দিল্লির টাকায় সংস্কারের পথে বিদ্যুৎ বণ্টন
পুরনো, মরচে ধরা, মান্ধাতা আমলের ট্রান্সফর্মার আর রাখা হবে না। পাল্টে গিয়ে আসবে নতুন। কোথাও আবার সচল ট্রান্সফর্মারের মাথায় মোতায়েন হবে নজরদারি মিটার, যা কি না বলে দেবে ঠিক কত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। বেশি ভোল্টেজ টানতে অক্ষম হয়ে পড়া জীর্ণ ‘হাইভোল্টেজ’ কেব্লেরও দিন শেষ। এমনকী, সুষ্ঠু সরবরাহের স্বার্থে প্রয়োজনে নতুন ছোট সাবস্টেশনও বসানো হতে পারে।
রাজ্যের বেশ কিছু ছোট-মাঝারি শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান বাড়াতে এমন বিভিন্ন সংস্কারের কাজে ইতিমধ্যে হাত পড়েছে। যার খরচ জোগাচ্ছে মূলত কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার তালিকায় আরও ১১টি শহরের নাম ঢুকল। যার খরচ বাবদ সহজ শর্তে ১২৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে দিল্লি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, ওই অর্থে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং-কার্শিয়াং-হলদিয়ার মতো বিভিন্ন শহরে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হবে।
এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা জোগাতে গিয়ে যে প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক লোকসানের মুখোমুখি হতে হয়, নতুন পরিকাঠামোর হাত ধরে তার বহরও কমিয়ে আনা সংস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য। কারণ সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ঋণের অর্ধেকটা বদলে যাবে অনুদানে। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, তিরিশ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস এমন শহরগুলোয় বিদ্যুৎ বণ্টনের পুরনো পরিকাঠামো যতটা সম্ভব বদলে ফেলতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘অ্যাকসিলারেটেড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্মস প্রোগ্রাম’ (এপিডিআরপি) থেকে সহজ শর্তে ঋণ মেলে। যদি দেখা যায় এর মাধ্যমে বণ্টনজনিত ক্ষতিও কমানো গিয়েছে, তা হলে ঋণের ৫০ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে মঞ্জুর করে দেয় দিল্লি।
লক্ষ্য কী
• বণ্টনের আর্থিক স্বাস্থ্যোদ্ধার
• বণ্টনজনিত ক্ষতিতে রাশ
• গ্রাহক-সন্তুষ্টি বৃদ্ধি
• সংস্থায় আস্থা বাড়ানো
• সরবরাহের মানোন্নতি
রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারাও সুযোগটির লাভ ওঠাতে তৎপর হয়েছেন। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের কোনও ঘাটতি না-থাকলেও সরবরাহের পরিকাঠামো নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে হরেক অভিযোগ। রুগ্ণ ট্রান্সফর্মার, অতি ব্যবহারে নেতিয়ে পড়া হাইভোল্টেজ তার, নড়বড়ে খুঁটি, যান্ত্রিক তাপ্পিতে ভরা সাবস্টেশন নানা কারণে হামেশা সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। পাশাপাশি দুর্বল পরিকাঠামোর সুবাদে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে বণ্টন সংস্থাকে আর্থিক ক্ষতিও গুনতে হয় বেশি।
তবে সমস্যাটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়। এখানকার বিদ্যুৎ-কর্তাদের দাবি: দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা এ ভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে চলছে। ঠিক যে কারণে কেন্দ্র বাধ্য হয়েছে বড় ঋণ-তহবিল তৈরি করে মাঠে নামতে, যাতে পুরনো বণ্টন পরিকাঠামোর খোলনোলচে বদলে ফেলার ব্যাপারে রাজ্যগুলোকে উৎসাহী করে তোলা যায়।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রের খবর: দেশের অধিকাংশ বণ্টন সংস্থার কোষাগারে হাঁড়ির হাল। বণ্টন পরিকাঠামোর আমূল সংস্কারসাধনের জন্য একলপ্তে কয়েকশো কোটি টাকা ঘর থেকে বার করার সামর্থ অধিকাংশের নেই।
“এমতাবস্থায় দিল্লি পাশে না-দাঁড়ালে ওই সব রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের বেহাল দশা ঘুচবে না। লোকসানের বহরও দিন দিন বাড়বে।” বলছেন মন্ত্রকের এক কর্তা। তাঁর বক্তব্য, “বণ্টন পরিকাঠামো ঢেলে সাজার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার তৈরি, কম্পিউটার বিলিং ইত্যাদিতেও আমরা জোর দিচ্ছি।” এই কাজগুলো ঠিকঠাক করা গেলে প্রতিটি গ্রাহক-পরিবার থেকে বিদ্যুৎ-বিল বাবদ কত টাকা আদায় করা যাচ্ছে, সে সম্পর্কে সঠিক চিত্র বণ্টন সংস্থার হাতে আসবে বলে মন্ত্রক মনে করছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.