ঝাড়খণ্ড থেকে কয়লা তোলার ছাড়পত্র পেল রাজ্য
নিটি হাতে এসেছিল আট বছর আগে। এতদিনে সেখান থেকে কয়লা উত্তোলনের ছাড়পত্র মিলল।
পশ্চিমবঙ্গের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা জোগানের জন্য ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলার পাচোয়াড়া (উত্তর) কয়লা ব্লকটি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক। কিন্তু পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধের প্রশ্ন তুলে ওই ব্লকে খননের কাজে অনুমতি দেয়নি ঝাড়খণ্ড সরকার। শেষ পর্যন্ত কয়লা মন্ত্রকের চেষ্টায় জট খুলেছে। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড সরকার চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছে, পাচোয়াড়া থেকে কয়লা তুলতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ঝাড়খণ্ডের এই ঘোষণার পরে রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা জানান, এর ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার চাহিদা মেটাতে কোল ইন্ডিয়ার উপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমবে। পাশাপাশি, নিজেদের কয়লা ব্যবহার করা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের অধীন তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির জন্য বছরে দুই কোটি টনের মতো কয়লা লাগে। এর মধ্যে কোল ইন্ডিয়া দেয় এক কোটি ৬০ লক্ষ টন। ২০ লক্ষ টনের মতো কয়লা আসে নিগমের বিভিন্ন খনি থেকে। বাকি ১৫-২০ লক্ষ টন কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সম্প্রতি রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে আর কয়লা আমদানি করা হবে না। নিজেদের কয়লা খনি থেকেই কয়লার চাহিদা মেটানো হবে। ঝাড়খণ্ডের পাচোয়াড়া ব্লক সেই বকেয়া মিটিয়ে নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা জোগান দিতে সক্ষম হবে বলে বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি।
নিগম সূত্রে খবর, পাচোয়াড়া খনিটিতে প্রায় ৫০ কোটি টন কয়লা মজুত রয়েছে। সেখান থেকে বছরে কমপক্ষে এক কোটি ৫০ লক্ষ টনের মতো কয়লা তোলা যাবে। এর পাশাপাশি বীরভূমে দেওচা-পচাঁমি নামের ব্লক থেকেও কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। ফলে আগামী দিনে রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হলে তার জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা পেতে কোল ইন্ডিয়ার মুখাপেক্ষী হতে হবে না। লাগবে না বিদেশের দামি কয়লাও।
কিন্তু কয়লা ব্লক হাতে পেলেও কেন খননের অনুমতি পেতে আট বছর লেগে গেল? রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা জানান, প্রায় ১২০০ হেক্টর জমি নিয়ে পাচোয়াড়া খনিটি। এর মধ্যে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে জঙ্গল ও আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। জঙ্গল কেটে কয়লা তোলার ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছিল ঝাড়খণ্ড সরকারের পরিবেশ দফতর। আর সেই কারণেই তারা খননের অনুমতিও দেয়নি। ঝাড়খণ্ড সরকারের আপত্তির দিকটি খতিয়ে দেখতে কয়লা মন্ত্রক একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে। কমিটির সদস্যরা পাচোয়াড়ায় গিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে মন্ত্রককে রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্ট নিয়ে ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্র। তার ভিত্তিতে পাচোয়াড়ার ব্লক থেকে কয়লা তোলার অনুমতি দিয়ে রাজ্যকে চিঠি দেয় ঝাড়খণ্ড সরকার। ঝাড়খণ্ডের খনিজ দফতরের সচিব বি কে তিওয়ারি বলেন, “পরিবেশ সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারণে কয়লা তোলার অনুমতি দেওয়া যায়নি। এখন সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কয়লা তোলার জন্য সরকারি অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।”
সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যকে আকরিক লোহা দেওয়ার ব্যাপারে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা সরকার বারবার আপত্তি তুলেছে। এই কারণেই জিন্দল গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্প চরম সমস্যায় পড়েছিল। এই প্রকল্প নিয়ে ঝাড়খণ্ড সরকারের বক্তব্য ছিল, আকরিক লোহা পেতে হলে তাদের রাজ্যে ইস্পাত প্রকল্প গড়তে হবে। ঝাড়খণ্ড সরকারের এই নীতির বিরোধিতা করেছিল পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের কাছে জাতীয় খনিজ নীতি রূপায়ণের দাবি জানানো হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে পাচোয়াড়ার খনি নিয়ে এত দিন চিন্তায় ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তারা।
রাজ্য ঠিক করেছে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পাচোয়াড়াতে মাটি কাটার কাজ শুরু করবে বেঙ্গল এমটা (সরকারি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম, ডিপিএল এবং বেসরকারি সংস্থা ইস্টার্ন মিনারেলস অ্যান্ড ট্রেডিং এজেন্সি-র যৌথ সংস্থা)। আর সামনের গ্রীষ্মেই ওই খনি থেকে কয়লা অল্প পরিমাণে কয়লা তোলা শুরু হবে। রাজ্যের লক্ষ্য, ২০১৫ সালের গ্রীষ্ণের আগে ওই খনি থেকে পুরোদমে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু করা। এই প্রকল্পে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। বিদ্যুৎ কর্তারা জানান, পাচোয়াড়ার সিংহভাগ কয়লা যাবে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কারণ সাগরদিঘিতে ৫০০ মেগাওয়াট করে মোট ১০০০ মেগাওয়াটের দু’টি নতুন ইউনিট নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি, বক্রেশ্বরে কোল ইন্ডিয়ার কয়লার জোগান নিয়ে সমস্যা থাকায় সেখানেও পাচোয়াড়ার কয়লা পাঠানো হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.