প্রথম বার নির্বাচনে লড়েই চমকে দিয়েছেন গোটা দেশকে। সরকার গড়বেন কি না জানতে চেয়ে গণভোট নেওয়া ছিল আর একপ্রস্ত চমক। আগামিকাল শপথ গ্রহণেও চমকের অভাব হবে না।
কী রকম? আম আদমির মতো মেট্রোয় চড়ে কাল রামলীলা ময়দানে শপথ নিতে যাবেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। একা নন, তাঁর ছয় সদস্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও সহযাত্রী হবেন। ইতিমধ্যেই পুলিশি নিরাপত্তা প্রত্যাখ্যান করেছেন অরবিন্দ। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট হুটার লাগানো গাড়িতেও তিনি চড়বেন না বলে জানিয়েছেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভিভিআইপি থাকবেন না বলেও জানানো হয়েছে। তবে সাধারণদের জন্য রামলীলার দরজা খোলা।
অরবিন্দের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ এলাকার কৌশাম্বিতে। তাঁর স্ত্রী আয়কর দফতরের অফিসার। সেই সূত্রে পাওয়া সরকারি আবাসনেই সপরিবার থাকেন ওঁরা। কাল সকালে কৌশাম্বি স্টেশন থেকেই মেট্রো করে বারাখাম্বা পর্যন্ত যাবেন। সেখান থেকে রামলীলা যাবেন নিজের গাড়িতে। শপথ গ্রহণের পর দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন তিনি। দলীয় সূত্রের খবর, দিল্লিবাসীকে অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ, প্রতিশ্রুতি মতো ৭০০ লিটার জল দেওয়া ছাড়া এক মাসের মধ্যে কী কী কাজ করা সম্ভব সেই রোডম্যাপ মন্ত্রী-আমলাদের জানাবেন অরবিন্দ।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিই লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা করে দেবে নির্বাচন কমিশন। বলবৎ হয়ে যাবে নির্বাচনী আচরণবিধি। ফলে কাজ করার জন্য অরবিন্দদের হাতে রয়েছে এক মাস। ওই সময়ের মধ্যে দিল্লির সুষ্ঠু প্রশাসন ও জনহিতকর কাজের ছবি তুলে ধরে লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি-সহ অন্য রাজ্যে ভোট চাইতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে আপ। তবে তার আগেই যে চ্যালেঞ্জ ধেয়ে আসতে চলেছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন অরবিন্দ।
গত কালই দিল্লিতে গাড়ির জ্বালানি গ্যাসের দাম বেড়েছে সাড়ে চার টাকা। যার ফলে আজ থেকেই অটো ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সরব হয়েছে অটো সংগঠনগুলি। আজ সকালে সেই দাবি নিয়ে অরবিন্দের জনতার দরবারেও পৌঁছে যান সংগঠনের প্রতিনিধিরা। দিল্লিতে সরকার বদলের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল অটো চালকদের। ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দিল্লির অটোচালক ও তাঁর পরিবারদের ৮০% ভোট অরবিন্দের বাক্সে ছিল। ফলে তাঁদের দাবি উপেক্ষা করা সম্ভব নয় অরবিন্দের পক্ষে। বর্ধিত দামের প্রতিবাদে হরতাল ডেকেছিল ছোট ট্রাক সংগঠনগুলি। ফলে বাইরের মান্ডি থেকে কোনও আনাজ শহরের বাজারে পৌঁছয়নি। আগামী দু’তিন দিন ওই হরতাল চালু থাকলেই নতুন বছরের শুরু থেকে ফের আনাজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
শপথের আগে এ ভাবে গ্যাসের দাম বাড়ার পিছনে চক্রান্ত থাকাও অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন অরবিন্দ। বলেন, “সচিবালয়ে পৌঁছেই সবার আগে গ্যাসের দামের বিষয়টি ফয়সালা করব। কথা বলব কেন্দ্রের সঙ্গে।” যদি দাম প্রত্যাহার না করা হয় সে ক্ষেত্রে অটোর ভাড়া বাড়াতে হবে। অটোর ভাড়া বাড়ালে টান পড়বে আম জনতার পকেটেই। শীলা দীক্ষিত সরকার পতনের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল মূল্যবৃদ্ধি। নতুন সরকার ভাড়াবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলে তাকেও মানুষের বিরাগভাজন হতে হবে।
ছেড়ে কথা বলবেন না বিরোধীরাও। এমনিতেই অরবিন্দের মেট্রো চড়ার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। তাদের বক্তব্য, চমকই হল কেজরিওয়ালের আসল মূলধন। তবে অনেকেই মনে করাচ্ছেন, এমন চমক আগেও অনেকে দিয়েছেন। লালুপ্রসাদ যাদব প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে কিছু দিন পটনা পশু চিকিৎসা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের আবাসনেই থেকেছিলেন। সেখান থেকে সাইকেলে চড়ে সচিবালয়ে যাতায়াত করতেন। এই চমক অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
আজ খোদ অরবিন্দকেই চমকে দিয়েছিল এক তরুণ। জনতার দরবারে হাজির হয়ে সে হাতের শিরা কেটে বলে, “সুভাষচন্দ্র বসু বলতেন, তোমরা আমাকে রক্ত দাও। আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আমিও আপনার জন্য সব কিছু করতে পারি।” তাকে আর কিছু করতে হয়নি। আপ কর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
বিজেপি এখন আপকে বলছে, চমক নয়, কাজ চাই। প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “সবার আগে গ্যাসের দাম কমাক সরকার। না হলে দল আন্দোলনে নামবে।” কংগ্রেসও যে অরবিন্দকে জমি ছাড়বে না, তা স্পষ্ট করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলি। শীলা দীক্ষিত সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে দফতরের নথি নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে আপ। লাভলি বলেছেন, “আপ চাইলে তদন্ত করতেই পারে। ভিত্তিহীন অভিযোগ আনলে আমরা ছেড়ে কথা বলব না।”
|