|
|
|
|
বকেয়া টাকা পেতে শিশুপুত্রকে অপহরণ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
ব্যবসায়িক লেনদেনে বকেয়া ছিল। টাকা আদায়ের জন্য তাই আড়াই বছরের শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে গেলেন পাওনাদার। সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার বরগোদাগোদার গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। অপহৃত আড়াই বছরের শিশুকে অবশ্য রাত ২টো নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার মালিগ্রাম থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের অভিযোগে ধৃত বিশ্বজিত্ শাসমলকে মঙ্গলবার তমলুক মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। উদ্ধার হওয়া ওই শিশুকে আদালতের নির্দেশে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দকুমারের বরগোদাগোদার গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত বাড়ইয়ের মাছের ভেড়ি ও ইটভাটার ব্যবসা রয়েছে। ওই ইটভাটা থেকে ইট কেনার জন্য বছরখানেক আগে রঞ্জিতবাবুকে আগাম ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন পাঁশকুড়ার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিত্ শাসমল। কিন্তু ওই ইটভাটার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বজিতকে ইট দিতে পারেননি রঞ্জিতবাবু। আগাম নেওয়া টাকার কিছুটা অবশ্য কয়েক দফায় বিশ্বজিত্কে ফেরত দিয়েছিলেন বলে রঞ্জিতবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, “বিশ্বজিত্ আর ১০ হাজার টাকা পেত। প্রায় ৬ মাস ধরে ওই টাকা পাওয়ার জন্য আমার বাড়িতে আসছে।” |
|
মায়ের কোলে গোপালকৃষ্ণ বাড়ুই।—নিজস্ব চিত্র। |
অন্য দিনের মতো সোমবার সকালে বিশ্বজিত্ একটি মোটর সাইকেলে চেপে বরগোদাগোদার গ্রামে রঞ্জিতের মাছের ভেড়ির লাগোয়া অস্থায়ী বাড়িতে আসেন। গোবিন্দপুর গ্রামেরই অজিত মণ্ডল নামে এক যুবক ছিলেন সঙ্গে। রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘সকালে জলখাবার দেওয়ার পর বিশ্বজিত্ ও তাঁর সঙ্গী অজিতের দুপুরে খাওয়ার জন্য মাছ, ডিমের ঝোল-ভাত রান্না করেছিলাম। দুপুর ২টো নাগাদ ওদের আগে খেতে দেওয়ার জন্য বাড়ির মধ্যে আসন পেতে দিই। বাড়ির সামনে আমার দুই মেয়ে মামনি, সোনামণি ও আড়াই বছরের ছেলে গোপাল খেলছিল। আমি ভাত আনতে যাই। সেই ফাঁকে বিশ্বজিত্ ও অজিত আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে চলে যায়। বৃদ্ধ শ্বশুর বসেছিলেন কাছেই। তাঁর চিত্কারে বাইরে এসে দেখি ছেলে নেই। অতিথিরাও উধাও।”
এরপরেই গ্রামের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। রঞ্জিতবাবু বলেন, “ঘটনার সময় আমি ভেড়িতে মাছ ধরছিলাম। ছেলেকে অপহরণের খবর পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বিকেল ৫টা নাগাদ বিশ্বজিত্ ফোন করে আমাকে বলে ছেলেকে পেতে হলে ৭২ হাজার টাকা নিয়ে আসতে হবে। ফোনে ছেলের কান্নাকাটির শব্দ শোনায়। তারপর একটা লজের ঠিকানা দেয়। আমরা তখন পুলিশে যোগাযোগ করি।”
মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে রাত ১০টা নাগাদ প্রথমে পাঁশকুড়ার গোবিন্দপুর গ্রামে বিশ্বজিতের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সেখানে বিশ্বজিত্কে পাওয়া গেলেও ওই শিশুকে পাওয়া যায়নি। বিশ্বজিত্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর দিদির বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার মালিগ্রামে গিয়ে ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক পারিজাত বিশ্বাস বলেন, “বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য ওই শিশুকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল পাওনাদারেরা। পরিচিতদের মধ্যে এই রকম ঘটনা সচরাচর ঘটে না।” |
|
|
|
|
|