আপ জমানায় আস্থা রাখলেও চিন্তা রয়ে যাচ্ছে শিল্পমহলের

২৪ ডিসেম্বর
রসা আছে। আছে ‘অন্য ধারার’ দলের রাজত্বে সার্বিক বদলের আশা। আবার সেই দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের পন্থা নিয়ে মৃদু চিন্তাও আছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার আগে তাঁকে ঘিরে শিল্পমহলের প্রতিক্রিয়া চুম্বকে এমনই।
দিল্লির ভোটের ফল প্রকাশের পর ইনফোসিসের কর্ণধার এন আর নারায়ণমূর্তি বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলিকে যে অদূর ভবিষ্যতেই কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে কেজরিওয়ালের সাফল্য। অন্য অনেকেরও বক্তব্য ছিল, আম আদমি পার্টিতে যে হেতু বুদ্ধিমান অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভিড় জমেছে, বিভিন্ন পেশার সফল মানুষরা বাইরে থেকে কেজরিওয়ালকে সাহায্য করেছেন, তাতে ভাল কিছু আশা করা যেতেই পারে। কারণ দুর্নীতি, সরকারি অসহযোগিতা, লাল ফিতের ফাঁসের মতো নানা কারণে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলির সরকার সম্পর্কে কিছুটা বিরক্তই হয়ে উঠেছিল শিল্পমহল। স্বভাবতই আম আদমি পার্টির সরকারকে স্বাগত জানাচ্ছে তারা। কেজরিওয়াল যে হেতু দুর্নীতি নিয়ে সব চেয়ে বেশি সরব, শিল্পমহল তাই মনে করছে, তাঁর প্রশাসনেও যথাসম্ভব স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। শিল্পস্থাপনের জন্য আগের জমানাগুলিতে যে ঝক্কি পোহাতে হত, সে অবস্থা এ বার ঘুচবে বলে তারা আশাবাদী।
উদাহরণ দিয়ে এক দিল্লিবাসী জানালেন, ইদানীং গাড়ি নিয়ে বার হওয়ার আগে অনেকে ভাল করে দেখে নিচ্ছেন লাইসেন্স ইত্যাদি সঙ্গে নিয়েছেন কি না। অর্থাৎ আপ-এর জমানায় আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও বড় বদলের আশা করছেন আমজনতা। একই ভাবে শিল্পমহলও তার ব্যতিক্রম নয়। এমনকী কেজরিওয়াল ভোটের আগে দিল্লিতে পরিবার-পিছু রোজ সাতশো লিটার জল বিনামূল্যে দেওয়ার এবং বিদ্যুৎ-মাসুল অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা নিয়েও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বণিকসভা ফিকি-র নতুন সভাপতি সিদ্ধার্থ বিড়লা। তিনি বলেছেন, “আমি নিশ্চিত, আম আদমি পার্টি মজবুত কোনও ব্যবস্থা তৈরি করবে। ওঁদের সদিচ্ছা সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ সাধারণ মানুষের মঙ্গলের কথা বলছেন।”
কিন্তু সিদ্ধার্থের এই কথা সত্ত্বেও রয়ে যাচ্ছে ঈষৎ আশা-আশঙ্কার দোলাচল। বিদ্যুৎ ও জল নিয়ে কেজরিওয়ালের ঢালাও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন অর্থনীতির যুক্তিতে আদৌ সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও কিন্তু তুলছে শিল্পমহলেরই একাংশ। তাদের যুক্তি, দেশের বর্তমান আর্থিক দশা যখন বেহাল, যখন কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে, তখন কেজরিওয়াল উল্টো পথে হাঁটবেন কী করে? কী করে তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম না কমা পর্যন্ত বিল না মেটালেও চলবে!
দু’টি প্রথম সারির বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠী এখন দিল্লির বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার দায়িত্বে। তারা আর্থিক ক্ষতিতে চলছে বলে দাবি করলেও তা মানতে রাজি নন কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দরকার হলে তাদের বাদ দিয়ে তিনি নতুন সংস্থাকে ডাকবেন। বস্তুত, দিল্লির মুখ্যসচিব ডি এম স্পয়লার সঙ্গে বৈঠক করে আজই রাজধানীর বেসরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক হাল-হকিকত জেনেছেন কেজরিওয়াল। স্বভাবতই গুঞ্জন ছড়িয়েছে, শপথ নিয়ে বিদ্যুতের দাম কমানোর কাজটিই প্রথম করবেন তিনি। ফিকি-র সভাপতি এ প্রসঙ্গে অবশ্য বলেন, “কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার ব্যবসা সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এই সংস্থাগুলি বিদ্যুৎ কিনে সাধারণ মানুষকে বিক্রি করে। একটি স্বাধীন সংস্থা বিদ্যুতের দাম ঠিক করে। কাজেই আর্থিক ক্ষতি হতেই পারে। কিন্তু চালু ব্যবস্থাটাকেই আরও দক্ষ করে তুলে যদি সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়া সম্ভব হয়, তা হলে তার থেকে ভাল কিছু হয় না।”
আশঙ্কার অন্য একটি কারণও রয়েছে। আপ-এর আন্দোলন চলাকালীন দেশের প্রথম সারির একাধিক শিল্পপতি ও শিল্পসংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আক্রমণ শানিয়ে এসেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সুইস ব্যাঙ্কে তাদের কালো টাকা রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন। স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে সেই সংস্থাগুলির প্রতি তাঁর মনোভাব কী হয়, তা নিয়েও কিছুটা দোলাচলে বণিকসভার কর্তারা। সেই কারণেই ভাবী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ, তাঁর ১৮ দফা কর্মসূচির বাইরে শিল্প সংক্রান্ত নীল নকশা প্রকাশ না করা পর্যন্ত কেজরিওয়াল জমানা নিয়ে প্রকাশ্যে বিস্তারিত মন্তব্যে তাঁরা নারাজ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.