|
|
|
|
রামলীলায় শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়বেন অরবিন্দ
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি
২৬ ডিসেম্বর |
ভারত-চিন যুদ্ধের শহিদদের উদ্দেশে লতা মঙ্গেশকরের বিখ্যাত গানটি এখানে শুনেই কেঁদে ফেলেছিলেন জওহরলাল নেহরু। এই মাঠেই সত্যাগ্রহে বসেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এখানকার মঞ্চেই বিপুল জনসভার মুখোমুখি হয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ।
পুরনো দিল্লির এই রামলীলা ময়দানের মুকুটে এমন অসংখ্য রঙিন পালক। সমস্ত প্রথা ভেঙে শনিবার এখানেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বলছেন, শপথগ্রহণের এই স্থান-নির্বাচন তাঁর কাছে শ্রদ্ধার্ঘের মত। দুর্নীতি রুখতে জনলোকপাল বিল আনতে অণ্ণা হজারের আন্দোলনে মানুষ একদিন ভেঙে পড়েছিল এখানেই। ওই আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছিলেন আম আদমি পার্টির আজকের সর্বাধিনায়ক। তাই হজারের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘‘আমার গুরু অণ্ণা হজারে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে ফোন করে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করব।” কেজরিওয়ালের সিদ্ধান্ত থেকে, স্পষ্ট আড়াই বছর আগের গণআন্দোলনের স্মৃতিকেই তিনি উস্কে দিতে চাইছেন শপথ অনুষ্ঠানে। চাইছেন আম জনতার ব্র্যান্ড হিসাবে রামলীলাকে কাজে লাগাতে।
দিল্লির প্রবীণ রাজনীতিকদের মতে, আপ-এর মন্ত্রীদের শপথ নেওয়ার ঘটনা এই ময়দানের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। ভারতীয় রাজনীতির বিবর্তনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই মাঠ। ১৯৩০ সালের আগে এটি ছিল প্রকাণ্ড ঝিল। পরে ব্রিটিশ জমানায় সেনাবাহিনীর আস্তানা তৈরির জন্য একে বুজিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে স্বাধীনতার পর এটিই হয়ে ওঠে বিভিন্ন আন্দোলনের মঞ্চ।
এখানে ১৯৫২ সালে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে শ্যামাপ্রসাদের সমর্থকদের সত্যাগ্রহ আন্দোলন রীতিমতো ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস সরকারের। চিনের সঙ্গে যুদ্ধের পর ১৯৬৩ সালের এক সন্ধ্যায় লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’ আজ প্রবাদের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। গানটি শুনে সাশ্রু জওহরলাল জড়িয়ে ধরেছিলেন লতাকে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী এক বিশাল জনসভা করেছিলেন এখানে। এক দিকে পাকিস্তানের আক্রমণ, অন্য দিকে দেশে খাদ্যশস্যের প্রবল অনটন। রামলীলা ময়দানের জনসভাতেই প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন লালবাহাদুর, ‘জয় জওয়ান জয় কিষান’।
গাঁধী, নেহরু, বল্লভভাই পটেল রামলীলা ময়দানে বক্তৃতা দেননি এমন নেতা বিরল ভারতের ইতিহাসে। ১৯৭১-এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানকে হারানোর পর এখানে বিজয়োৎসব করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। আবার জরুরি অবস্থার আগে ও পরে তাঁর বিরুদ্ধে জনরোষের সাক্ষীও এই ময়দান। ১৯৭৫-এ জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে এখানে জনসভা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী।
শনিবার দুপুর বারোটার সময় আবার এক নতুন ইতিহাস বরাদ্দ হতে চলেছে রামলীলার জন্য।
|
পুরনো খবর: শপথ পরশু, কথা রাখতে তৎপর অরবিন্দ |
|
|
|
|
|