কী হয়, কী হয় চিন্তায় শুকিয়েছে অনেক মুখই

২৪ ডিসেম্বর
রবিন্দ কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। রামলীলা ময়দান চত্বর জুড়ে তাই এখন সাজো সাজো রব। উৎসবের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। কিন্তু এই আবহেও অনেকের মুখ কালো! একটাই চিন্তা, এ বার কী হবে?
অরবিন্দ ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে দুর্নীতিমুক্ত দিল্লি গড়তে পারবেন কি না, তা সময় বলবে। কংগ্রেসের হাত ধরে তখতে বসে যাবতীয় বাহ্যিক আড়ম্বর ‘ঝেঁটিয়ে’ অরবিন্দ নিজেকে ‘মুখ্যসেবক’ হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন কি না, সেটাও দেখার। কিন্তু গত কাল ‘আপ’ সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আশার পাশাপাশি আশঙ্কারও দোলাচল!
যেমন পূর্ব দিল্লির কারকারডুমা। ইস্ট দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটির অফিস এখানে। সোজা পথে সদ্যোজাতর জন্মের সার্টিফিকেট পেতে সাধারণত কেটে যায় অনেক সময়। বাঁকাপথে? দিন তিনেক! বিষয়টি হল, আপনি যদি শিশু-র সার্টিফিকেটের ফর্ম তুলে জমা দিতে যান, অধিকাংশ সময়েই নিরাশ হবেন। কাউন্টার আপনাকে জানাবে, কম্পিউটার খারাপ, সার্ভার ডাউন। এমনও হতে পারে, কারও টিকিই দেখতে পেলেন না! যদিও বা ফর্ম দিলেন, কবে তা পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। বাইরে দল বেঁধে বসে থাকা টাইপ-কর্মীদের একাংশ নাকি ‘ফি’ নিয়ে ভিতর থেকে কাজটি করিয়ে দেন নিমেষে! এই অভিযোগ অনেকেই করেছেন। আজ কিন্তু ওই কর্মীরা কিছুটা চুপচাপ। নিজেদের মধ্যে চলছে মৃদু গুঞ্জন আপ আসায় বাড়তি রোজগারটুকু বন্ধ হয়ে যাবে না তো!
পূর্ব দিল্লির মোটর ভেহিক্যালস অফিস। গাড়ির লাইসেন্স মেলে এখানে। কলকাতার বেলতলার মতো এখানেও দালালতন্ত্রের রমরমার অভিযোগ। টাকা দিলেই বাড়ি বসে পাওয়া যায় গাড়ি চালানোর ছাড়পত্র। চালানোর পরীক্ষা? দক্ষিণা ঠেকালে সেটা নামমাত্র! আজ এখানেও আশঙ্কার চোরা স্রোত।
একই ছবি দিল্লির সরকারি হাসপাতালগুলিতেও। উত্তর দিল্লির এক সরকারি হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে পৌঁছে দেখা গেল, আক্ষেপধ্বনি এখানে যথেষ্ট প্রকট! চার পাশের জেলা থেকে তো বটেই, দিল্লির প্রান্তিক অনেক মানুষই এই হাসপাতালে আসেন সন্তান প্রসব করানোর জন্য। প্রসবের পর ‘মিঠাই’ খাওয়ানোর জন্য টাকা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। সেই টাকার অঙ্কও ধার্য রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে! ন্যূনতম তিন হাজার টাকা নাকি দিতেই হবে। দাবি মতো টাকা না পেলে শিশুকে না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ অনেকের। আজ এখানে হাওয়াটা একটু অন্য রকম। ‘মিঠাই’য়ের টাকা বন্ধ হয়ে যাবে না তো?
আশঙ্কার হাওয়া বইছে দিল্লির অভিজাততন্ত্রের অন্দরমহলেও। আম আদমির দাবিতে ধসে পড়েছে রেল স্টেশনে ভিভিআইপি-দের জন্য বিশেষ গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। অরবিন্দের ১৮ দফার ঘায়ে ঘাম ছুটছে উচ্চপদস্থ আমলাদেরও। যে দিল্লি এত দিন মন্ত্রী আমলাদের দর্পিত লাল গাড়ি দেখে অভ্যস্ত, যাঁদের যাতায়াতের সময় স্তব্ধ করে দেওয়া হয় ‘আম আদমির’ যানবাহন, সেখানেই কিনা উলটপুরাণ! লালবাতির গাড়ি, সরকারি বাংলো না-নেওয়ার প্রশ্নে অনড় অরবিন্দ ও তাঁর দল। জাঁকজমক করে ছ’টি বিরাট বাংলো তৈরি হয়েছিল দিল্লি সরকারের মন্ত্রীদের জন্য। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অফিস থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আতাতুর রেহমান লেন এবং রাজ নিবাস মার্গ-এ এই ছ’টি বাংলো ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছে পিডবলিউডি। কেন যাবেন না এখানে কেজরিওয়াল ও তাঁর সঙ্গীরা? আপ নেতা যোগেন্দ্র যাদব যা বলছেন, তাতে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে দিল্লি সরকারের উচ্চপদস্থ আমলাদের অনেকের। যোগেন্দ্রর কথায়, “আমরা চেষ্টা করছি একটা উদাহরণ তৈরি করার। যদি আমাদের বিধায়ক-মন্ত্রীরা এই বিলাসবহুল বাংলোতে না-যান। তা হলে এখানকার ভিআইপি-সংস্কৃতিও শুকিয়ে আসবে।” ভিআইপি সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ লুটিয়েন-এর দিল্লিতে বদলাবে কি না, তা সময়ের অপেক্ষা। দুর্নীতির পাঁক থেকে প্রশাসনকে তোলা যাবে কি না,সেটাও দেখার। তার আগে যা ঘটনা, তা হল, আপ আসতেই চাপে পড়েছেন অনেকে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.