দুর্নীতি নিয়ে দলকেও ছাড় নয় রাগী রাহুলের

২৭ ডিসেম্বর
‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’! নাকি দলের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিয়ে অতি-সক্রিয় ‘কংগ্রেসের নিজস্ব অরবিন্দ কেজরিওয়াল’! তিনি যা-ই হোন, ভোটের মুখে কঠিন পরিস্থিতিতে রাহুল গাঁধীই যে কংগ্রেসের শেষ তাস, আজ তা ফের প্রমাণিত।
মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে আমজনতার জমা ক্ষোভ বা কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারগুলির ব্যর্থতা। দুর্নীতি হোক বা মূল্যবৃদ্ধি। সব সমস্যার সমাধান হিসেবে রাহুলকেই তুলে ধরতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আজ তাই কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকে দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের পাঁচ দফা দাওয়াই বাতলে দিলেন সেই রাহুলই।
কিছু দিন আগেই দাগি সাংসদ-বিধায়কদের আড়াল করতে আনা অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। অস্বস্তিতে সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে অস্বস্তিতে ফেললেন রাহুল। গত সপ্তাহেই মুম্বইয়ের আদর্শ আবাসন দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল পৃথ্বীরাজের সরকার। ওই রিপোর্টে কংগ্রেসের চার জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তোলা হয়েছিল। আজ পৃথ্বীরাজ-সহ সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল বলেন, “আমি ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই। ওঁদের উচিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।” পৃথ্বীরাজ অগত্যা জানান, রাজ্য মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে কথা বলবেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেসি-মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের পর
সাংবাদিকদের মুখোমুখি রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
কেন এত তেড়েফুঁড়ে নেমেছেন রাহুল? কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভের ফায়দা কখনও তুলছেন কেজরিওয়াল, কখনও বিজেপি বা আঞ্চলিক দলগুলি। তাই এই পরিস্থিতিতে রাহুল নিজেই বিক্ষুব্ধ রাজনীতি করছেন। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই। তাঁর নেতৃত্বে এক উন্নততর কংগ্রেসের স্বপ্ন দেখানো। যাতে মানুষ কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে বিজেপি বা আপ-কে বেছে না নেন।
এক দিকে কংগ্রেসের কেজরিওয়াল হয়ে নিজের দলের তথা সরকারের স্বজন-পোষণ নীতির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছেন। অন্য দিকে বিজেপিকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, লোকপালের পর দুর্নীতি মোকাবিলা সংক্রান্ত আর যে সব বিল (দুর্নীতির অভিযোগকারীকে সুরক্ষা দেওয়া, সরকারি পরিষেবা না মেলার ক্ষোভের প্রতিকার ইত্যাদি) এত দিন জমে রয়েছে, সেগুলি পাশ করাতে তারা সরকারকে সাহায্য করুক। এর জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। রাগী যুবকের স্বরে রাহুলের মন্তব্য, “এ সব কথা বললে কোনও দিন ‘হ্যাঁ’ শুনি না। ফ্যাশন হয়েছে কথা বলা। এ বার কাজের কাজ হোক। বিরোধীরা আমাদের সঙ্গে মিলে বিলগুলো পাশ করে দিক। এ দেশে কী হয়, সেই মজাটা দেখা যাক।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে বরাবরই পৌরোহিত্য করেছেন সনিয়া গাঁধী। এই প্রথম দায়িত্ব সামলালেন রাহুল। রকাবগঞ্জ রোডে ‘ওয়ার রুম’-এ বৈঠকের শুরুতেই দু’টি বিষয়ে জোর দেন। এক, দুর্নীতি। যে দুর্নীতিকে হাতিয়ার করেই ‘আপ’-এর উত্থান। দুই,মূল্যবৃদ্ধি। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে যার খেসারত দিতে হয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস হাইকমান্ড।
দুর্নীতি-বিরোধিতায় কড়া বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রীদের রাহুল বলেছেন, লোকপাল বিলে রাজ্যের লোকায়ুক্তর জন্য যে কাঠামোর সুপারিশ করা হয়েছে, তা মেনে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লোকায়ুক্ত বিল পাশ করতে হবে। তাঁর কথায়, “দুর্নীতি রুখতে গেলে কাঠামো দরকার। রাজ্য স্তরে জরুরি।” এ ক্ষেত্রে তিনি যে কোনও বাছবিচার করছেন না, তা বোঝাতেই আদর্শ দুর্নীতির রিপোর্ট খারিজ নিয়ে মুখ খুলেছেন রাহুল। বলেছেন, “কাউকে আড়াল করার প্রশ্নই আসছে না।” ওই রিপোর্টে অশোক চহ্বাণ, বিলাসরাও দেশমুখ, শিবাজিরাও পাটিল নিলাঙ্গেকর ও সুশীল শিন্দের মতো চার কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তোলা হয়েছিল।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার পথও খুঁজেছেন রাহুল। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের যুক্তি ছিল, মূল্যবৃদ্ধি সামাল দেওয়ার কাজ রাজ্যের। রাজ্যগুলি তাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আজকের বৈঠকেও চিদম্বরম ও খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। রাহুল নির্দেশ দেন, অন্য রাজ্য না করলে কংগ্রেসের ১২টি রাজ্যই কাজটা শুরু করে দিক। সিদ্ধান্ত হয়, এই রাজ্যগুলি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কৃষিপণ্য বিপণন কমিটি আইন থেকে ফল ও শাকসব্জি বাদ দিয়ে দেবে। ফলে কৃষকরা অবাধে তা বেচতে পারবেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করতে পারবেন না। ফলে দামও কমবে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকার ফাটকাবাজি, কালোবাজারির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী খাদ্য বণ্টন ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে। রাজ্য নিজেই দোকান খুলে অথবা মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে সস্তায় ফল, শাকসব্জি ও ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করবে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, এই সব সিদ্ধান্তে ফল মিললে অন্য রাজ্যগুলিও একই পথে হাঁটতে বাধ্য হবে। আর তার যাবতীয় কৃতিত্ব তখন রাহুলকেই দেবেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.