|
|
|
|
ছ’বছরেও হয়নি পার্ক, ক্ষুব্ধ কেশিয়াড়ি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কেশিয়াড়ি |
শহর এলাকায় পার্ক, পিকনিক স্পট-সহ বিনোদনের হরেক উপকরণ রয়েছে। কিন্তু শহরেরই উপকণ্ঠে কেশিয়াড়িতে নেই কোনও বিনোদন ক্ষেত্র। স্বভাবতই এলাকাবাসীর বহুদিনের দাবি ছিল অন্তত একটি পার্কের। অবস্থা দেখে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি একটি পিকনিক স্পট ও বিনোদন পার্ক গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু, ছ’বছর কেটে গেলেও এখনও পার্কের ন্যূনতম পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। অথচ, তিনটি পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ফলে পার্ক তৈরির খবরের প্রাথমিক আনন্দ এখন রীতিমতো ক্ষোভে রূপান্তরিত হয়েছে।
খড়্গপুর শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কেশিয়াড়ি ব্লক মূলত পাথুরে এলাকা হিসাবেই চিহ্নিত। দর্শনীয় স্থান বলতে কুরুমবেড়া, স্বর্ণমঙ্গলা মন্দির ইত্যাদি। তবে এলাকায় সে ভাবে কোনও বিনোদনের পার্ক বা পিকনিক স্পট নেই। এলাকাবাসীর বহুদিনের দাবি ছিল একটি পার্কের। সেই মতো ২০০৬-০৭ সালে সিদ্ধান্ত হয়, কেশিয়াড়ির কুলবনী সড়কের ধারে রাজবাঁধ গ্রামে সাড়ে ৭ একর সরকারি খাস জমিতে পার্ক ও পিকনিক স্পট তৈরি করা হবে। |
চালু হয়নি কেশিয়াড়ির বিনোদন পার্ক। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
উদ্যোগী হয় তদানীন্তন বাম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি। ঠিক হয়, প্রাথমিক ভাবে মূল সড়ক থেকে প্রস্তাবিত পার্ক পর্যন্ত একটি মোরাম রাস্তা হবে। গোটা এলাকা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হবে। পার্কের অন্তর্গত পুকুরে বোটিং, স্লিপার, বেঞ্চ, ছোট ছোট বিশ্রামাগার-সহ আধুনিক পার্কের সমস্ত উপকরণ তৈরি করা হবে। ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে বিধায়ক তহবিল থেকে প্রথম পর্যায়ে ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। অভিযোগ, তার পরও শুরু হয়নি কাজ। ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে নতুন করে আরও ২১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় ওই তহবিল থেকে। তাতেও কোনও রকমে পাঁচিল গড়ার কাজ ছাড়া আর কিছুই এগোয়নি। পরে ওই একই অর্থবর্ষে সাংসদ তহবিল থেকে আরও ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরও কাজ হয়নি। সম্প্রতি একটা টিকিট ঘর তৈরি হলেও সিংহভাগ কাজ না হওয়ায় চালু করা যায়নি টিকিটঘর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্যই পার্ক তৈরির কাজ এগোয়নি। কেশিয়াড়ি ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগদীশ দাসের অভিযোগ, “সিপিএম আমলে ওই পার্ক তৈরির কোনও কাজ হয়নি। ওরা টাকা নয়ছয় করাতেই ব্যস্ত ছিল। এলাকার সিপিএম বিধায়ক বিরাম মাণ্ডির অবশ্য দাবি, “আমাদের পঞ্চায়েত সমিতিকে কাজ করতে দেয়নি তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল। তাই পার্ক তৈরিতে বিলম্ব হয়েছে।” সিপিএম পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি চন্দন মান্না বলেন, “যে ভাবে টাকা এসেছে, সে ভাবেই টেন্ডার হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, যত দ্রুত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি।” তিনি এ জন্য ঠিকাদারের গড়িমসিকেই দুষেছেন। তবে, তৃণমূল পার্কের কাজ বরাদ্দ টাকায় শুরু করলে তাঁরা পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সহ-সভাপতি তৃণমূলের অশোক রাউত জানিয়েছেন, “আমরা পার্কটা চালু করে দেখিয়ে দেব।”
পার্ক তৈরি নিয়ে টালবাহানায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। স্থানীয় শ্রীদাম সরেন বলেন, “আমরা সেই কবে থেকে শুনেই যাচ্ছি, এখানে পার্ক হবে। কিন্তু কোথায় কী? মাঝে মধ্যে কাজ হয় আবার থমকে যায়! পার্কটা হলে বাড়ির ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাওয়া যেত।” কেশিয়াড়ি বাসস্ট্যান্ডের কাছে হোটেল রয়েছে মৃণাল নাগের। তাঁর কথায়, “বিনোদন ক্ষেত্র তৈরি হলে আমাদের বেচাকেনা বাড়ত। এলাকারও উন্নতি হত।”
বিডিও অশোককুমার রক্ষিতের আশ্বাস, “পার্কের সীমানা পাঁচিল তৈরি হয়েছে। সাংসদ কোটার কিছু টাকাও রয়েছে। তা দিয়ে আপাতত ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে, যত দ্রুত সম্ভব পার্ক চালু করে দেব।” |
|
|
|
|
|