|
|
|
|
এ বার অনলাইনে মনোনয়ন জমার দাবি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শুধু মনোনয়নপত্র তোলাই নয়, অনলাইনে তা জমা দেওয়ারও ব্যবস্থা করার দাবিতে সরব হল বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও লিখিত ভাবে এই দাবি জানাতে চলেছে এসএফআই-ছাত্র পরিষদের মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। বিরোধী সংগঠনগুলির বক্তব্য, অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা না হলে এই প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, যে কোনও সংগঠন তাদের দাবি জানাতে পারে। তা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তবে, এ বছর অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কারণ, ইতিমধ্যে ছাত্রভোট নিয়ে যা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “আলোচনার প্রেক্ষিতে সমস্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর আর কিছু করা সম্ভব নয়।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে ওই দাবি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হতে পারে।
বস্তুত, এ বছরই প্রথম অনলাইনে মনোনয়ন তোলার প্রক্রিয়া চালু করছে বিশ্ববিদ্যালয়। ঠিক হয়েছে, আগামী ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এবং ২৮ জানুয়ারি কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশও পৌঁছেছে কলেজে-কলেজে। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, এ বার অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা যাবে। অর্থাৎ, কোনও ছাত্রছাত্রী প্রার্থী হতে চাইলে ওয়েবসাইট থেকে মনোনয়নপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মনোনয়নপত্র তুলতে হবে না। তবে, জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা থাকছে না। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে গিয়ে প্রার্থীকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও প্রার্থীকে উপস্থিত হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “কর্তৃপক্ষের উচিত, অনলাইনে যাতে ছাত্রছাত্রীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা। তা না-হলে ছাত্রছাত্রীদের কোনও সুবিধে হবে না। আমরা দেখেছি, যাঁরা শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চান, তাঁদের কলেজ গেটে আটকে দেওয়া হয়। মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয় না।” ছাত্র পরিষদের (সিপি) জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুলেরও দাবি, “মনোনয়নপত্র অনলাইনেই জমা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা লিখিত ভাবে এই দাবি জানাচ্ছি। অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে, এটা শুনতে ভাল লাগছে। কিন্তু, পরিস্থিতি তো সেই আগের মতোই রয়ে গেল।”
ডিএসও’র জেলা সভাপতি দীপক পাত্রের বক্তব্য, “আজ অনলাইন চালুর প্রয়োজনীয়তা কেন? কেন এ সব কথা উঠছে? আসলে দলতন্ত্রমুক্ত অবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্র নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন পেশী শক্তিই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে। শিক্ষার আজ সর্বাত্মক সঙ্কট। এর প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক আন্দোলন যাতে গড়ে উঠতে না-পারে, শাসক দলের সংগঠন তার সব রকম চেষ্টা করে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অবশ্য দাবি, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে তাদের কোনও আপত্তি নেই। সংগঠনের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “আমাদের আপত্তি থাকবে কেন? কী ভাবে ভোট প্রক্রিয়া এগোবে, সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন। তবে, ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে আমাদের সমর্থন করছেন, তাতে বাড়ি গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হলেও এসএফআই- সিপি প্রার্থী খুঁজে পাবে না!”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ছাত্রভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার আগে দুই মেদিনীপুরের পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন কর্তৃপক্ষ। সব কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়েও বৈঠক হয়। কী ভাবে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া এগোবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। বেশ কিছু প্রস্তাবও উঠে আসে। সমস্ত প্রস্তাব খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ওই সূত্রের দাবি, অনলাইন প্রক্রিয়া চালুর বিরোধিতা করেছিল অধ্যক্ষদের একাংশও। কয়েকজন অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন, অনলাইন ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো কলেজে নেই। সেজন্য আরও কম্পিউটার লাগবে। বাড়তি কম্পিউটারের ব্যবস্থা না-করে অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হলে সমস্যা হবে। আবার কয়েকজন অধ্যক্ষের মত ছিল, যারা প্রার্থী হবে, তারা তো সকলেই ছাত্রছাত্রী, তাঁদের কলেজে আসতে অসুবিধে কোথায়? প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা কলেজে এসে মনোনয়নপত্র তুলবে ও জমা দেবে, এটাই তো হওয়া উচিত। পরে সমস্ত প্রস্তাব খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়, অনলাইনেই মনোনয়ন তোলা হবে। এখন নির্বাচন প্রক্রিয়া কতটা শান্তিতে মেটে দেখার সেটাই। |
পুরনো খবর: অনলাইনের গেরো, কমল বৃত্তির আবেদন |
|
|
|
|
|