বড়দিনে বড় ইনিংসের ইঙ্গিত ঠান্ডার ব্যাটে
কাল থেকেই বইতে শুরু করেছিল হিমেল হাওয়া। আর সন্ধ্যা গড়াতেই শুরু হয়ে গেল পারদ পতন! তবু সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের থেকে নীচে নামা তো দূরের কথা, স্বাভাবিককে ছুঁতেও পারল না। রয়ে গেল দু’ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরেই।
সান্ত্বনা এটুকুই যে, বড়দিনের হাত ধরে দক্ষিণবঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে ঠান্ডা। আগামী কয়েক দিনে সে ধীরে ধীরে নিজমূর্তি দেখাবে বলেই হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। মঙ্গলবার শহর কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি উপরে। বুধবার সেখান থেকে এক ধাক্কায় দু’ডিগ্রি কমেছে। আবহাওয়া দফতর জানায়, এ দিন মহানগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৬ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি বেশি। শীতকে স্বমেজাজে পেতে হলে স্বাভাবিকের থেকে নীচে নামা দরকার পারদের। সেটারই অপেক্ষায় আছে বাংলা। আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রার নিম্নগতি ব্যাহত না-হলে ইংরেজি নববর্ষ কনকনে ঠান্ডা নিয়েই দক্ষিণবঙ্গে হাজির হতে পারে বলে আশা দিচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা।
ইনিংসের সূচনায় অবশ্য আশাই দেখিয়েছিল শীত। কিন্তু বাংলাদেশের ঘূর্ণাবর্ত এবং ওড়িশার লাগোয়া এলাকায় উচ্চচাপের বাধায় দক্ষিণবঙ্গে থমকে গিয়েছিল সে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আকাশে গেড়ে বসেছিল মেঘ। বেড়ে যাচ্ছিল তাপমাত্রা। ২১ ডিসেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে যায়। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বাংলাদেশের ঘূর্ণাবর্ত কেটে যায়। কিন্তু তাতেও মেঘ সরে গিয়ে উত্তুরে হাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়নি। উত্তরপ্রদেশে নতুন একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় বাড়েনি ঠান্ডার দাপট।
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘূর্ণাবর্ত আর উচ্চচাপের জোড়া বাধায় আকাশ মেঘলা থাকছিল। পৌষেও উত্তুরে হাওয়ার দাক্ষিণ্য মালুম হচ্ছিল না। এক আবহবিজ্ঞানীর কথায়, “আকাশে মেঘ থাকলে রাতের তাপমাত্রা নামতে পারে না। রাতের তাপমাত্রা যত কমে, ততই দাপট বাড়ে শীতের।” অবশেষে বুধবার তেমন পরিস্থিতি তৈরির ইঙ্গিত মিলেছে। বড়দিনের প্রাপ্তি এটুকুই।
বড়দিনের হাত ধরে ঠান্ডা যে ফের কোমর বেঁধে নামার চেষ্টা করবে, দিন দুয়েক আগেও আবহবিজ্ঞানীরা সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছিলেন না। এমনকী মঙ্গলবার দুপুরেও অনেকে মনে করেছিলেন, এ বার বড়দিন কাটবে গরম নিয়েই। তবে রাতের পর থেকে পরিমণ্ডলে বদল ঘটায় ঠান্ডার আমেজ শুরু হয়। এর কারণ কী?
“উচ্চচাপটি দুর্বল হয়ে পড়ায় তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে,” জানাচ্ছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। বুধবার রোদের তেমন তেজ না-থাকায় দিনের বেলাতেও শহরে ঠান্ডা মালুম হয়েছে। হাওয়া অফিস জানায়, এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি কম! রোদের তেজ বাড়বে আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই।
রোদের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরতরিয়ে নামবে রাতের পারদও! হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এ দিন রাতেই উচ্চচাপটি পুরোপুরি কেটে যেতে পারে। ফলে আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই মহানগরে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নেমে যেতে পারে। জোর ঠান্ডা পড়বে বীরভূম, বাঁকুড়ার মতো রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। দার্জিলিঙে এ দিনই ০.১ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে পারদ। “এই পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের শেষেই কলকাতার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির কাছে নেমে যেতে পারে। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে কনকনে ঠান্ডা মালুম হবে,” আশ্বাস গোকুলবাবুর।
বাংলায় ঠান্ডা যে এ বার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে, তার পিছনে উত্তর ভারতের আবহাওয়ার অবদানও আছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা জানান, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। এ দিন দেশের সমতল এলাকার মধ্যে সব থেকে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজস্থানের চুরুতে, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর ভারতের ঠান্ডা হাওয়াই আসতে থাকবে বাংলায়। সেই সুবাদে দ্রুত তাপমাত্রা কমবে। দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, আগামী দিন দুয়েকের মধ্যে আরও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়বে কাশ্মীরে। তার ফলে উত্তর ভারতে আরও ঠান্ডা বাড়তে পারে।
সব মিলিয়ে বাংলায় ঠান্ডার মেজাজি ব্যাটিংয়ের পিচ তৈরি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.