সংসদ ভবনের আদলে তৈরি সবুজ-গেরুয়া মঞ্চে মোদী-বন্দনার গানে ভিড় মাতাচ্ছিলেন ভোজপুরী গায়ক-নায়ক মনোজ তিওয়ারি।
“ভারত মাতা হ্যায় পীড়া মে
ইয়ে পীড়া কী মুরত হ্যায়
সারা দেশ পুকার রহা হ্যায়
অব মোদী কী জরুরত হ্যায়”
মনোজের গানের প্রতিধ্বনি ছড়াল সমাবেশে হাজির লোকদের গলায়।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সভায় হাজির জনতার জন্য এমনই হরেক ‘মনোরঞ্জন’-এর ব্যবস্থা করেছিলেন ঝাড়খণ্ড বিজেপি নেতৃত্ব। ঘড়ির কাঁটা সওয়া ১টা ছোঁয়া মাত্র ভিড়ের সেই উচ্ছ্বাস বাঁধ ভাঙল। তত ক্ষণে রাঁচির ধুরুয়ায় বিজেপি-র সভার লাউডস্পিকারের আওয়াজ ঢেকেছে দুধসাদা হেলিকপ্টারের রোটরের শব্দে। জনজোয়ার তোলপাড় হল নরেন্দ্র মোদীর জয়ধ্বনিতে। কপ্টার থেকে নেমে মঞ্চের কাছে পৌঁছলেন মোদী। স্পিকারে শুরু ‘নমো মন্ত্র’। তাঁর বক্তব্য শুনতে তত ক্ষণে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়েছে ধোনির শহরের ময়দানে।
ভিড় দেখে আপ্লুত মোদী বললেন, “হেলিকপ্টারে বসে দেখলাম, এ যেন জনসমুদ্র।” তাঁর সভায় লোক জমতে শুরু করেছিল ভোর থেকেই। দূরের জেলা থেকে রাঁচিতে জড়ো হওয়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা রাতটুকু স্টেশনে কাটিয়েই রওনা দিয়েছিলেন ময়দানের দিকে। আজ ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কনকনে ঠান্ডার তোয়াক্কা না-করেই ভোর থেকে একের পর এক মিছিল দখল নেয় শহরের। কানঢাকা টুপির উপর মোদী-মুখোশ ছিল অনেকেরই মুখে।
সমাবেশে লোক আনতে পাঁচটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল প্রদেশ বিজেপি। গোড্ডা, দুমকা, রাজমহল, সাহেবগঞ্জ, গুমলা, লোহারডাগা থেকে ওই সব ট্রেনেই রাজধানী পৌঁছেছিলেন দলীয় কর্মীরা। রাত থেকেই পা-রাখার জায়গা ছিল না হাটিয়া স্টেশনে। সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকেদের জন্য জলখাবার, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সাঁওতাল পরগনার হাজার পাঁচেক বঙ্গভাষীর জন্য বিধানসভার অতিথি নিবাসে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন রাজমহলের বিধায়ক অরুণ মণ্ডল, বিজেপি-র আঞ্চলিক ভাষা কমিটির আহ্বায়ক শিবলাল ঘোষ।
শীতের সকালে ট্রেন থেকে নেমে সেখানে যান কার্তিক সাহা, উজ্জ্বল মণ্ডল, বিনীতা সরকার, আশিস রায়দের মতো রাজমহল, দুমকা, পাকুড়ের বাসিন্দারা। রাজমহলের উজ্জ্বলবাবু বলেন, “যাঁদের সরকার দু’বেলা পেট ভরে খাবার দেবে, তাঁদেরকেই ভোট দেব। বাজার তো এখন আগুন।” বিজেপি-র দাবি, আজ আড়াই লক্ষ লোক সভায় এসেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ, আসানসোল থেকেও সমর্থকেরা এসেছেন। মোদীর নামে মিষ্টি বিলি করতে ৮০ কিলো ওজনের লাড্ডু নিয়ে এসেছিলেন রানিগঞ্জের বিজেপি সমর্থকেরা।
অন্য রকম ছবিও ছিল। রাঁচিতে এলেও পটনার ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় ময়দানে গেলেন না কেউ-কেউ। লাউডস্পিকারে শুনছিলেন মোদীর কথা। ময়দান থেকে দূরের সেই ভিড়ে মিশেছিলেন গোড্ডার যমুনাদেবী। বললেন, “নাতির সঙ্গে থাকি। আর কেউ নেই। নাতি বলেছিল, মোদীর সভায় আগে বোমা ফেটেছিল। ও-ই মঞ্চের কাছাকাছি যেতে বারণ করেছে।” আজও একবার বিস্ফোরণের গুজব ছড়ায়। তাতে একচুলও হটেননি মোদী-ভক্তরা। ময়দানের ধুলো উড়িয়ে নমো-র কপ্টার অনেক দূর চলে যাওয়ার পরও দিন-বদলের স্বপ্ন নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই। |