ছিলেন সংবাদমাধ্যমের এই অফিসের সর্বেসর্বা। সাংসদ কুণাল ঘোষ এ বার সেই অফিসেই ঢুকলেন অভিযুক্ত হিসেবে, পুলিশের সঙ্গে। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়ার পরে বৃহস্পতিবারেই প্রথম কুণালবাবুকে নিয়ে ওই অফিসে গেল পুলিশ। চালাল তল্লাশিও। যদিও তেমন নথিপত্র উদ্ধার করা যায়নি। রাজ্যসভার সদস্য কুণালবাবুকে তৃণমূল ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করেছে। এ দিনই সারদার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে একটি মামলায় জামিন দিয়েছে আদালত।
সারদা সংস্থায় আমানতকারীদের বিপুল অর্থ তছরুপের বিষয়টি সামনে আসার পরে শুধু বাংলা নয়, দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তার পরেই ওই গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি খবরের চ্যানেলের কর্মীরা পার্ক স্ট্রিট থানায় কুণালবাবু-সহ সারদা-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং টিডিএস ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলায় ২৬ ডিসেম্বর কুণালবাবুকে নিজেদের হেফাজতে নেয় কলকাতা পুলিশ। সেই থেকে তাঁকে পার্ক স্ট্রিট থানায় রেখে জেরা করা হচ্ছে।
এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ কুণালবাবুকে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে ওই সংবাদ চ্যানেলের সদর দফতরে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই চ্যানেলের প্রাক্তন গ্রুপ সিইও কুণালবাবুর ঘর এবং অন্যান্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সাংসদকে সঙ্গে নিয়েই অফিসের আনাচেকানাচে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। মিনিট পনেরো তল্লাশি চালানোর পরে ওই অফিস থেকে বেরিয়ে আসে পুলিশ। ওই চ্যানেলের অফিসে যাওয়ার আগে তদন্তকারীরা এ দিন সাংসদের সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতেও তল্লাশি চালান।
লালবাজারের কর্তারা জানান, তদন্তে বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করার জন্যই এ দিন কুণালবাবুকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে এবং পুরনো অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। যদিও তেমন কোনও কাগজপত্র বা তথ্য মেলেনি বলেই জানাচ্ছে পুলিশ। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, কর ফাঁকি কিংবা পিএফের টাকা তছরুপ নিয়ে জেরার মুখে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের দিকেই আঙুল তুলেছেন কুণালবাবু। ওই সাংসদ পুলিশকে বলেছেন, তিনি সংস্থার কোনও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বরং নিজের বেশ কিছু টাকা তিনি সারদার কর্ণধারকে দিয়েছিলেন। কুণালবাবুর বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট থানায় চ্যানেল-কর্মীদের মামলা তো চলছেই। তা ছাড়াও ভবানীপুর থানায় মামলা আছে ওই সাংসদের বিরুদ্ধে। তাঁকে সেই মামলাতেও জেরা করা হতে পারে।
সময়মতো চার্জশিট দিতে না-পারায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন সারদার ডিরেক্টর দেবযানীকে। তবে সারদা-প্রধান সুদীপ্তের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত। ‘মানি লন্ডারিং’ আইনে সারদা-কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইডি। দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা এ দিন জানান, তদন্ত শুরু করলেও ইডি-র অফিসারেরা এখনও তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেননি। আদালতে এই বিষয়টিই তুলে ধরেন তিনি। ইডি-র তরফে জানানো হয়, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ বিভিন্ন মামলায় দেবযানী-সুদীপ্তকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ায় ঠিকমতো জেরা করার সুযোগ মিলছে না। তাই চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে। |