|
|
|
|
পরে এসে লাভ নেই, বড়বাবু ‘সাইটে’ই |
কৌশিক মিশ্র • এগরা |
১৩-য় মোটে ৪।
আনন্দবাজারের দেওয়া মার্কশিট নয়, পূর্ত দফতরের এগরা সেকশন অফিসের হাজিরার বহর।
সবে নতুন বছর পড়েছে। পয়লা জানুয়ারির মোচ্ছবের পরে দোসরার সকাল। আর সেখানেই অমোঘ দুসরা!
কর্মী রবীন্দ্রনাথ জানা সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এসে অফিস খুলে ঝাঁট দিয়ে রেখেছেন। আধঘণ্টা পরে, বেলা দশটাতেও গোটা অফিসে বিরাজ করছেন একমাত্র তিনিই। বাকিরা কখন আসবেন? রবীন্দ্রনাথবাবু জানালেন, “বাবুদের কথা তো জানি না!” কথার মধ্যেই পৌঁছলেন সুখদেব বারিক নামে অপর এক কর্মী। তিনি ‘রোলার ক্লিনার’। জানতে চাইলাম, কিছু দরকার ছিল। ‘বড়বাবু’ কখন আসবেন? সুখদেবের স্পষ্ট জবাব, “আমি বাইরের কাজ করি। কে কখন আসবে জানি না। আপনি এগারোটার পর আসুন।”
|
উপরে, হাজিরা খাতায় নেই আসা-যাওয়ার সময়ের হিসেব। নীচে, বাঁদিক থেকে এগরা পূর্ত দফতরে
দাঁড়িয়ে সাধারণ বাসিন্দা। দফতরের অফিসে এলেন পিয়ন। একই রকম ফাঁকা দফতরের চেয়ার। — নিজস্ব চিত্র। |
কাঁটায় কাঁটায় বেলা ১১টা: সুখদেবের কথামতো এগারোটায় এলেন সুজিত পট্টনায়ক। তবে তিনি অফিসের কোনও কর্তাব্যক্তি নন, নিজেই এসেছেন নানাবিধ প্রশ্ন নিয়ে। সুজিতবাবু জানতে চান, তাঁর ৬৬৭ দাগের কতটা রাস্তা তৈরির জন্য পূর্ত দফতর নিয়েছে। রয়েছে আনুসঙ্গিক কিছু প্রশ্নও। এগারোটায় কেন এলেন? সুজিতবাবুর কথায়, “এর আগে এসে ঠকেছি তো! একা বসে থাকতে হয়। বাবুদেরও দেখা মেলে না।” কয়েক’দিন ধরেই তিনি অফিসে এসে দেখা পাচ্ছেন না সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ওরফে বড়বাবুর। ইনিই এগরা সেকশন অফিসের কর্তা।
১১.১৫: অফিসে ঢুকলেন পঙ্কজকুমার গুঁড়িয়া। তিনি ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট। দেরি হলে গেল না? পঙ্কজবাবু বলেন, “আমার সাধারণত বাইরের কাজ। আজ বাইরে কোনও কাজ নেই, তাই অফিসে এলাম।” তাঁর সংযোজন, “অনেক দিন তো সকাল ৮টা থেকেও কাজ শুরু হয়, কই সে বেলা কেউ বলে না!” অফিসের বাকি ১৩ জন কর্মী কোথায়? তাঁর সতর্ক জবাব, “অনেকেরই বাইরে কাজ আছে।” তবে বড়বাবুর কথা তিনি জানেন না বলে জানান। আরও আধঘণ্টা বাদে কাগজ দুলিয়ে অফিসে এলেন কানাইলাল জানা। তিনি অফিসের পিয়ন। জানালেন, অন্য কাজ থাকায় আজ একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে বেলা ১২টার দিকে নিজের প্রশ্ন নিয়ে আরও এক পাক ঘুরে গিয়েছেন সুজিতবাবু। গোটা অফিসে কর্মী বলে মাত্র তিনজন। একরাশ বিরক্তি নিয়ে এই নিয়ে চতুর্থবার ফিরে গেলেন তিনি।
১২টা ১৫ মিনিটে এলেন অপর ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট। ইতিমধ্যে বড়বাবুর অপেক্ষায় এসেছেন আরও দু’জন। অগত্যা আনন্দবাজারের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফোনে ধরা গেল সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তাপস শীটকে। তিনি বললেন, “অফিসের কাজে তমলুক এসেছি। কোনও কাজ থাকলে শুক্রবার আসুন।” সে কথা অফিসের কেউ জানে না কেন? তাঁর জবাব, “তাড়াহুড়োয় অফিসের কাউকে জানানো হয়নি। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে।”
বেলা গড়িয়ে একটা। আগের দুই সাক্ষাৎপ্রার্থীর মতোই ফিরে গিয়েছেন আরও দু’জন। অফিসের হাজিরা খাতায় দিকে একনজরে তাকালে মনে হবে ওই থাকা যেন ‘খোলা’ই হয়নি। কর্মীরা ওই খাতায় আসা যাওয়ার কোনও সময় উল্লেখ করেন না। জানা গেল, বড়বাবুর কাছে নাকি খোদ একটা আলাদা হাজিরা খাতা থাকে। এ ভাবেই কী চলে অফিস? কন্টাইয়ের পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নিরঞ্জন মাহাতো কার্যত মেনে নিলেন এগরা সেকশন অফিসের এই চরিত্রের কথা। তবে তাঁর আশ্বাস, “জনসাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে এগরায় একজন ইনচার্জ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |
|
|
|
|
|