মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের জমি দুর্বল করার প্রয়াস অব্যাহত রাখল তৃণমূল।
অধীর-দুর্গে আঘাত হানার কাজ তৃণমূল শুরু করেছিল মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে নিজেদের দলে টেনে। সেই ধারাতেই দলত্যাগ করে বৃহস্পতিবার তৃণমূলে যোগ দিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের তিন সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের এক সদস্য, তিন জন কর্মাধ্যক্ষ-সহ খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির এবং ওই ব্লকের তিন প্রধান-সহ চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েক জন সদস্য।
ওই কংগ্রেসত্যাগীদের এ দিন তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এই দলত্যাগকে কেন্দ্র করে এ দিন তৃণমূল ভবন ছিল সরগরম। দলত্যাগী জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সঙ্গে তাঁদের অনুগামী অসংখ্য মানুষ এসেছিলেন তৃণমূল ভবনে। ভিড়ের বহর দেখে দলে যোগদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ভবনের চাতালেই সারতে হয় মুকুলবাবুদের। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বর্ধমানের কালনার সিপিআই (এমএল)-এর এক জন পদাধিকারী-সহ সংগঠনের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মীও এ দিন তৃণমূলে যোগ দেন।
লোকসভা ভোটের আগে এই দলত্যাগে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের তিন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, নির্মল দত্ত এবং মফিজুদ্দিন মণ্ডল দলত্যাগ করে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। এতে নিশ্চিত করেই মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি হবে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ও সুশাসন দেখেই কাশেমরা কংগ্রেস ছেড়েছেন বলে মুকুলবাবু জানান। তাঁর কথায়, “রাজ্যের মানুষ যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখছেন, বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিরাও সেই কর্মযজ্ঞে সামিল হওয়ার জন্য তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।”
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী কিন্তু ওই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তাঁর ব্যাখ্যা, “নীতি বা আদর্শগত কারণে নয়। ব্যক্তিস্বার্থ পূরণ না হওয়াতেই ওঁরা দল ছেড়েছেন।” দলত্যাগীদের তাঁর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “আপনারা কংগ্রেসের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। সৎ হলে সদস্যপদ ত্যাগ করে তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে জিতে আসুন। বুঝব আপনাদের হিম্মৎ ও সততা রয়েছে। তবেই বুঝব খড়গ্রামের উন্নতি করার জন্য আপনারা দলত্যাগ করেছেন। নচেৎ মানুষ আপনাদের লোভী ও ভণ্ড মনে করবেন।”
মুকুলবাবুর দাবি, এ দিনের দলত্যাগের ফলে মুর্শিদাবাদের আরও তিন গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এল। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়া পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের সদস্যরা দলত্যাগ বিরোধী আইনের কোপে পড়বেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা কংগ্রেসের খড়গ্রাম ব্লক সভাপতি আশিস মার্জিত। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির দলত্যাগী সদস্যদের প্রথমে শো-কজ করা হবে। তার পর তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করার পর দলত্যাগ বিরোধী আইনে সদস্যপদ বাতিলের জন্য মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করা হবে। জেলা পরিষদের কংগ্রেসের ৪২ জন সদস্যের মধ্যে কেবল মফিজুদ্দিন মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাঁর সদস্যপদ বাতিল করার জন্য মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করা হবে।” মফিজুদ্দিন বলেন, “সদস্যপদ খোয়ানোর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ও সবের পরোয়া করি না।” |