মধ্যমগ্রামের ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত। নির্যাতিতার দেহ নিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের তরফে। এই আবহে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের নবান্ন অভিযান ঘিরে অনভিপ্রেত বিতর্ক এড়াতে চাইছে প্রধান বিরোধী দল। পাছে সে দিন অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটে লোকসভা ভোটের আগে দল আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে, এই আশঙ্কায় নবান্ন অভিযান ঘিরে অশান্তি এড়াতে চাইছে সিপিএম। তাই পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত ধর্মতলাতেই ৮ জানুয়ারির নবান্ন অভিযান শেষ করতে চায় তারা। গঙ্গা তো দূরের কথা, সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা ওই দিন দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ধারে-কাছেও যাবেন না!
গৌতম দেবের নেতৃত্বে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম দু’মাস আগে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। ৮ তারিখ তিন লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে দাবি করে বৃহস্পতিবার গৌতমবাবু বলেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিযানের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। তাই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেই সব কিছু ঠিক করা হচ্ছে।” সভাস্থল থেকে সিপিএমের প্রতিনিধিদল নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে দাবিপত্র দিতে চায়। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।
তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতার ডাকে ১৯৯৩ সালে মহাকরণ অভিযানে অশান্তি হয়েছিল। পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন কংগ্রেস কর্মী। রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে আলিমুদ্দিনে বসে গৌতমবাবু নবান্ন অভিযানের ডাক দেন। এর প্রস্তুতি হিসাবে জেলা জুড়ে ৪০টির বেশি সভা করেছে সিপিএম। সংগ্রহ করেছে আড়াই কোটি টাকা। অভিযানের দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ বাম নেতৃত্ব সভাও করবেন। সব মিলিয়ে লোকসভা ভোটের আগে ধর্মতলায় মিনি ব্রিগেড করে কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে চান গৌতমবাবু। কেন ধর্মতলাতেই নবান্ন অভিযান শেষ করা হচ্ছে? জবাবে গৌতমবাবু বলেন, “মহাকরণ অভিযান মানে মহাকরণের মধ্যে প্রবেশ করা নয়! অনেক আগেই মিছিল আটকে দেওয়া হয়। সেই রকম নবান্ন অভিযানও প্রতীকী।” অভিযানের জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নেপালদেব ভট্টাচার্যকে। তিনি জানান, পুলিশ সহযোগিতা করছে। পুলিশ কোনও ভাবেই বাম মিছিলকে গঙ্গার উপরে সেতু পেরোতে দিতে রাজি নয়। পরিস্থিতি মাথায় রেখে রানি রাসমণিতেই অভিযান শেষ করার সিদ্ধান্ত বলে সিপিএম সূত্রে ব্যাখ্যা।
ওই দিন উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ৫০টি শহিদ পরিবারকে এক লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া, কামদুনির মানুষের পাশে দাঁড়াতে মৃতার পরিবার ও প্রতিবাদী মঞ্চকেও এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে গৌতমবাবু জানান। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা, গায়ের জোরে পুরবোর্ডের দখলের বিরুদ্ধে এই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। |