।” দাঁতন ২ ব্লকের এক যুবকর্মীকে তিনি বলেন, “তুমি প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খারাপ কথা বলছ কেন? দলের সমস্যা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হবে। আমার কাছে সব খবর আছে। মনে রাখবে, সিপিএম কিন্তু বেঁচে আছে।” একে একে জেলার ২৯টি ব্লকের যুব নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন শুভেন্দু। বিস্তারিত কাজের হিসেব নেন। জানতে চান কী কর্মসূচি হয়েছে, কী কী পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ দিনের আলোচনায় দলের কোন্দলও উঠে আসে। জানা যায় কেশপুর, লালগড়, কেশিয়াড়ি, ডেবরা, পিংলা, গড়বেতা ১-সহ বিভিন্ন ব্লকে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব রয়েছে। সভা থেকেই কয়েকজন ব্লক যুব সভাপতিকে সতর্ক করে দেন শুভেন্দুবাবু। গড়বেতা ১ ব্লকের যুব সভাপতিকে শুভেন্দু বলেন, “কাজ না করলে পদ ছেড়ে দিন। আমাদের অনেক নতুন ছেলে রয়েছে। না ছাড়লে জেলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।” যাঁরা ভাল কাজ করছেন, তাঁদের প্রশংসাও করেন তৃণমূল সাংসদ। লালগড়ের (বিনপুর-১) যুব তৃণমূল সভাপতি তন্ময় রায়কে শুভেন্দু বলেন, “বনুবাবুর (দলের ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়) তোমার উপর ক্ষোভ আছে। মিলেমিশে কাজ করো।” শালবনির যুব সভাপতির উদ্দেশেও তাঁর বার্তা, “নেপালদা (দলের ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহ) ক্ষুব্ধ কেন? নেপালদাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করো।” যুব তৃণমূলের সদর ব্লক সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ অবশ্য নিজেই স্বীকার করেন, “কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব আছে। আমি সমস্যার কথা জেলা সভাপতিকে (শ্রীকান্ত মাহাতো) জানিয়েছি।” সংগঠনের মেদিনীপুর শহর সভাপতি স্নেহাশিস ভৌমিককে নির্দেশ দেন, “যে সব কর্মসূচি হবে, তাতে কাউন্সিলরদের যুক্ত করতে হবে।”
শুক্রবারের সভায় কিছুটা আক্রমণাত্মকই ছিলেন তমলুকের সাংসদ। উপস্থিত কর্মীদের তিনি বুঝিয়ে দেন, পদ আঁকড়ে বসে থাকার দিন শেষ। পদে থাকতে হলে কাজ করতে হবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং কাজের হিসেব নেওয়ার পর নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শুভেন্দু বলেন, “শাখা সংগঠন না বাড়লে মূল সংগঠন বাড়বে না। ২০১১ সালে যে ভূমিকা ছিল, এখন সংগঠনকে সেই ভূমিকা নিতে হবে। একটা সিস্টেমে চলতে হবে। কেউ ফেল করলে তাঁকে পরিবর্তন করতে হবে।”
হঠাৎ কেন এমন সভা? সভাস্থল ছেড়ে বেরোনোর আগে শুভেন্দুর জবাব, “এটা আমাদের সাংগঠনিক সভা ছিল। তাই সংগঠনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|