|
|
|
|
শপথ পরশু, কথা রাখতে তৎপর অরবিন্দ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৫ ডিসেম্বর |
অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের সমর্থন করা নিয়ে দলের একাংশ বিক্ষোভ দেখালেও সনিয়া ও রাহুল গাঁধী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসা হচ্ছে না। তবে একই সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব, প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হলে সমর্থন তুলে নিতে পিছপা হবেন না তাঁরা। অরবিন্দ জানিয়েছেন, দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লির প্রতিটি বাড়িতে বিনামূল্যে ৭০০ লিটার করে জল সরবরাহ করা হবে। বিদ্যুতের মাসুল কমানোর বিষয়েও কথা শুরু হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে পাশ করানো হবে জন-লোকপাল বিলও।
যে সরকার হওয়ার আগেই দ্বৈরথে জড়িয়ে পড়ছে কংগ্রেস ও আপ নেতৃত্ব, আজ সেই সরকারের শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত ছাড়পত্র আসে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, আগামিকাল রামলীলা ময়দানে শপথ নেবেন কেজরিওয়াল। সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়ে দেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং। আজ দুপুরে সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেন প্রণববাবু। তার পরেই তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাত ঘুরে নাজিব জং-র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতি আসার পরেই আজ নাজিব জানান, শনিবার কেজরিওয়ালদের শপথগ্রহণে আর বাধা নেই। তবে ৩ জানুয়ারির মধ্যে বিধানসভায় গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে কেজরিওয়ালকে। বস্তুত বয়সের বিচারে কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভা দেশের কনিষ্ঠতম মন্ত্রিসভা হতে চলেছে। কেজরিওয়ালের পরেই মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হবেন প্রাক্তন সাংবাদিক মণীশ সিসৌদিয়া। কিন্তু রাখি বিড়লা বা সৌরভ ভরদ্বাজদের বয়স খুবই কম। কারও ২৬ তো কারও ৩৪।
আপ সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবার কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী ও দলের বাকি ছয় বিধায়ক মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। তবে বিধানসভার স্পিকারের নাম এখনও জানায়নি আপ। গত কাল মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না হওয়ায় দলের বৈঠকের মাঝপথেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীনগরের বিধায়ক বিনোদ বিন্নি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কেজরিওয়ালদের বিরুদ্ধে তোপ দাগারও হুমকি দেন। দলের কোঁদল প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় গত কাল রাত থেকেই সক্রিয় হন আপ নেতৃত্ব। গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিন্নির সঙ্গে বৈঠক করেন কুমার বিশ্বাস, যোগেন্দ্র যাদবেরা। তাঁকে বিধানসভার স্পিকার হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তিনি স্পিকার হচ্ছেন কি না, তা স্পষ্ট না হলেও বিন্নির মান যে ভেঙেছে, তাঁর কথায় তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “কে বলেছে আমি ক্ষুব্ধ! কাল একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মিটিং থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম।” আপ-এর একটি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, বিন্নিকে পরিষদীয় সচিব পদ দেওয়া হতে পারে।
তবে এই মুহূর্তে কেজরিওয়ালের সামনে ঘরোয়া কোঁদলের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর যাবতীয় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ। এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে কেজরিওয়াল অবশ্য আজ বলেছেন, “প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লির প্রতিটি বাড়িতে বিনামূল্যে ৭০০ লিটার করে জল সরবরাহ করা হবে। বিদ্যুতের মাসুল কমানোর ব্যাপারেও আলোচনা শুরু করেছি। ১৫ দিনের মধ্যে জন-লোকপাল বিলও পাশ করাব।” তবে আপ-এর মাথাব্যথ্যা আরও আছে। বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি ইস্তাহার রচনা করেও বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আপ নেতৃত্ব। সেই প্রতিশ্রুতি পালনের জন্যও তাঁর ওপর প্রবল চাপ রয়েছে।
প্রতিশ্রুতি পালনে কেজরিওয়ালের ব্যর্থতা দেখার জন্যই এখন বসে রয়েছেন কংগ্রেস ও বিজেপি নেতৃত্ব। মুখে না বললেও মুখিয়ে রয়েছেন অণ্ণা শিবিরের নেতারাও। কারণ, অরবিন্দ রাজনৈতিক দল গড়ুন তাঁরা কখনওই চাননি। অনেকের মতে, কেজরিওয়ালের বেশি চিন্তা অণ্ণা শিবির নিয়েই। কেন না কংগ্রেস ও বিজেপি-কে দুর্নীতিপরায়ণ দল বলে পার পাওয়া গেলেও অণ্ণা শিবিরকে সে ভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সে জন্যই কৌশলে অণ্ণা ও তাঁর টিমের সদস্য সন্তোষ হেগড়ে এবং কিরণ বেদীকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অরবিন্দ। যদিও অণ্ণা সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করবেন না তেমন ইঙ্গিতই আজ মিলেছে। অণ্ণা আজও বলেন, “অরবিন্দকে নিয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেব না।”
দিল্লিতে সরকার গঠন নিয়ে এই নাটক ও টানাপোড়েনের পর্বে আজ আরও কিছু সংযোজন হয়েছে। গত কাল কংগ্রেস নেতাদের একাংশ সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন। তার পর আজ সকাল হতেই আপ নেতারা পাল্টা বলতে শুরু করেন, অমেঠী আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জোরদার প্রার্থী দেবে আপ। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কংগ্রেসকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়ার এটা একটা নয়া কৌশল হতে পারে কেজরিওয়ালদের। যদিও তাতে দমেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। তিনি আজও বলেন, “তিন মাসের মধ্যে প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে আপ-কে। কোনও অজুহাতেই পিছিয়ে যাওয়া চলবে না। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ তাঁরা তুলছেন, তার তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু তা যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় পর্যবসিত হয়, সে ক্ষেত্রে সমর্থন টিকিয়ে রাখার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা হবে।” এ দিন কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন ইউপিএ-র শরিক নেতা শরদ পওয়ারও। দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের আগে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পওয়ারের কড়া সমালোচনা করেছিলেন কেজরিওয়াল। পওয়ার আজ বলেন, “শীলা দীক্ষিত পরাস্ত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁকে যিনি হারিয়েছেন তিনি দাবি করেছিলেন, সরকার গড়লে দু’দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে অর্ধেক করে দেবেন। অন্য সব্জির দামও অর্ধেক করে দেবেন। দেখি এ বার উনি কি খেলা দেখান।”
কেউ কেউ আবার অন্য কথা বলছেন। তাঁদের কথায়, কেজরিওয়ালকে খাটো করে দেখলে কিন্তু চলবে না। কংগ্রেস-বিজেপিকে একপ্রস্ত ঘোল তিনি খাইয়ে দিয়েছেন। কে বলতে পারে তাঁর আস্তিনে হয়তো অন্য কোনও অস্ত্র লুকিয়ে নেই? রামলীলা ময়দানে জন-লোকপাল বিল পাশ করিয়ে আর দু’দিনের মধ্যে বিনামূল্যে ৭০০ লিটার জল সরবরাহ শুরু করে দিয়ে যদি সহসা সরকার ভেঙে ফের ভোটে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি, তখন কী করবে কংগ্রেস-বিজেপি?
|
পুরনো খবর: কী হয়, কী হয় চিন্তায় শুকিয়েছে অনেক মুখই |
|
|
|
|
|