|
|
|
|
অনলাইনের গেরো, কমল বৃত্তির আবেদন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আবেদন করতে হবে অনলাইনেই। সঙ্গে স্থায়ী শংসাপত্র-সহ আরও নানা শর্ত। নিয়মের গেরোয় এ বার তফসিলি জাতি-উপজাতির অনেক ছাত্রছাত্রীই স্কলারশিপের আবেদন করতে পারলেন না। আবেদন কম পড়ছে দেখে প্রশাসন প্রথমে সময়সীমা ১ মাস বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর করেছিল। তারপর আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর শেষ দিনের হিসাব ধরলে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার ছাত্রছাত্রী আবেদন জানিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। গত বছর যেখানে প্রি-ম্যাট্রিক ও পোস্ট-ম্যাট্রিক মিলিয়ে জেলার প্রায় ৯০ হাজার ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ পেয়েছিল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক রাহুল নাথ বলেন, “গত বারের তুলনায় খুব যে কম আবেদন পড়েছে, এমনটা নয়। তবে, অনলাইনে আবেদনের শর্তে একটু তো অসুবিধা হয়েছেই।”
অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হচ্ছে?
স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, স্কুলে তো নেই-ই, এমনকী তফসিলি জাতি-উপজাতি অধ্যুষিত অনেক এলাকাতেই কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। কোথাও কোথাও ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে ‘সাইবার কাফে’। মৌপাল হাইস্কুলের শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, “আমাদের এলাকায় মাত্র একটি সাইবার কাফে রয়েছে। পাশাপাশি ১০-১২টি স্কুল তার উপরেই নির্ভরশীল। পরিকাঠামোগত এই সমস্যা তো আছেই। তার উপরে এই সব এলাকার লোকজন ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী নয়। ফলে সমস্যা হচ্ছে। তারই মধ্যে চেষ্টা করেছি, যত বেশি ছাত্রছাত্রীর নাম অনলাইনে নথিভুক্ত করা যায়।”
নান্দারিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এই কাজ করার জন্য হাতে খুবই কম সময় পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে আবার স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ব্যস্ত ছিল, পরীক্ষার পর অনেকেই স্কুলে আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কাজটি জটিল হয়ে যায়।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজে তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রায় ৯০ হাজার ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ পেয়েছিলেন গতবার। তার মধ্যে পোস্ট ম্যাট্রিকে তফসিলি জাতির ২০ হাজার ও তফসিলি উপজাতির ১১ হাজার ছাত্রছাত্রী ছিলেন। এ ছাড়াও হস্টেলে নিখরচায় থাকা খাওয়ার জন্য অর্থ পেতেন তফসিলি জাতির ১১ হাজার ৮৭০ জন ও তফসিলি উপজাতির ১৪৭৪০ জন। এর বাইরে ‘ডে-স্কলার’ (প্রি-ম্যাট্রিক) অর্থাত্ বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াত করে পড়াশোনা করে এমন স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ হাজার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই স্কলারশিপের রেট ছিল বিভিন্ন। কোনও পড়ুয়া মাসে ১২০০ টাকা পান তো কেউ মাসে ৮২০, ৭৫০, ৫৫০ বা ২৩০ টাকা।
এতদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের শংসাপত্রেই স্কলারশিপের আবেদন করা যেত। তা আর করা যাবে না। কারচুপি রুখতে এ বার কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকলের নাম অনলাইনে নথিভুক্ত করতে হবে। সকলেরই স্থায়ী শংসাপত্রও প্রয়োজন। স্থায়ী শংসাপত্র না থাকার জন্য অনেকে অনলাইনে আবেদন জানাতে পারেনি। যদিও শংসাপত্রে জন্য আবেদন করলে যে ডকেট নম্বর মিলছে, সেই নম্বর দিয়েও অনলাইনে আবেদন সম্ভব। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিডিও বা মহকুমাশাসকের অফিসেও শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি হয়েছে বলে অভিযোগ। একদিকে ‘সাইবার কাফে’র অভাব, তার উপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনিক গড়িমসি সব মিলিয়ে বহু ছাত্রছাত্রী এ বার স্কলারশিপের টাকা থেকে বঞ্চিত হলেন। |
|
|
|
|
|