|
|
|
|
সদিচ্ছার অভাব, জেলায় প্রাণিপালনের টাকা পড়ে |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
লালগড়ের বড় ধানশোলা গ্রামের কল্পনা মাহাতো। ২-৩ বিঘে জমি থাকলেও সেচের ব্যবস্থা নেই বলে ভাল চাষ হয় না। ছাগল, মুরগি পালন করলে হয়তো সংসারের হাল ফিরত। কিন্তু গরু, ছাগল কেনার ক্ষমতা নেই। গ্রামীণ এলাকার এই সব গরিব মানুষকে প্রাণিপালনের মাধ্যমে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু দু’বছর, তিন বছর ধরে সেই টাকা পড়েই রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। টাকার অঙ্ক নেহাত কম নয়। প্রায় ৬ কোটি। ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ সালে মিলেছিল। খরচ না হওয়ায় ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ সালের বরাদ্দ জোটেনি। অভিযোগ, কেবলমাত্র প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের সদিচ্ছার অভাব ও উদাসীনতার কারণেই টাকা খরচ করা যায়নি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০-১১ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা থেকে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার মুরগি বাচ্চা বিলি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার জন্য জেলাকে ৬১.১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৪৯ হাজার মুরগি বাচ্চা বিলির পরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১১-১২ অর্থবর্ষে বিনপুর-১, শালবনি, ঝাড়গ্রাম ও জামবনি ব্লকের জন্য ১ হাজার ৪৭৭ ইউনিট ছাগল (প্রতি ইউনিটে ১০টি করে ছাগল) দেওয়ার জন্য ২ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ৫০০ ইউনিটের বেশি বিলি করা যায়নি। বাকি টাকা পড়েই থেকে গিয়েছে। ওই বছরেই রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা থেকে ২০৬০ ইউনিট বলদ (১ ইউনিটে ২ টি বলদ) দেওয়ার কথা ছিল। তার জন্য ২ কোটি ১৬ লক্ষ টাকাও বরাদ্দ হয়েছিল। গোপীবল্লভপুর-১,২, বিনপুর-২ ও নয়াগ্রাম- এই চারটি ব্লকে তা বিতরণ করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত ৯০০ ইউনিটও বিলি করা যায়নি। শুধু মুরগি, ছাগল, বলদ কিনে দিয়েই প্রকল্প শেষ হয়ে যায় না, ওই সব প্রাণিদের খাদ্য দেওয়া, চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া, এমনকী মরে গেলে ক্ষতিপূরণের জন্য বিমাও করে দেওয়া হয়। কিছুই হয়নি। তাই কোটি-কোটি টাকা এসে পড়েই রয়েছে দফতরে।
কেন অর্থ ব্যয় করা যায়নি?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমের দিকে কিছু মুরগি, ছাগল ও বলদ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি মরে যাচ্ছিল। অভিযোগ ওঠে, এমন ব্যবসায়ীদের বরাত দেওয়া হয়েছিল যেখানে গুণগত মান পরীক্ষার সুযোগ ছিল না। গ্রামে-গ্রামে গবাদি পশুর মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারপরেই বিলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আর বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি প্রশাসন। গড়িমসির টেবিলে চাপা পড়ে গিয়েছে ফাইল।
তবে, ওই টাকা খরচের জন্য নতুন করে তোড়জোড় শুরু হয়েছে এখন। জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট বলেন, “আগের জেলা পরিষদ খরচ না করলে আমরা কী করতে পারি। গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ অর্থ পড়ে থাকবে তা মেনে নেওয়া যাবে না। আমরা দ্রুত সেই টাকায় সকলকে ছাগল, গরু, মুরগি কিনে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করছি।” দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর স্বপন কুমার সাধু খানও আশ্বাস দেন, “বরাদ্দ দ্রুত খরচ করার জন্য পদক্ষেপ করেছি। আশা করি মার্চ মাসের মধ্যেই পড়ে থাকা টাকায় ছাগল, মুরগি বিলির কাজ শেষ করা যাবে।” |
|
|
|
|
|