দাঙ্গায় ছাড় পেলেও কমিশন-কাঁটা মোদীর

২৬ ডিসেম্বর
ক দিকে স্বস্তি, তো আর এক দিকে অস্বস্তি।
ভাল-মন্দ মিশিয়ে আজ ছিল নরেন্দ্র মোদীর দিন।
সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) ২০০২ সালের দাঙ্গায় ক্লিনচিট দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীকে। সিট-এর সেই ছাড়পত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন দাঙ্গায় নিহত কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া। তাঁর দাবি ছিল, স্বয়ং মোদী এই দাঙ্গার ষড়যন্ত্রে সামিল ছিলেন। কিন্তু গুজরাতের মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আজ জাকিয়ার আবেদন খারিজ করে মোদীকে দেওয়া ক্লিনচিটই বহাল রেখেছেন। আবার একই দিনে মূলত গুজরাতে এক মহিলার উপর পুলিশি নজরদারির ঘটনার তদন্তে একটি কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
মোদী বলেছেন, আগামিকাল তিনি যা বলার বলবেন। গোটা দিনের ঘটনাপ্রবাহের পর আজ শুধু টুইটারেই সক্রিয় ছিলেন তিনি। মোদী লিখেছেন, “সত্যমেব জয়তে। শুধুমাত্র সত্যেরই জয় হয়।” গাঁধীজিকে উদ্ধৃত করে তাঁর বক্তব্য, “প্রকৃতির নিয়মেই সত্য নিজেই তার প্রমাণ। চারপাশের অজ্ঞতার জাল যখন দূর হবে, তখনই সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
আমদাবাদে আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি ২০০২-এর দাঙ্গায়
নিহত কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। ছবি: এএফপি।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, গুজরাত দাঙ্গা মামলার রায় ঘোষণার কথা মাথায় রেখেই আজ মোদীকে জোড়া ধাক্কা দেওয়ার আশায় ছিলেন ইউপিএ নেতৃত্ব। যে কারণে তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত করা হয় আজই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বলরা ওই তদন্ত কমিশন গঠন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। পরে কেন্দ্রের তরফে ঘোষণা করা হয়, ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুর এক মহিলার ফোনে গুজরাত পুলিশ যে ভাবে নিরন্তর আড়ি পেতেছে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির অধীনে নয়া কমিশন তার তদন্ত করবে। মোদীর ঘনিষ্ঠ অমিত শাহের সঙ্গে গুজরাত পুলিশের কর্তার টেলিফোনে কথোপকথনও খতিয়ে দেখা হবে।
ঘটনা হল, মোদী সরকার এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। আইন মোতাবেক, রাজ্য কোনও তদন্ত কমিশন গঠনের পরে কেন্দ্র তখনই সমান্তরাল কমিশন গঠন করতে পারে, যদি একই ধরনের ঘটনা দুই বা ততোধিক রাজ্যে ঘটে। বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, স্রেফ আইনি বাধা এড়াতেই গুজরাতের ঘটনার পাশাপাশি হিমাচলের একটি ফোনে আড়ি পাতা ও দিল্লিতে অরুণ জেটলির ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ একত্র করে তদন্ত কমিশন গড়ার কথা বলছে কেন্দ্র। কিন্তু তাদের আসল লক্ষ্য মোদী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে এই অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছেন, “কোনও প্রতিহিংসার ব্যাপার নয়। জনমতের চাপেই তদন্ত কমিশন গড়া হয়েছে।” এই ঘটনার পর গোটা বিজেপি শিবির কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে নামলেও ঘরোয়া স্তরে নেতারা কবুল করছেন যে, নতুন কমিশন লোকসভার আগে বেগ দেবে মোদীকে। কারণ, কমিশন তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট নিয়ে ভোটের আগে শোরগোল করতে পারে কংগ্রেস। কেন্দ্রের কমিশনের কাছে অমিত শাহ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জেরার জন্য ডাকা হলে তার থেকে রাজনৈতিক ফায়দা কংগ্রেসই তুলবে কংগ্রেস। বিজেপির একমাত্র স্বস্তির ব্যাপার হল, যে মহিলার ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ এসেছে, তিনি এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। আর তাঁর বাবা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনিই গুজরাত সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁর মেয়ের উপরে নজর রাখতে।
তবে বিজেপি নেতাদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, দাঙ্গার অভিযোগ যতটা মারাত্মক, ফোনে আড়ি পাতার ঘটনার ততটা ধার নেই। বিশেষত মহিলাটি যখন কোনও অভিযোগ করেননি। বরং গুজরাত দাঙ্গা মামলার রায় আজ মোদীর বিপক্ষে গেলে আরও বড় ক্ষতি হত। জাকিয়া জাফরি রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন ঠিকই, কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে তার শুনানি হয়ে নতুন করে রায় আসার সম্ভাবনা কম। কাজেই আপাতত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী।
যদিও সন্ধ্যায় কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “এটা নিছক সাময়িক স্বস্তি। এর পরেও উচ্চ আদালত রয়েছে।” তদন্ত কমিশন নিয়ে বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “গুজরাতের কমিশনের মাথায় মোদী নিজের লোককেই বসিয়েছেন!” এই পরিস্থিতিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “কংগ্রেস ধরেই নিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে তাদের পরাজয় হচ্ছে। তাই তারা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত লালু প্রসাদকে সমর্থন করতে পিছপা হচ্ছে না, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সমর্থনের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর শেষ লগ্নে এসে সিবিআই থেকে কমিশনের মতো নানা মাধ্যমকে ব্যবহার করে মোদীকে যথাসম্ভব দুর্বল করাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
মোদীর সমর্থনে দিল্লিতে তাঁর কৌশল রচনার অন্যতম রূপকার অরুণ জেটলিও আজ সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “মোদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে এগারো বছর ধরে প্রচার চলছে। সোহরাবুদ্দিন, ইশরাত জাহান, জাকিয়া জাফরি মামলা। কিন্তু যত বারই এই চেষ্টা হয়েছে, মোদী উত্তরোত্তর আরও শক্তিশালী হয়েছেন। এ বার নতুন অস্ত্র তদন্ত কমিশন।” কিন্তু তাঁর ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগও তো রয়েছে? জেটলির বক্তব্য, “মোদীকে বিপাকে ফেলার জন্য আমার ফোনে আড়ি পাতার ঘটনা সামিল করেছে কেন্দ্র। অথচ আমি তার দাবিও জানাইনি।” আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বলের বক্তব্য, “আদালতের বাইরেও ন্যায়বিচার হয়।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.