আত্মসমর্পণ করুক ফেরার মালখান, চাইছেন বাবা-মা
মোরামের রাস্তা পার হয়ে গ্রামে ঢুকতে মাটির দোতলা বাড়ি। তার পিছনে পাঁচটি ঘরের পাকা বাড়ি। রাস্তার উল্টো দিকে গেরস্থালীর কাজ করছিলেন এক প্রৌঢ়া। মালখান সিংহ ওরফে মাধব মণ্ডলের খোঁজ করতেই বললেন, “আমিই মালখানের মা।”
কেএলও-র এই ফেরার জঙ্গির বাড়ি মালদহের বামনগোলার কাংসা গ্রামে। বাবা শচীন মণ্ডলের ১২ বিঘা জমি। সর্ষে, গম, সব্জি, আলুর চাষ করেন মালখানের বাবা ও ভাইরা। তাঁরা চান, মালখান ফিরে আসুক স্বাভাবিক জীবনে। মালখানের মা সিন্ধুদেবী বলেন, “বড় ছেলের জন্য আর গঞ্জনা সহ্য করতে পারি না। সবাই আমায় জঙ্গির মা বলে। ছেলেটা ঠিক পথে ফিরে এলে শান্তি পেতাম।”
ষষ্ঠ শ্রেণির পরে আর পড়েনি মালখান। তখন অবশ্য তাকে মাধব বলেই চিনতেন এলাকার মানুষ। বাড়ির জমিজমাই দেখতেন। সেই সঙ্গে কাজ করতেন একটি দোকানে। ২০০৪ সালে হঠাৎই তার আর খোঁজ পাওয়া গেল না। জানা গেল, এলাকার আরও দশ-বারো জন যুবককে নিয়ে মাধব চলে গিয়েছে একটি পড়শি দেশে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে কেএলও-র ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়নে প্রশিক্ষণ নেয় সে। তারপরেই নাম বদলে মালখান হয়ে যায়। এ রাজ্যে বেশ কিছু নাশকতামূলক কাজে সে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। মালদহের এক ডিওয়াইএফ নেতাকে খুনের অভিযোগও ছিল তার মধ্যে। ২০০৬ সালে মালখান পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। টানা পাঁচ বছর জেলবন্দি থাকার পরে ২০১০ সালে একবার ছাড়া পায়। তার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ধরা পড়ে। কিন্তু সে বারেও ৯০ দিনের মাথায় ২০১১ সালে জামিন পেয়ে যায় মালখান।

মালখানের মা সিন্ধুদেবী। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
এরপরে মালখান আবার যেন মাধবই হয়ে যাচ্ছিল। সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসতে আগ্রহও দেখিয়েছিল। সেই সময়েই মাটির বাড়ির পিছনে পাকা ঘর তোলে সে। একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশেও তাকে দেখা যেত। পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখত। কিন্তু কী করে তার হাতে এত টাকা আসছে, তা নিয়ে সংশয় ছিল পরিবারে। এরপরেই ২০১২ সালের গোড়ায় তার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরের মে-জুন থেকে পরিবারের লোকজন তার আর খোঁজ পায়নি। পুলিশের চোখেও মালখান ফেরার। তবে ১৬ জুন বিজেপি-র পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী নৃপেন মণ্ডল খুন, ২৫ জুনে গাজলের বোমা বিস্ফোরণ এবং ২৭ ডিসেম্বর পাকুয়াহাটে মালদহ-নালাগোলাগামী বাসে গুলির ঘটনায় তার হাত আছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের দাবি, কেএলও-তে মালখান এখন তৃতীয় শীর্ষ নেতা।
বারবার ছেলের নামে এত অভিযোগ ওঠায় অতিষ্ঠ পরিবার। শচীনবাবু বলেন, “ছেলের জন্য পরিবারের মুখ পুড়েছে। তিন বিঘা জমি বন্ধক দিয়ে ২০১১ সালে ওকে জেল থেকে ছাড়িয়েছিলাম। তখন ওকে অনেক বোঝাই।”
গোটা গ্রাম এখন মালখানের কথা উঠলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মালদহ শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার কাংসা মোড়। সেই মোড় থেকে ৩০০ মিটার মোরামের রাস্তা পার হয়ে বামুনগোলায় কোনও গাড়ি দেখলেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে, মেয়ে এমনকী বৃদ্ধরাও দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এমনিতে গ্রামটি সম্পন্ন। কিন্তু মালখানের প্রসঙ্গ উঠলেই সবাই চুপ করে যান। মালখানের ভাই অরুণ মণ্ডলের কথায়, “বাসে গুলি চলার পরে মালখানের খোঁজে গ্রামে পুলিশ এসেছিল। গ্রামের লোকও আর এই অবস্থা সহ্য করতে পারছেন না। গোটা গ্রামই চাই মালখান আত্মসমর্পণ করে মূল স্রোতে ফিরে আসুক।” পাশেই দাঁড়িয়ে সে কথায় সায় দেন শচীনবাবু। সিন্দুদেবী বলেন, “ছেলে আত্মসমর্পণ করুক। তারপরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। সংসার করুক।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.