|
|
|
|
‘বই দিবসে’ সব বই পেলেন না সকলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন, বৃহস্পতিবার ছিল বই দিবস। ঠিক ছিল শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে সমস্ত বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হবে এ দিন। কিন্তু পরিকল্পনা আর তা বাস্তবায়নের মধ্যে যথেষ্ট খামতি থাকায় সুষ্ঠু ভাবে বই বিলির কাজ হল না সর্বত্র। দুই মেদিনীপুর জেলায় বহু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই বিভিন্ন বিষয়ের বই এসে পৌঁছয়নি। কোথাও আবার পড়ুয়া সংখ্যার তুলনায় কম বই আসায় সমস্যা হয়েছে। আবার ‘ছাপার ভুল’ থাকার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস বই কোনও স্কুলেই বিতরণ করা হয়নি। সব মিলিয়ে প্রথম দিনটা বিভ্রান্তি ছড়াল স্কুলে-স্কুলে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৩২৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি ও প্রায় এক হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি মিলিয়ে কয়েক লক্ষ পড়ুয়া রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরেও শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক মিলিয়ে (৮৪৭৭টি) পড়ুয়া সংখ্যা কয়েক লক্ষ। শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে এই সমস্ত ক্লাসের পড়ুয়াদের সরকারি ভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার কথা জানিয়েছিল শিক্ষা দফতর। কিন্তু বাস্তবে দু’টি জেলাতেই বিভিন্ন স্কুলে বই বিলি নিয়ে গোলমাল পেকেছে। |
পাঠবই বিতরণ করছেন সভাধিপতি।— নিজস্ব চিত্র। |
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার ব্লকের আলাশুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার ভৌমিক বলেন, “বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ২২ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু বাংলা বই পেয়েছিলাম ১২টি। ফলে তৃতীয় শ্রেণির সবাইকে বই দিতে পারিনি।” তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক যুগল পাল জানান, তাঁদের স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। নতুন এই পড়ুয়াদের ‘সহজ পাঠ’ বইটা দেওয়া গেলেও ‘আমার বই’ এখনও না আসায় বিলি করা যায়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) দীনবন্ধু নন্দীগ্রামীর বক্তব্য, “কিছু বিষয়ের বইয়ের সরবরাহ কম থাকায় চাহিদা মতো সব বই দেওয়া যায়নি। শীঘ্রই তা দেওয়া হবে। পাঠ্যবই বিলিতে এমনিকে কোনও সমস্যা নেই।” পাঠ্যপুস্তক বিলিতে সত্যিই সমস্যা হয়নি এমন স্কুল অবশ্য রয়েছে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের কেশবপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধন দে যেমন বলেন, “প্রথম থেকে চতুর্থ পযর্ন্ত সমস্ত ক্লাসেই ঠিকঠাক বই এসেছে। আমরা বিলিও করে দিয়েছি।”
তবে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক বিলিতে ঝামেলা হয়েছে দুই মেদিনীপুরেই। তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ মিশ্র জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রদের অঙ্ক বই, সপ্তম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান, অষ্টম শ্রেণির অঙ্ক, ভুগোল, ইতিহাস, ভৌতবিজ্ঞান বই না-আসায় বিলি করতে পারেননি তাঁরা। মহিষাদল ব্লকের মায়াচর হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে ৮৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। অঙ্ক বই ‘গণিত প্রভা’ সরবরাহ না থাকায় এদিন তাঁদের দেওয়া যায়নি। তবে অন্য বইগুলো দেওয়া হয়েছে। কেশপুরের ঝেঁতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, “এস আই অফিস থেকে সমস্ত বই এসে পৌঁছয়নি বলে আমরা বিলি করতে পারিনি। অষ্টম শ্রেণির মাত্র একটি বিষয়ের বই এসেছে, সপ্তম শ্রেণির ৩টি।” খড়্গপুরের ইন্দা বয়েজ হাইস্কুলে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির মাত্র একটি করে বিষয়ের বই এসেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, “পাঠ্যপুস্তক দিতে না পারায় অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ দিন। কেউ কেউ বইয়ের নাম চেয়ে স্থানীয় দোকানে কিনে নেওয়ার কথাও বলেন। আমরা অবশ্য আশ্বস্ত করেছি, কাউকে কোনও বই কিনতে হবে না। স্কুলে বই চলে এসেই দ্রুত পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হবে।”
এদিকে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস বই ‘অতীত ও ঐতিহ্য’ ছাত্র-ছাত্রীদের বিতরণ না করার নির্দেশ পৌঁছেছে স্কুলে-স্কুলে। পাঁশকুড়ার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, এদিন সকালে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতর থেকে ওই বই ছাত্র-ছাত্রীদের না দেওয়ার জন্য মৌখিক ভাবে জানানো হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী নন্দী এই নির্দেশিকার কথা স্বীকার করে বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই ছাত্র-ছাত্রীদের বিতরণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে এটা হয়েছে বিস্তারিত জানা নেই।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “কিছু ছাপার ভুল থাকায় ওই বই বিতরণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ইতিহাস বই এলে ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|